প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২২ মে, ২০১৯

গোলাপগঞ্জ ও পাকুন্দিয়ার লিচু যাবে সারা দেশে

চলতি মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়া ও চাষিদের নিবিড় পরিচর্যার কারণে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া ও সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ও দাম দুই বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট লিচুচাষিরা। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এই লিচু পাইকারদের মাধ্যমে সারা দেশে যায়। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

কিশোরগঞ্জ : উন্নত জাতের লিচুর জন্য প্রসিদ্ধ কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রাম। টক টকে লাল রং, বড় আকৃতি, ছোট বীচি ও মিষ্টি স্বাদের কারণে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর সুনাম দেশজুড়ে। চলতি মৌসুমে এই গ্রামে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যেই লিচু ভর্তি গাছগুলো বিক্রি হয়ে গেছে দূর-দূরান্ত থেকে আগত পাইকারদের কাছে। এখন চলছে আহরণের কাজ।

সংশ্লিষ্ট লিচু চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতেই অনুকূল আবহাওয়া এবং নিবিড় পরিচর্যার কারণে লিচুর ফলন হয়েছে আশাতীত। শ’প্রতি লিচুর দাম উঠছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। প্রতি বছর মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে প্রায় তিন কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়ে থাকে। লিচু চাষ করে এখানকার চাষীদের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে, মুক্তি মিলেছে দারিদ্রতা থেকেও।

মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু ক্রয়ের জন্য আগত ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন বলেন, এ বছর মুকুল থাকাবস্থায় ১১৬টি লিচু গাছ কিনেছি। ভালো ফলন হওয়াতে লিচু বিক্রি করে প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা লাভ হবে। এখান থেকে লিচু কিনে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিক্রি করি। একই কথা বলেন স্থানীয় শাহ মো. ফয়জুল্লাহ ফয়সাল।

লিচু বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হওয়ার কথা উল্লেখ করে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচু চাষী আরমান মিয়া বলেন, আমার বাগানে ৩০/৩২টি লিচু গাছ আছে। এই লিচু বিক্রি করে অনেক টাকা লাভ করি। এই পয়সায় সংসারের খরচ চালিয়েও অনেক উদ্ধৃত্ত থাকে। এই টাকায় আমার আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। আমার গ্রামের অনেকেই লিচু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর আমেরিকা, জার্মানী, অস্ট্রেলিয়া ও সৌদি আরব থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে মঙ্গলবাড়িয়া থেকে লিচু বিদেশে নিয়ে থাকে।

লিচু সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, প্রয়োজনীয় সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা প্রদান করা হলে এখানকার উৎপাদিত লিচুর আবাদ আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব। সেই সাথে বিপণনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে পাল্টে যেতে পারে স্থানীয় অর্থনীতির চিত্র।

পাকুন্দিয়ার হোসেন্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান হামদু বলেন, মঙ্গলবাড়িয়ায় লিচু চাষের ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কোন উদ্যোগ নেই। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সঠিকভাবে চাষীদের পরামর্শ, তদারকি ও লিচু চাষীদের ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে দিলে এ অঞ্চলে লিচুর ফলন আরো ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ হতো।

গোলাপগঞ্জ (সিলেট) : সিলেটের গোলাপগঞ্জের উন্নত জাতের লিচু তেমন দেখা না মিললেও উপজেলার একাধিক গ্রামে দেশীয় জাতের লিচুর প্রভাব রয়েছে। উপজেলার রনকেলী, কানিশাইল, ধারাবহর, রায়গড়, শিলঘাট, বারকোট, খর্দ্দাপাড়া, ভাদেশ্বর, লক্ষণাবন্দসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে।

উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউপির খর্দ্দাপাড়া গ্রামের লিচু চাষী টিটু মিয়া জানান, উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষী না থাকলেও শখের বশে চাষকারী অনেকেই এখন পেশাদার। শৌখিন ফলনকারী হলেও লিচুর ফলন বেশী হওয়ায় অনেকে অর্থনৈতিকভাবে এই ফল বিক্রয় করে লাভবান হচ্ছেন বলে জানান তিনি।

উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি ১০০ লিচু ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সময় যত যাবে তত লিচুর দাম কমে আসবে বলে বিক্রেতারা জানান।

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খায়রুল আমিন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, গোলাপগঞ্জে দেশীয় জাতের লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। তবে উপজেলার কোথাও বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ হচ্ছে না। তিনি মনে করেন চায়না থ্রি অথবা মোম্বাই জাতের উন্নত লিচু বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে দেশের চাহিদা মিঠিয়ে বিদেশে রপ্তানী করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close