আরিফ মাহমুদ, কলারোয়া (সাতক্ষীরা)

  ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪

স্কুলে-সভায় অনুপস্থিত দেড় বছর বেতন বিলে করেন না স্বাক্ষর

সভা ও রেজুলেশন না করে, কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়ে, লিখিত ব্যাখ্যা ও শুনানি না করেই সভাপতির একক সিদ্ধান্তে সাতক্ষীরার কলারোয়ার সোনাবাড়ীয়া সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষককে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া সভাপতি মাসের পর মাস সভা না করে ও বেতন বিলে স্বাক্ষর না করায় দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না শিক্ষক কর্মচারীরা। আবার এনটিআরসিএর সরাসরি নিয়োগ পাওয়া এক শিক্ষকের এমপিও কাগজপত্র সব ঠিকঠাক থাকলেও তাতে স্বাক্ষর না করায় ওই শিক্ষক আজও এমপিওভুক্ত হতে পারেনি যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার সুনির্দিষ্ট পরিপন্থী। এমনই নানান হয়রানির অভিযোগ উঠেছে স্কুলটির সভাপতি আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে।

স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মনিরুল ইসলাম, আনারুল ইসলাম ও নবীছদ্দীন বলেন, মূলত একটি নিয়োগ বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে আজ এই ঘটনার আবির্ভাব। আমজাদ হোসেন গেলো দেড় বছর ধরে স্কুলে আসেন না এবং কোনো মিটিংয়ে তিনি উপস্থিত থাকেন না। তিনি একা একাই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করেছেন।

স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য ও বর্তমান ইউপি সদস্য নূরুল ইসলাম বলেন, ‘সভাপতি আমজাদ হোসেন স্কুলটি ধ্বংস করে দিলো। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির ১১ সদস্যের মধ্যে ৯ জনই এই বরখাস্তের বিষয়ে কিছুই জানি না। সভাপতি নিজের স্বার্থসিদ্ধি হাসিলের জন্য এমনটা ঘটিয়েছেন। তিনি নিয়মনীতি ও আইনের তোয়াক্কা করেন না।’ নিয়োগ বাণিজ্য করতে না পারায় তিনি এমন মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলেও অভিযোগ করেন এই সদস্য।

স্কুলের শিক্ষক প্রতিনিধি স্বপন কুমার চৌধুরী বলেন, ‘২ মাস ধরে সভাপতি বেতন বিলে সই করছেন না। আমরা এর একটি সুষ্ঠু সমাধান চাই।’

এনটিআরসিএ-এর মাধ্যমে সদ্য নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষক ইয়াছিন আলী বলেন, ‘সভাপতি আমজাদ হোসেনের কারণে আমি এখনো এমপিওভুক্ত হতে পারিনি। তিনি আমার কাগজপত্রে স্বাক্ষর করছেন না।’

এদিকে, ৪ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত চিঠিতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত ছাড়াও অত্র স্কুল থেকে আরেকজন শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে আরেকটি চিঠি দেন সভাপতি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়া সিনিয়র শিক্ষক হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণে একটি চিঠি পেয়েছি। তবে দায়িত্ব কবে পাবো জানি না।’ জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তিনি যোগ্য না হয়ে কীভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষক হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘আসলে এটা সত্য, জ্যেষ্ঠতার দিক থেকে আমি যোগ্য না।’

সোনাবাড়ীয়া সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বরখাস্তের বিষয়ে আমি কোনো চিঠি পাইনি। বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।’

সহকারী প্রধান শিক্ষক জিয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের হেয়প্রতিপন্ন করতে সভাপতি এসব করছেন।’

কলারোয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মীর মস্তাফিজুর রহমান বলেন, সভাপতি এককভাবে কাউকে বরখাস্ত করতে পারেন না।’

সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহজাহান কবীর বলেন, ‘সভাপতি চাইলেই বরখাস্ত করতে পারেন না। বরখাস্তের আগে কারণ দর্শানো নোটিশ, রেজুলেশনসহ কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এস.এম জিয়াউল হায়দার হেনরী বলেন, নিয়মের বাইরে কাউকে বরখাস্তের সুযোগ নেই।’

সোনাবাড়ীয়া সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আমজাদ হোসেনের মোবাইলে বেশ কয়েকবার কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close