reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১২ জুন, ২০২২

শেখ সজীব আহমেদের হাসির গল্প

ভুল ধরাধরি

আবুল মিঞা কোনো দিন নকল করে পরীক্ষা দেননি। তিনি নকল করা পছন্দ করেন না। তাই নিজের মতো করে লিখতে পছন্দ করেন। দুঃখের বিষয়, তিনি গণিত পরীক্ষায় নিজের মতো বানিয়ে লিখতে গিয়ে দু-দুবার মেট্রিক ফেল করেছেন। তিনি গাইড বা বই দেখে হুবহু একই রকম লেখাকেও নকল মনে করেন। তাই তিনি কোনো কিছু মুখস্থ করে একই রকম লিখতেন না। লিখতেন তা থেকে ধারণা নিয়ে, নিজের মনমতো বানিয়ে।

যা হোক, আবুল মিঞার বর্তমানের কথা বলি। তার বয়স এখন প্রায় চল্লিশ। কোনো কিছু ভুল লেখা দেখলে বা শুনলে তার মাথা গরম হয়ে যায়। ব্যাকরণগতভাবে সঠিক হলেও, যদি তার মনে হয় এই লেখায় ভুল আছে। তখন তা পরিবর্তন না করা পর্যন্ত তার মাথা ঠিক থাকে না। আবুল মিঞা চা পান করার জন্য চায়ের দোকানে গিয়ে দেখতে পেলেন টাঙানো এক কাগজের মধ্যে লেখা ‘এখানে খাঁটি গরুর দুধের চা পাওয়া যায়।’ আবুল মিঞা লেখাটি পড়তে দেরি, কাগজটি ছিঁড়তে দেরি হলো না। চায়ের দোকানদার আবুল মিঞার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইল। আবুল মিঞা কোনো কিছু না বলেই, কম্পিউটারের দোকানে এসে ‘এখানে গরুর খাঁটি দুধের চা পাওয়া যায়’ লেখে দোকানে নিয়ে টাঙিয়ে দিলেন। চায়ের দোকানদার ভেবে দেখলেন, কাগজে এখন যেটা লেখা আছে, আসলে এটাই সঠিক।

আবুল মিঞা চায়ের অর্ডার দিলেন। তাতে চা দেওয়া হলো। তিনি চা পান করার জন্য কাপটা মুখের কাছে নিলেন, ঠিক এ সময় আবুল মিঞা শুনতে পেলেন।

হাট, হাট, হাট। বিরাট গরু-ছাগলের হাট। তাও সেই মাইকিং করছে এলাকার এক মাস্টার!

আবুল মিঞা কথাটি শুনতে দেরি, মাথাটা গরম করতে দেরি হলো না। চায়ের কাপটা হাতে নিয়েই মাস্টার সাহেবকে মাইকিং করা থামিয়ে তার কথাতে ভুল আছে বললেন এবং কিছু জ্ঞান দিলেন।

মাস্টার সাহেব রাগান্বিত হয়ে বললেন-

: আমি মাস্টার মানুষ, আমাকে জ্ঞান দেবেন না।

: আপনাকে জ্ঞান দিচ্ছি না, আপনি মাস্টার মানুষ হয়ে ভুল কথা বলেন কেন?

: এই কথাটি ভুল না, সঠিক।

: না, সঠিক নেই। আপনি একটু বিবেক খাটান তাহলে বুঝতে পারবেন এই কথায় ভুল আছে কি না?

আপনি এভাবে বলেন, ‘হাট, হাট, হাট। গরু-ছাগলের বেচাকেনার বিরাট হাট।’ গরু-ছাগল তো বিরাট হয় না, বিরাট হয় হাট। গরু-ছাগলের পর বেচাকেনা শব্দটিও যোগ করতে হবে। কারণ, হাটে হয় বেচাকেনা। বিক্রেতা বেচে ক্রেতা কেনে। তাহলে গরু-ছাগলের হাট বলেন কী করে? আপনার কথায় বোঝা যায়, মানুষও গরু-ছাগল। কেননা, মানুষ তো হাটে আসে, হাটে থাকে। আর আপনে যে স্কুলের মাস্টার, সে স্কুলের নামটাও ভুল আছে, ‘মুন্সীগঞ্জ উচ্চবালিকা বিদ্যালয়।’ স্কুলের নামটা এমন হলে কেমন হয়? ‘মুন্সীগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়।’ তাহলে তো কোনো ভুল থাকে না।

: আপনি বেশি বুঝেন দেখেই তো দু-দুবার মেট্রিক ফেল করেছেন।

: আমি মেট্রিক ফেল করেছি তাতে কী হয়েছে? আপনার মতো ভুল কথা তো বলিনি, নকল করে তো পাস করিনি।

: আমি ভুল বলিনি। নকল করে পাসও করিনি। আমি আপনাকে ব্যাকরণগতভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছি। এসব কথার কোনো ভুল নেই। বিরাট গরু-ছাগলের হাট কথাটিতে, গরু-ছাগলের হাট শব্দটি বহুপদী বিশেষ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায় কি না? যদি গ্রহণ করা যায়, তাহলে তো কোনো সমস্যা হয় না।

তবে বিরাট শব্দটি গরু-ছাগলের আগে বসাতেই হবে। কারণ বিশেষণ বিশেষ্যের আগে বসে। আর এতে করে গরু-ছাগলগুলো বিরাট মানে বড় হয়ে যাবে না। আর বেচাকেনা শব্দটি যোগ কেন করব? হাটে যে বেচাকেনা হয় সবাই জানে, তাহলে তো বেচাকেনা বলার দরকার নেই। ‘মুন্সীগঞ্জ উচ্চবালিকা বিদ্যালয়।’ আসলে কি বালিকা উচ্চ? না, বিদ্যালয় উচ্চ। এখানেও কোনো ভুল নেই।

: দাদা রে আদা পড়া শিখাইয়েন না, ভুল আছে। আপনে একটু দুচোখ বুজে ভেবে দেখেন। আপনি এভাবে বললে সমস্যা কোন জায়গায়? আপনি এভাবেই বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়।’ ‘হাট, হাট, হাট। গরু ছাগলের বেচাকেনার বিরাট হাট।’

এ সময় চায়ের দোকানদার বললেন-

: তর্কাতর্কি বাদ দেন আবুল ভাই, চা খাইয়া লন। চা ঠাণ্ডা অইয়া যাইতাছে।

আবুল মিঞা এই কথাটি শুনেও রাগান্বিত হয়ে বললেন-

: আরে! চা তো খাওয়া যায় না, পান করা যায়।

এভাবেই চলতে থাকে আবুল মিঞার ভুল ধরাধরি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close