নিজস্ব প্রতিবেদক
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে রাজনাথের বৈঠক
প্রাধান্য পেল রোহিঙ্গা ইস্যু ও সন্ত্রাস দমন
বাংলাদেশ-ভারতের দুই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। আলোচনায় ঠাঁই পেয়েছে অমীমাংসিত অনেক সমস্যা। তবে প্রাধান্য পেয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যূ ও সন্ত্রাস দমন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর পলাতক দুই খুনিকে ভারত থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়েও আশ্বাস পাওয়া গেছে। এই বৈঠকেই বাংলাদেশের পঁয়ষট্টি বছর বা তার বেশি বয়সী নাগরিক এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পাঁচ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দেওয়ার কথাও জানিয়েছে ভারত। গতকাল রোববার ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এদিন দুপুরে সচিবালয়ে দুই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হয়।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন। আর শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে একটি নতুন, আধুনিক ও সমন্বিত ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুই দেশের বৈঠক শুরু হয় রোববার বেলা ১১টায়। শেষ হয় দুপুর পৌনে ১টার দিকে। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজনাথ সিং সচিবালয়ে উপস্থিত হন। সেখানে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। এরপর পূজা-অর্চনার জন্য ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যান। সফর শেষে বেলা ১টায় বিশেষ প্লেনে দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন রাজনাথ সিং। এর আগেই তিনি নিজের টুইটারে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে তিন দিন অবস্থানের পর দিল্লি ফিরে যাচ্ছি। বাংলাদেশের মানুষের উষ্ণ আন্তরিকতা আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চিরজীবী হোক।
সচিবালয়ে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা পেতে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে ভারত। দেশটির সঙ্গে চমৎকার বোঝাপড়া আছে। আমাদের যখন যে সহযোগিতা প্রয়োজন ভারত দিচ্ছে। কারণ ভারতের সঙ্গে সর্বোচ্চ সুসম্পর্ক বিরাজমান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে রাজনাথের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা বলেছি রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য সমস্যা হয়ে আছে। আমরা যে উদারতা দেখিয়েছি এটাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তারিফ করেছেন। তারাও বলছেন সঙ্গে থাকবেন, এটা সমাধান করার জন্য। তারা আরো সহযোগিতা করবেন। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু যারা এসেছেন, তাদের পুনর্বাসন কীভাবে করা যায় সে বিষয়ে সহযোগিতা করবেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, ভারতের ভিসা সহজীকরণের জন্য একটি চুক্তি হয়েছে। যারা বয়স্ক, যাদের বয়স ৬৫ বছর এবং এর ঊর্ধ্বে, তারা ভিসা চাইলে পাঁচ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দেওয়া হবে। আমাদের বয়স্ক সিটিজেনরা যারা এটা চান, তারা এই ভিসাটি দেবেন। মুক্তিযোদ্ধারাও ভারতীয় ভিসার ক্ষেত্রে এই সুবিধা পাবেন বলে জানান মন্ত্রী।
বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী এবং ভারতের পক্ষে সেদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল সেক্রেটারি বিরাজ রাজ শর্মা ‘সংশোধিত ট্র্যাভেল অ্যারেঞ্জমেন্ট ২০১৮’ তে সই করেন।
বৈঠক প্রসঙ্গে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ‘আমাদের দুই দেশের বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। অমীমাংসিত অনেক সমস্যাই আমাদের আলোচনায় ঠাঁই পেয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যাতেও আমরা যে ধারাবাহিক কাজ করে যাচ্ছি তা নিয়েও কথা হয়েছে।’
মাদক, সীমান্ত ও সন্ত্রাস প্রসঙ্গে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত থেকে যে ড্রাগ-ফেনসিডিল আসত সেটা অনেকাংশে কমে গেছে। তারা ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় ফেনসিডিলের কারখানা আইন করে বন্ধ করে দিয়েছে। যেগুলো তারা জানতে পারছেন, সেগুলো তারা বন্ধ করে দিচ্ছেন। তাদের বিএসএফ এ ব্যাপারে হুশিয়ার। তারপরও ফাঁক-ফোকর দিয়ে যেগুলো আসে সেগুলোর ইনফরমেশন দিচ্ছেন।
চার হাজার কয়েক শ কিলোমিটার বর্ডার লাইনের মাধ্যমে দুই-একটি জায়গায় অরক্ষিত এলাকা রয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসব জায়গা দিয়ে যেকোনো সময় কিছু ঢুকতে পারে, এগুলো নিরোধের জন্য তারাও কাজ করছে, আমরাও কাজ করছি। আমরা বলছি, সীমান্তবর্তী এলাকায় বিওপি করতে যাচ্ছি, যাতে আমরা দুর্গম এলাকায় যেতে পারি এবং নজরদারি করতে পারি। আমরা সীমান্ত রোড করতে যাচ্ছি, সেখানে সহযোগিতার কথা বলেছেন। সীমান্তে সার্ভিলেন্স এবং সেন্সর লাগানোর প্রচেষ্টায় তারা সব ধরনের সহযোগিতা করবেন, যাতে মানব পাচার এবং মাদক পাচার একদম বন্ধ করতে পারি।
ভারতের বল্লভভাই প্যাটেল পুলিশ একাডেমি ও সারদা পুলিশ একাডেমির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের সারদা একাডেমি অভিজ্ঞতা বিনিময় ও প্রশিক্ষণে সহযোগিতা পাবে।
তিনি বলেন, পুলিশের বিভিন্ন বিভাগের ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের জন্য ভারত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। ফেইক কারেন্সি নিয়ে দুই দেশ বিব্রত জানিয়ে তিনি এও বলেন, আমরা আমাদের উদ্যোগগুলো জানিয়েছি। সেই জায়গা থেকে তারা আশঙ্কামুক্ত হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা আইনের আশ্রয় নিচ্ছি। চুক্তি অনুযায়ী বন্দি বিনিময় হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর পলাতক দুই খুনির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এটা নিয়েও আলাপ হয়েছে। কমিটি কাজ করছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণ পেয়েছেন জানিয়ে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, যাওয়ার সময় আরো আলোচনার জন্য খুব শিগগিরই ভারত সফরের জন্য বলেছেন, তিনি সময়ও বলেছেন যে দুই মাসের মধ্যে আপনি আসুন। একটা সময়-সুযোগ করে আমরা যাব।
"