আরিফ খাঁন, বেড়া (পাবনা)

  ০৭ জানুয়ারি, ২০১৯

পাবনায় দিনমজুরের কাজ করছে শিক্ষার্থীরা!

বেড়া ও সাঁথিয়ায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ

পেঁয়াজের কৃষি প্রধান অঞ্চল হিসেবে বেশ পরিচিতি আছে পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, ফরিদপুর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলা। জেলার বেশির ভাগ ফসলি জমিতে নতুন পেঁয়াজের চারা রোপণ শুরু করেছেন কৃষক। এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকারী ফসল হিসেবে কৃষকরা পেঁয়াজ চাষকে বেছে নিয়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মওসুমে দুই উপজেলায় ১৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার কৃষকরা পেঁয়াজের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সাঁথিয়া উপজেলার গজারিয়া বিলে পেঁয়াজে চারা রোপণ করতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করছে উপজেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। দিনমজুর হিসেবে পেঁয়াজের চারা রোপণ করতে আসা পুন্ডুরিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র সজীব বলেন, ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা দেওয়ার পর থেকে বিদ্যালয় বন্ধ থাকে ও জানুয়ারি মাসে ক্লাস কম হয় তাই বাড়তি কিছু টাকা রোজগার করে সংসারে স্বচ্ছলতা আনার জন্য এ কাজ করছি। আরেকজন ছাত্র মুরসালিন বলেন, আমি পিএসসি পরীক্ষায় পাস করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছি। স্কুলে এখনো পুরো দমে ক্লাস শুরু হয়নি। তা ছাড়াও স্কুলের ড্রেস, জুতা, গাইড কিনতে হবে তাই কয়েক দিন কাজ করছি। মুরসালিন আরো জানান, তাদের মতো আরো অনেক ছাত্রই দিন প্রতি ২৫০-৩০০ টাকা আর বড়দের ৩৫০-৪০০ টাকা করে এবং দিনে দুই বেলা খাবার খাওয়ার মাধ্যমে পেঁয়াজের চারা রোপণ করে থাকেন।

হৃদয় নামে অন্য এক কলেজছাত্র জানান, গতবার তিনি পেঁয়াজ রোপণের মৌসুমে ৮,৫০০ টাকা রোজগার করেছিলেন আর এবারের মৌসুমেও ১০-১২ হাজার টাকা রোজগার করতে পারবেন বলে জানান। আর এই রোজগার টাকা দিয়ে এবারে একটি ভালো মোবাইল ফোন, বই ও জামা-কাপড় কিনবেন বলে জানান। পরিশ্রমের বিষয়ে জানতে চাইতেই বলেন, দিন কহন যায় টের পাইনা গল্পে গল্পে দিন চলে যায়। বেড়া উপজেলার চকপাড়া গ্রামের কৃষক আরজান মোল্লা বলেন, তিনি এবারে ১৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের দানা রোপণ করবেন আর ইতোমধ্যে ৭ বিঘা জমিতে রোপণ করেছেন। তিনি আরো জানান, প্রতি বিঘা জমিতে এই পেঁয়াজের চারা রোপণ করতে ১২-১৪ জন দিনমজুর হিসেবে কাজ করে থাকেন আর তাদের মধ্যে বর্তমানে বেশির ভাগই স্কুল-কলেজের ছাত্ররা কাজ করছেন। প্রতি বিঘাতে খরচ হয় ১৫-২০ হাজার টাকা। পেঁয়াজ তিন মাসের ফসল তাই পেঁয়াজ রোপণে আগ্রহী সব কৃষকেরা।

আবদুর রহমান নামে আরেক কৃষক বলেন, গ্রাম এলাকার ছাত্ররা এ কাজটি ভালো পারেন এবং মজুরিও কম তাই তারা এ কাজে ছাত্রদের দিনমজুর হিসেবে নিয়ে থাকেন। এ ছাড়া এই পেঁয়াজ রোপণের মৌসুমে রংপুর, বগুড়া, লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত মানুষ দিনমজুর হিসেবে এ কাজের জন্য কাশিনাথপুর হাটে আসেন। সসাঁথিয়ার পুন্ডুরিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ খাঁন বলেন, পেঁয়াজ লাগানোর মৌসুমে বিভিন্ন বিদ্যালয় ও কলেজের অসংখ্য ছাত্ররা দিনমজুর হিসেবে কাজ করে থাকে আর এজন্য এ সময় গ্রাম এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রদের উপস্থিতির হার অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম থাকে। বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রঞ্জন কুমার প্রামানিক ও সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন জানান, সঠিকভাবে রোপণ, পরিচর্যা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের মতো এবারও পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close