কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি

  ০৫ এপ্রিল, ২০২০

সুন্দরবনে শেষ হয়েছে গোলপাতা আহরণ মৌসুম

নির্বিঘ্ন গোলপাতা সংগ্রহ করতে পেরে খুশি বাওয়ালিরা

সুন্দরবনের অভ্যন্তরে শেষ হয়েছে গোলপাতা আহরণ মৌসুম। কোনো হয়রানি ছাড়া গোলপাতা কেটে বাড়ি ফিরে বাওয়ালিরা এখন মহাব্যস্ত বিক্রির কাজে। এদিকে গোলপাতা আহরণে সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের দুটি কূপে (জোন) লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার যে আশঙ্কা ছিল তা থেকে বের হয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এবার নির্বিঘেœ গোলপাতা কাটতে পেরে বাওয়ালিরাও খুশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গোলপাতা আহরণের ভরা মৌসুমে এবার বাওয়ালিদের বিএলসি (অনুমতি) দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই কঠোর ছিল বনবিভাগ। ফলে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা সংকটে বাওয়ালিরা খানিকটা দেরিতে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের দুটি কূপ (জোন) থেকে অনুমতি গ্রহণ করে সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে গোলপাতা কাটতে পেরেছে।

খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. আবু সালেহ বলেন, বাওয়ালিরা যাতে বনের অভ্যন্তরে নির্বিঘেœ গোলপাতা কাটতে পারে তার জন্য বনবিভাগ থেকে বরাবরের মতো এবারও কঠোর নিরাপত্তা নেওয়া হয়। চলতি বছর সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জে গোলপাতা কূপে গোলপাতা সংগ্রহের জন্য ২৩৯টি বিএলসির অনুকূলে বাওয়ালিরা ১ লাখ ১৮ হাজার ৮০৪ মণ গোলপাতা সংগ্রহ করার অনুমতি নিয়েছিল। তবে বনবিভাগের কঠোর নজরদারির কারণে কোনো প্রকার ঠেসপাতা, মাইজপাতা নষ্ট না করে নিয়মমাফিক গোলপাতা কেটে বাড়ি ফিরেছে বাওয়ালিরা।

সুন্দরবন খুলনা বিভাগের বন প্রহরী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অলিয়ার রহমান মিলন বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি থেকে এসব বিএলসির অনুকূলে অনুমতি দেওয়া শুরু হয় এবং গোলপাতা আহরণ মৌসুম ২৬ মার্চ পর্যন্ত চলে। তবে প্রথমে ধারণা করা হয় এবার ব্যবসায়ীদের আগ্রহ না থাকায় শুরুতেই গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি-না। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ায় বনবিভাগও খুশি।

খুলনা গোলপাতার কূপ কর্মকর্তা শেখ মো. আনিছুর রহমান বলেন, নিয়ম মেনেই গোলপাতা আহরণের অনুমতি দেওয়া হয়। আর আমাদের নিয়ম মেনে বাওয়ালিরা এ বছর গোলপাতা কাটায় তারা লাভবান হবে বলে জানান তিনি।

বনবিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, বরাবরের মতো এবারও গোলপাতা আহরণের ক্ষেত্রে বাওয়ালিদের বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে ৫০০ মণের বেশি ধারণক্ষমতার নৌকা বিএলসির বাইরে থাকবে। গোলপাতা আহরণের জন্য নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত সময় বনে অবস্থান করা যাবে না, আহরণের সময়

বনবিভাগের নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করতে হবে, গোলপাতা ঝাড়ের মাইজপাতা ও ঠেসপাতা কোনোভাবেই কর্তন করা যাবে না এবং গোলপাতার আড়ালে যাতে কোনো ধরনের বনজদ্রব্য পাচার না হয় সে বিষয়টি নিবিড়ভাবে নিরীক্ষণ পূর্বক নিশ্চিত করতে হবে। সুন্দরবন উপকূলীয় নলিয়ান এলাকার বাওয়ালি জুলফিক্কার আলী জুলু জানান, ২০ বছর ধরে তিনি সুন্দরবন থেকে গোলপাতা সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তবে বনবিভাগের এবারের মতো কড়াকড়ি আগে কখনো দেখেননি।

সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বশিরুল আল-মামুন বলেন, প্রতিটি স্টেশন ও কূপে নিয়মিত তদারকি করে বিএলসি নবায়ন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এ বছর। পাশাপাশি কূপে বিএলসির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নৌকার মিল রেখে গোলপাতা কাটার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কেউ যাতে বাণিজ্য করতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজরদারি রাখা হয়। তবে কোনো অভিযোগ ছাড়াই এবার গোলপাতা আহরণ মৌসুম শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close