মঞ্জুরুল হক, জামালপুর

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩

গ্রন্থাগারে পোকামাকড়ের বাস

এক সময় জামালপুরের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সূতিকাগার ছিল জামালপুর গণগ্রন্থাগার। কমিটির নিষ্ক্রিয়তায় দেশি-বিদেশি বইয়ের ভাণ্ডারখ্যাত ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ অচলাবস্থা থেকে প্রায় ছয় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। পোকামাকড় ঘর বেঁধেছে সেখানে। এতে নষ্ট হতে বসেছে প্রায় ১৮ হাজার মূল্যবান বই।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে গ্রন্থাগারের সূত্রপাত হয়। পরে ১৯৫৯ সালে পৌরসভার দুতলা ভবনের একটি কক্ষে গণগ্রন্থাগারের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে শহরের বকুলতলা মোড়ে ২৯ শতাংশ জমিতে নিজস্ব একতলা ভবন গড়ে উঠে। তখন থেকেই গণগ্রন্থাগারটি শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠে। এক সময় এ পাঠকের আনাগোনায় মুখরিত ছিল। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শতাধিক পাঠক বই লেনদেন ও সংবাদপত্র পড়তে ভিড় জমাতো। সরকারি-বেসরকারি অনুদানে প্রায় ১৮ হাজার বই ক্রয় করা হয়েছিল। পাঠকও ছিল অনেক। কিন্তু কালের বিবর্তনে পাঠক কমে গিয়ে বর্তমানে পাঠক ২৪৯ জন। এছাড়া সাধারণ সদস্য ও আজীবন পাঠক সদস্য রয়েছেন ১৭৫ জন। একজন গ্রন্থগারিক ও একজন পিয়ন গ্রন্থাগারের দায়িত্ব পালন করছেন। তারা দুইজনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে গ্রন্থাগারটি চালালেও দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা থেকে বর্তমানে প্রায় ছয় মাস ধরে একবারে বন্ধ রয়েছে। সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও হলরুম ভাড়ার টাকা ছিল গ্রন্থাগারের আয়ের উৎস। এ টাকা দিয়ে চলতো তাদের বেতন। কিন্তু সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও হল রুম ভাড়া না হওয়ায় তাদের বেতন বকেয়া পড়েছে। অসুস্থতা ও বেতন বকেয়ার কারণে তারাও দায়িত্ব পালন করছে না। গ্রন্থাগার পরিচালনার জন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও তাদের কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। গ্রন্থাগারে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ ও জড়াজীর্ণ ভবনে রয়েছে হাজারো সমস্যা।

গ্রন্থাগারিক শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, শরীরিক অসুস্থতার জন্য অনেক দিন থেকে আমি গ্রন্থাগারের কাজ ছেড়ে দিয়েছি। এখন কি অবস্থা বলতে পারবো না। তবে অনেক দিনের বিদ্যুৎ বিল ও বেতন বকেয়া রয়েছে।

জামালপুর গণগ্রন্থাগারের পিয়ন দুদু মিয়া বলেন, প্রায় আট বছরের বেতন বাকি। আমি আর গ্রন্থাগারে যাই না। সাবেক মেয়র মামুন বেশকিছু দিনের বেতন দিয়েছিলেন। তারপর আর বেতনের ব্যবস্থা হয়নি। আমি গ্রন্থাগারের দায়িত্ব থেকে সরে এসেছি।

কবি সাযযাদ আনসারী জানান, সরকার যুগে যুগে জ্ঞান বৃদ্ধির সমাজ গঠনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং শ্লোগান দেয়। এ জায়গায় আজকে জ্ঞানের প্রসার একদমই বন্ধ প্রায়। এ জায়গায় একটি গণগ্রন্থাগারে প্রায় বহু বছর থেকেই অচলাবস্থা। শুধু ছয় মাস আগে বন্ধ হয়েছে দরজা। ১৯৯০ সালে কমিটি হয়েছিল। তারপরে এক বছর আগে জেলা প্রশাসক একটি আহ্বায়ক কমিটি করেছেন। এর মধ্যে আসলে কোনো কার্যক্রম নেই। গ্রন্থাগার ভিত্তিক কার্যক্রম না হলে নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠতে পারে না। সুতরাং গ্রন্থাগারকে সচল করা এবং আরও কার্যকর করে গড়ে তোলার দাবি জানান তিনি।

গণগ্রন্থাগারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, গণগ্রন্থাগার জামালপুরের একটা প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। আমি মেয়র থাকা অবস্থায় সচল রাখতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু রাজনৈতিক ও কমিটির অন্য সদস্যদের অসহযোগিতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি সচল করতে পারিনি। নতুন প্রজন্মের জ্ঞান প্রসারের জন্য এ ধরনের প্রতিষ্ঠান সচল রাখা খুবই জরুরী।

জামালপুর পৌরসভার মেয়র ও গণগ্রন্থাগার পরিচালনা কমিটির সদস্য আলহাজ মো. ছানোয়ার হোসেন ছানু বলেন, কমিটি জেলা প্রশাসন আটকে রাখছে। আমাকে পুরোপুরি দায়িত্ব দিলে উদ্যোগ নিয়ে সচল করার ব্যবস্থা নিব।

এ বিষয়ে গণগ্রন্থাগার পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায় বলেন, বিগত জেলা প্রশাসক গণগ্রন্থাগার নিয়ে কাজ করেছিল। করোনা আসার পরে তা সঠিকভাবে সচল করতে পারেনি। গণগ্রন্থাগার পরিদর্শন করে সচল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close