সেন্টমার্টিনগামী জাহাজের টিকিট না পেয়ে কক্সবাজার ভ্রমণ বাতিল করছে দেশের বিভিন্ন স্থানের পর্যটকরা। পর্যটনের ভর মৌসুম শুরু হলেও পর্যাপ্ত জাহাজ না থাকায় গত এক মাসে অনেক পর্যটক টিকিট না পেয়ে কক্সবাজার ভ্রমণে অনীহা প্রকাশ করে ভ্রমণ বাতিল করছেন। পর্যটন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বর্তমানে সেন্টমার্টিন রুটে সেন্টমার্টিন ভ্রমণকারী পর্যটক পরিবহণ করছে পাঁচটি জাহাজ। সর্বশেষ গত ২৮ নভেম্বর এই রুটে চলাচল শুরু করেছে বিশালাকার জাহাজ ‘এলসিটি কাজল’। এই জাহাজ চলাচল শুরু করলেও এখনো পর্যাপ্ত পর্যটক পরিবহন করতে পারছে না চলাচলকারী পাঁচ জাহাজ। চলাচলকারী এসব জাহাজের ধারণক্ষমতা প্রায় ১৬০০ জন। কিন্তু বর্তমানে এর দ্বিগুণ পর্যটক কক্সবাজারে আসতে আগ্রহী হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাহাজ কর্তৃপক্ষ ও ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের জন্য জাহাজের টিকিট বুকিং না পেয়ে পুরো কক্সবাজার ভ্রমণ বাতিল করছে। তবে কক্সবাজারে এসেই জাহাজ না পেয়ে দৈনিক অন্তত ৫০০ পর্যটক ট্রলার নিয়ে জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে সেন্টমার্টিন যাচ্ছেন ট্যুর অপারেটস এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক)’র চেয়ারম্যান এম.এ. হাসিব বাদল জানিয়েছেন, পর্যটনের ভরমৌসুমে কক্সবাজারের ভ্রমণে আসার জন্য দেশের সব প্রান্তের বিপুল পর্যটকের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তবে কক্সবাজারে বেড়াতে আসতে আগ্রহী পর্যটকের অন্তত ৯০ শতাংশই কক্সবাজার ভ্রমণস্পটের পছন্দের তালিকায় সেন্টমার্টিনকে রাখছেন। কিন্তু আগ্রহী পর্যটকদের চাহিদামতো জাহাজের টিকিট বুকিং পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তাদেরকে সেন্টমার্টিনকে বাদ দিতেই হচ্ছে। সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সুযোগ না পাওয়ায় অন্তত ৫০ শতাংশ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণ বাতিল করছে। কক্সবাজারকে বাতিল করে তারা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির দিকে চলে যাচ্ছে। টুয়াকের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস.এম কিবরিয়া খাঁন জানান, প্রতিদিন মুঠোফোনে ও অনলাইনে বিপুল পরিমাণ পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণে আসার আগ্রহ প্রকাশ করছে। কিন্তু তাদের আগ্রহ মতো আমরা সেন্টমার্টিনের জাহাজের টিকিট দিতে পারছি না। ফলে তারা কক্সবাজার ভ্রমণের সিডিউল বদল করে রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির দিকে যাচ্ছে। ফলে কক্সবাজার হারাচ্ছে পর্যটক।

তিনি আরো জানান, ট্যুর অপারেটর ব্যবসা করে বিপুল লোক কর্মসংস্থান করছে। সেন্টমার্টিন ভ্রমণে আগ্রহী পর্যটকেরাই বেশি ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নেন। তাই ট্যুর অপারেটরা অনেকটা সেন্টমার্টিনের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু জাহাজের টিকিট না পাওয়ায় পর্যটক বুকিং নিতে পারছে না অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে অনেক ট্যুর অপারেটর এখনো বেকার রয়ে গেছে।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পর্যটনের ভরমৌসুম শুরু হলেও এখনো আশানুরূপ পর্যটক আসছে না। আশানুরূপ পর্যটক না আসায় হোটেল-মোটেলসহ অন্যান্য পর্যটন ব্যবসাগুলো এখনো পর্যাপ্ত চাঙ্গা হয়ে উঠেনি। লোকসানের মুখে ব্যবসা করছেন তারা।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন দোড়গোড়ায় হলেও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত স্থিতিশীল রয়েছে। এটা ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কিন্তু সেহারে কক্সবাজারে ভ্রমণে আসছে না পর্যটকেরা। আমরা জানতে পেরেছি, ভরমৌসুম চললেও এখনো পর্যাপ্ত জাহাজ চলাচল করছে না। জাহাজের টিকিট না পেয়ে অনেক পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণ বাতিল করছে বলে ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের জানিয়েছে।’

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, চরম জাহাজ সংকট বিরাজ করলেও বর্তমানে চলাচলকারী জাহাজগুলোর কর্তৃপক্ষ নতুন জাহাজ আসতে বাধা সৃষ্টি করছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জাহাজ আনার চেষ্টা করলেও তাদেরকে নানা ষড়যন্ত্র করে আটকে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। সর্বশেষ চলাচল শুরু করা জাহাজ ‘এলসিটি কাজল’ আনতেও নানাভাবে ষড়যন্ত্র করেছে চলাচলকারী জাহাজ কর্তৃপক্ষ। অনেক চেষ্টা করে জাহাজ ‘এলসিটি কাজলকে’ ঠেকাতে পারেনি। সর্বশেষ ‘এলসিটি কাজল’র চলাচলের শুরুর দিনও প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে জাহাজটি আটকে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে প্রায় পাঁচ শতাধিক পর্যটক হয়রানির শিকার হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে টুয়াকের সভাপতি ও এলসিটি কাজলের এমডি তোফায়েল আহমদ বলেন,‘দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় বিপুল পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণে আসার আগ্রহ প্রকাশ করছে। কক্সবাজারে বেড়াতে এসে সেন্টমার্টিন যেতে না পারলে ভ্রমণের পূর্ণতা পাওয়া যায় না। তাই এসব পর্যটকেরা সেন্টমার্টিন ভ্রমণে অধিক আগ্রহী। কিন্তু তারা জাহাজ সংকটের কারণে সেন্টমার্টিন যেতে পারছে না। এটা কক্সবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা।’

তিনি আরো বলেন, ‘জাহাজ সংকট কাটাতে একটি জাহাজ আনতে গিয়ে আমাদের নানা ষড়যন্ত্রের মুখোমুখী হতে হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা জাহাজ কর্তৃপক্ষগুলো নতুন জাহাজ আসতে না দিয়ে তারা অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে। ফলে ঝুঁকির মুখে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে বাধ্য হচ্ছে পর্যটকেরা।’ এই রুটে কমপক্ষে আরো দুটি বড় জাহাজ দরকার বলে জানান তোফায়েল আহমদ।

"