গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ১১ আগস্ট, ২০২২

যমুনার ডানতীর রক্ষা বাঁধে ধস, ২৫ বাড়িঘর বিলীন

এক সপ্তাহ ধরে যমুনার প্রবল স্রোতে সিরাজগঞ্জে শাহজাদপুরে ডানতীর রক্ষা বাঁধে ধস নেমেছে। আর তাতেই দুঃস্বপ্নের মত তলিয়ে গেছে উপজেলার বিনোটিয়া গ্রামের বিধবা স্বর বানু আর দুলু খাতুনসহ আরো অনেকের বসতভিটা। তীর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক ধসে ইতোমধ্যেই মসজিদসহ অন্তত ২৫টি বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন আতঙ্গে আরও অনেক পরিবারের নির্ঘুম রাত কাটছে।

স্বরবানুর ছেলে ও মেয়েদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে অন্যত্র বিয়ে করেননি আর। স্বামীর ভিটা আঁকড়ে ধরে অন্যের বাড়িতে কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। কঠোর পরিশ্রম আর নিজের আত্মবিশ্বাস দিয়ে জীবন যুদ্ধে অপরাজেয় এই মা দুই মেয়ে ও ছেলেকে বিয়েও দিয়েছেন। কয়েক বছর আগে ছেলের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সে অন্যত্র বিয়ে করে জীবিকার তাগিদে চলে গেছেন শহরে। স্বর বানুুর যেন দুঃখের দিন শেষ হওয়ার নয়। ছেলেটা অন্যত্র বিয়ে করার পর স্বর বানুর উপরই নতুন করে যুক্ত হয় ৪ বছর বয়সী নাতি। এরপর হঠাৎ করে বাড়িটাও যমুনা গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় খোলা আকাশের নীচে ভাঙা টিন মাথার উপর দিয়েই কোনরকম আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি বাঁধের উপর।

এদিকে দুলু খাতুনেরও দুনিয়ায় কেউ নেই। একমাত্র সম্ভল বসতভিটাও নদী গর্ভে চলে যাওয়ার পর দুচোখে কেবল যমুনার স্রোতের মত টলটলে অশ্রু আর একরাশ হতাশার কুয়াশা ছাড়া কিছুই নেই।

অপরদিকে ৫৪ বছর বয়সী ঈসমাই হোসেন। এই উপজেলার সোনাতুনি ইউনিয়নের হাতকোড়া গ্রামের ইসমাইল হোসেন নিজের বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে চলে যাওয়ার পর ভিটেমাটি হাড়িয়ে প্রায় একদশক আগে বাড়ি করেছিলেন যমুনার কোল ঘেষে। ভেবেছিলেন আর ভাঙনের কবলে পরতে হবে না। কিন্তু তার দুঃখের দিন শেষ হলোনা। একরাশ হতাশার মধ্যে সমস্ত স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে তীর রক্ষা বাঁধে ধস নেমে। এভাবেই অত্র এলাকার রূপচাঁদ মোল্লা, এরশাদ মোল্লা, মজনু মোল্লা, আলী মোল্লা, আমদ আলী মোল্লা, বাতেন মোল্লাসহ অর্ধশতাধিক মানুষ নতুন আশ্রয় খুঁজছেন।

এলাকাবাসী জানান, শাহজাদপুরে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত যমুনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধে নতুন করে ধস শুরু হয় সপ্তাহ খানেক আগে। তীর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক ধসে ইতোমধ্যেই মসজিদসহ অন্তত ২৫টি বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন থেকে শুরু করে মাত্র কয়েক দিনেই যমুনার ঘূর্ণি স্রোতে ধসে যায় যমুনার তীর রক্ষা বাঁধ। উপজেলার গালা ইউনিয়নের বেনোটিয়া পয়েন্টে কয়েকটি স্থানে এ ধস শুরু হয়।

নদী তীরের বাসিন্দারা জানান, বর্ষার শুরুতেই নদীর এই অংশের আশংকাজনক অবস্থার বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করা হয়। কিন্তু সময়মত তারা ব্যবস্থা না নেওয়ায় গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই ধস শুরু হয়। কোনকিছু বুঝে উঠার আগেই এই এলাকার ঐতিহ্যবাহি শিমুলকান্দি জামে মসজিদ নদীগর্ভে চলে যায়। তারপর একে একে অন্তত ২৫ টি ঘরবাড়ি যমুনার গর্ভে চলে যায়। ভাঙন অব্যাহত থাকায় এলাবাসী আতংকিত হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে গালা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতেন জানান, বাঁধ নির্মাণের সময় তীর রক্ষা বাঁধের একেবারে নিকট থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন এবং অবৈধ বালু ব্যাবসায়ীরা অপরিকল্পিত ভাবে নদী থেকে বালু তোলায় সিসি ব্লকের নিচ থেকে বালু ও জিও ব্যাগ সরে গিয়ে বাঁধের বিভিন্ন অংশে ধসের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনেক আগেই লিখিত ভাবে জানালেও তারা কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ার শাহীন কামাল জানান, ভাঙন শুরু হওয়ার সাথে সাথেই জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে। আশাকরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারবো।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যসহকারি নুরুল ইসলাম জানান, নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় হঠাৎ করেই ধস শুরু হয়েছে। তবে ভাঙন ঠেকাতে সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর ইউএনও মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানালে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। ইতোমধ্যে তারা জিও ব্যাগ ফেলতে শুরু করেছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ওই এলাকার ৬০০ মিটারে জিও বস্তা ফেলা হচ্ছে। নতুন প্রকল্পের কাজের টেন্ডার হয়েছে যা বাস্তবায়িত হলে ভাঙন মুক্ত হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close