নওগাঁ প্রতিনিধি

  ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪

৬০০ গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও ‘ডলফিন’ এমডি

নওগাঁয় গ্রাহকের অন্তত ১০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ডলফিন সেভিং অ্যান্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে। ওই সংস্থায় সঞ্চয়ের টাকা হারিয়েছেন অন্তত ৬ শতাধিক গ্রাহক।

গড়ে দেড় লক্ষাধিক টাকা সঞ্চয় রেখেছিলেন গ্রাহকেরা। এখন টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন তারা। এজন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা যায়, নওগাঁ সদর উপজেলার ফতেপুর বাজারে ২০১৩ সালে সমবায় থেকে নিবন্ধন নিয়ে ‘ডলফিন সেভিং অ্যান্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা গড়ে তোলেন একই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক। এখানে বিভিন্ন গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে স্থায়ী আমানত ও ক্ষুদ্র সঞ্চয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছিলেন তিনি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি গ্রাহকদের প্রতি লাখে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা মুনাফা দিত সংস্থাটি। কিন্তু হঠাৎ সংস্থার পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন। এক সপ্তাহ ধরে সংস্থার কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। গ্রাহকরা এসে তালা দেখে ফিরে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাড়তি লাভের আশায় কেউ মেয়ের বিয়ে, কেউ বিদেশ যাওয়ার জন্য গবাদি পশু বিক্রি ও দিনমজুরির টাকা সঞ্চয় রেখেছিলেন এ সংস্থায়। মুনাফাও পেতেন তারা। তবে বিপত্তি বাঁধে মূল টাকা ফেরত চাইলে। এতে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে পরিচালকের বিরুদ্ধে। হঠাৎ করে সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ করে পরিচালক পালিয়ে যাওয়ায় এখন লোকজনের পথে বসার উপক্রম।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সঠিক তদারকির অভাবে নামে-বেনামে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংস্থা গ্রামের মানুষদের বেশি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।

ফতেপুর গ্রামের দিনমজুর আলম হোসেন বলেন, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে গত কয়েক বছর এ সংস্থায় দেড় লাখ টাকা সঞ্চয় করেছিলাম। কিš ‘সব শেষ হয়ে গেল।

সেলুন ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম বলেন, এক লাখ টাকা রেখে প্রতিমাসে দুই হাজার করে লাভ পেতাম। গত কয়েক মাস ধরে ঘুরে ঘুরে ৪০ হাজার টাকা তুলেছি।

গৃহবধূ মাসুদা বানু বলেন, বাড়ির পাশেই এনজিও। বিদেশ যাওয়ার জন্য দুই লাখ টাকা রেখেছিলাম। লাখে আড়াই হাজার

টাকা লাভ দেওয়ার কথা থাকলেও দুই হাজার করে দিয়েছে। গত চার মাস থেকে

মূল টাকা নেওয়ার জন্য তাগাদা দিলে হুমকিও দিচ্ছিল।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ নাহিদা আক্তার বলেন, স্বামীকে না জানিয়ে এ সংস্থায় দেড় লাখ টাকা রেখেছিলাম। স্বামী পরে জানতে পারে। এ নিয়ে ঝগড়াও হয়।

ফতেপুর পূর্বপাড়া আব্দুর রাজ্জাকের গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কেউ না থাকায় বাড়ির মূল দরজা তালাবদ্ধ। তবে আব্দুর রাজ্জাকের বড় ভাইয়ের বাড়িতে বসবাস করছেন তার বাবা-মা।

আব্দুর রাজ্জাকের মা মরজিনা বেগম বলেন, ছেলে একসময় বিদেশ ছিল। এরপর গ্রামে এসে বিভিন্ন দোকানে কাজ করে। এরপর একটি এনজিও (বেসরকারি সংস্থা) দেয়। গত কয়েকদিন থেকে ছেলেকে দেখা যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে জেলা সমবায় কর্মকর্তা খোন্দকার মনিরুল ইসলাম বলেন, গত বছরের জুনে ওই সংস্থা পরিদর্শন করে ৩৮ লাখ টাকা আমানতের তথ্য পাওয়া যায়। তবে ৬ মাসের ব্যবধানে কোটি কোটি টাকা কীভাবে লেনদেন হয়েছে, যা অসম্ভব। গত কয়েকদিন আগে কয়েক ভুক্তভোগী এসে টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছে। যদি এ ধরনের

কোনো সত্যতা পাওয়া যায় তবে ওই সংস্থার নিবন্ধন বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close