চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি

  ১৪ মে, ২০২২

যশোরের চৌগাছায় কপোতাক্ষ নদ খনন

উচ্ছেদ না করেই খনন

যশোরের চৌগাছায় কপোতাক্ষ নদটি খনন শুরু হয়েছে। নদের দু-পাড়ের অবৈধ দখলদারদে উচ্ছেদ না করে নদটি খনন করায় এখন সরু খালে পরিনত হচ্ছে। ইতোমধ্যে নদের জমি, খননের দৈর্ঘ্য ও গভীরতা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। তবে সরকারের এই মহত উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে বলে সচেতন মহল মনে করছেন।

চৌগাছা শহরের প্রান কেন্দ্র দিয়ে বয়ে গেছে মহাকবি মাইকেল মধুসুদন দত্তের কপোতাক্ষ নদ। এই নদটি চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গায় কপোতাক্ষের উৎপত্তিস্থল। সেখান থেকে চৌগাছা, ঝিকরগাছা, সাতক্ষীরা হয়ে দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। এক সময়ের প্রমত্তা কপোতাক্ষ কালের পরিক্রমায় মরা খালে পরিনত হয়। কপোতাক্ষের করুন পরিনতি নিয়ে প্রতিদিনের সংবাদনহ বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশ হলে টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। অবশেষে সেই মরা কপোতাক্ষকে খননের উদ্যোগ নিয়েছেন সরকার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর ব্রীজ সংলগ্ন হতে যশোরের মনিরামপুর উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৭৯ কিলোমিটার নদ খনন হবে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা। একাধিক প্রজেক্টের মাধ্যমে আগামী দুই বছরের মধ্যে খননকার্য শেষ করা হবে। নির্ধারিত পরিমাপে নদকে গভীর করা হবে আর খননকৃত নদের আড় হবে ৩০ থেকে ৩৫ মিটার। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের শেষ সময়ে এসে পৌরসভার হুদাচৌগাছা মহল্লার নিচ থেকে নদ খনন কাজ শুরু হয়। কিন্তু বৃষ্টির কারনে বন্ধ হয়ে যায় কাজ। চলতি অর্থ বছরে নদের পানি কমা মাত্রই শুরু হয় খননকার্য। কিন্তু যে ভাবে নদ খনন হচ্ছে তাতে নদ কি আদৌ কপোতাক্ষ থাকবে না কি সরু খালে পরিনত হবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সর্বমহলে। অসন্তোষ প্রকাশ করেছে নদ বাঁচাও আন্দোলনের নেতারও।

চলতি অর্থ বছরে উপজেলার ধুলিয়ানী ইউনিয়নের অংশ থেকে নদ খনন শুরু করে চৌগাছা পৌর এলাকা হয়ে পাশ্ববর্তী হাকিমপুর অভিমুখে চলছে খনন কাজ। বর্তমানে চৌগাছা বাজারের পাশে নদের অংশে চলছে খনন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নদের জমি দখলে রাখা ব্যক্তিদের নিকট থেকে সেভাবে উদ্ধার হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসি। পৌর এলাকারা বাবুঘাট থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো পর্যন্ত নদের জমি দখলে নিয়ে অনেকে আরাম আয়েশে আছেন। অভিযোগ খনন করা হচ্ছে নদ কিন্তু ওই জমি উদ্ধার হচ্ছে না। কেন কিসের কারনে নদের জায়গা উদ্ধার হচ্ছে না সেই প্রশ্ন এখন সকলের মুখে মুখে।

সরেজমিন নদের খনন কাজ দেখতে বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদে পানি রয়েছে পাশে শুকনা জমিতে এক্্েরমিটার বসিয়ে নদের তলদেশ থেকে কাদামাটি তুলে পাড়ে স্তুপ করা হচ্ছে। পানি থাকার কারনে সঠিক ভাবে খনন হচ্ছে কিনা সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নদ পাড়ের বাসিন্দরা।

নদ পাড়ের বাসিন্দা হায়দার আলী, রাশিদুল ইসলাম, আজগর আলী, স্বপন কুমার, কৃষ্ণ কুমার, আব্দুস সামাদসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, আমরা তো সাধারণ মানুষ তেমন কিছুই বুঝি না। তবে মনে হচ্ছে নদ খননে সুভঙ্করের ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নদ খনন করা হলে যে উদ্যোশে এই কাজটি করা হচ্ছে তা সফল হবে না। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে খননকৃত মাটি আবারও নদে পড়ে ভরাট হবে তখন কপোতাক্ষ হবে সরু খাল। বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ঠদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

নদ খননের বিষয়ে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী খান বলেন, দ্বিতীয় ধাপে কপোতাক্ষ নদে খননের কাজ চলছে। চৌগাছার তাহেরপুর থেকে মনিরামপুরের খদ্দেরঘাট পর্যন্ত ৭৯ কিলোমিটার খননের আওতায় রয়েছে। নদের প্রস্থে গড়ে আমরা ৪২ মিটার পর্যন্ত খনন করছি। তিনি বলেন, আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নিয়মমাফিক খনন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close