রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

  ১৭ মার্চ, ২০২৪

কুড়িগ্রামের রৌমারী

মাটিবাহী ট্রাক্টরে সড়ক নষ্ট দুই বছরে মৃত্যু ২০

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে সড়ক ও মহাসড়ক পথে ইটভাটা ও জায়গা ভরাটে মাটি পৌঁছে দেওয়ার জন্য রৌমারী টু ঢাকা মহাসড়ক ও সড়কসহ উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে দিনে-রাতে অবাধে দাপিয়ে চলছে ৮ শতাধিক অবৈধ ট্রাক্টর (কাকড়া গাড়ি)। স্থানীয় প্রশাসন জোরালো পদক্ষেপ না নিয়ে কিছু টাকার বিনিময়ে আঁতাত করে নীরব ভূমিকা পালন করেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, গত ৮মার্চ ট্রাক্টর ও ভটভটির ধাক্কায় আবু সাইদ (৫৫) নামের এক বৃদ্ধ ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ ছাড়াও গত দুই বছরে নুরজাহান (৪০), আমির হোসেন (৬০), মুগল হোসেন (৪৮), ওয়াসিমা খাতুন (৬০), সোবহান (৬৫), জাহিদুল ইসলাম (২৬), মতিয়ার রহমানসহ (৪০) অনন্ত ২০ জন নিহত ও আহত হয় স্কুল শিক্ষার্থীসহ প্রয় ৩০ জন।

এতে এখন পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন চালকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কিছু অর্থ দিয়ে মীমাংসার করে দেওয়া এবং কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে ট্রাক্টর চালক ও মালিকেরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি উপজেলার চান্দারচর, চর বামনেরচর, টাপুরচর, মিয়ারচর, গেয়ালগ্রাম,দিগলাপাড়া,খন্জনমারাসহ কয়েকটি সড়ক মেরামতের কাজ সম্পূর্ণ করা হলেও অতিরিক্ত মাটি ভর্তি ট্রাক্টর চলাচলের কারণে সড়কটিতে আবারও খানাখন্দ দেখা দিয়েছে। ট্রাক্টর আঘাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না গ্রামীণ পাকা সড়ক ও কাঁচা পথগুলো। উপজেলা বাসট্যান্ড, থানা মোড়, ডিগ্রি কলেজ মোড়, উপজেলা মোড় ও ভোলার মোড়ে প্রশাসনের চোখের সামনের এ সড়কসহ বিভিন্ন শাখা সড়কে পিছু ছাড়ছে না যানজট। এতে ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।

বেশি লাভের আশায় ট্রাক্টর মালিকরা স্বল্প বেতনে অপ্রাপ্ত বয়সের চালককে দিয়ে ট্রাক্টর চালানোর কারণে সড়কে চলাচলরত স্কুল ছাত্র, ছাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ট্রাক্টর চাপায় পড়ে আহত ও নিহত হচ্ছেন। ভ্যানচালক হেলপাররাই এখন ট্রাক্টর মালিকদের ভরসা। যে চালক যত বেশি গতিতে গাড়ি চালিয়ে ইটভাটায় ও জায়গা ভরাটে যত বেশি মাটি পৌঁছে দিতে পারবে, সেই চালককে মালিকরা তত বেশি পছন্দ করেন।

জানা গেছে, চার বছর ধরে রৌমারী উপজেলায় ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করে ভূমি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে জমির মালিকদের লোভ দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে মাটি, ইট ও পুকুর খনন ব্যবসায়ীরা এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ একর ফসলি জমি পুকুরে পরিণত করেছেন বালুখেকোরা।

স্কুলশিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শিশু-কিশোররা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। রাস্তায় হাঁটাচলার সময় পথচারীরা আতঙ্কে থাকে। এক ছাত্রের আভিভাবক বলেন, এসব শিশু-কিশোরকে যারা কাজে লাগায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

উপজেলার ট্রাক্টর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক রৌমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু বলেন, মালিক সমিতির আওতায় দেড় শতাধিক ট্রাক্টর আছে। এ ছাড়াও বাইরের এলাকা থেকে ৫০টির মতো ট্রাক্টর এসে কাজ করছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, বালুবোঝাই ট্রাক্টর অবাধে চলাচলের কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং স্কুল শিক্ষার্থী ও বয়স্ক মানুষসহ অ্যাজমা, সর্দি, কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা হীল জামান জানান, ট্রাক্টরগুলো অবাধ চলাচলের কারণে সদরে একদিকে যেমন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে। শিগগিরই এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমি নাহিদ হাসান খান বলেন, ট্রাক্টরগুলো বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close