এইচ আর তুহিন, যশোর

  ০৮ অক্টোবর, ২০১৮

আদালতে ঝুলে আছে যশোরে ৯৫ প্রাথমিকে দফতরি নিয়োগ

চার বছর আগে চৌগাছায় ২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দফতরি কাম নৈশপ্রহরী নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত হয়। কিন্তু আদালতের এক রায়ে সারা দেশে স্থগিত হয়ে যায় নিয়োগ প্রক্রিয়া। দেড় বছর পর আদালতের রায় হলেও চৌগাছায় নিয়োগ সম্পন্ন করা যায়নি। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে পূর্বের ২১টিসহ ৪১ বিদ্যালয়ে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেই নিয়োগ প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে উচ্চ আদালতে রিট থাকায় ৪১টি বিদ্যালয়ের দফতরি নিয়োগ ঝুলে আছে।

শুধু যশোরের চৌগাছা উপজেলা নয়, ঝিকরগাছায় ৫২টি ও অভয়নগরের ২টিসহ জেলায় মোট ৯৫ বিদ্যালয়ের দফতরি নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলে আছে আদালতে মামলা, নিয়োগ বাণিজ্য, দলীয় কোন্দলসহ নানা জটিলতায়। দীর্ঘদিন ধরে চাকরি না হওয়ায় প্রার্থীরা চরম হতাশায় রয়েছে। যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন স্থবির থাকা জেলার ১৫৬ বিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অচিরেই এই বিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী।

চলতি বছরের ২৮ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) মো. আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, যেসব বিদ্যালয়ে এখনো নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি, ওই সব বিদ্যালয়ে দফতরি কাম নৈশপ্রহরী জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে অধিদফতরকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ঝুলে থাকা ১৫৬টি বিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে অভয়নগরে ২৭টি, কেশবপুরে ৩১টি, বাঘারপাড়ায় ২২টি, মণিরামপুরে ১টি, শার্শায় ২৫টি ও যশোর সদরে ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে। অচিরেই এই বিদ্যালয়গুলোয় নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। কিন্তু চৌগাছার ৪১টি, অভয়নগরের ২টি বিদ্যালয়ের নিয়োগের বিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলা রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এসব বিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হচ্ছে না।

এ ছাড়া ঝিকরগাছায় ৫২টি বিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে বাণিজ্য ও দলীয় কোন্দলের কারণে। ফলে তিন উপজেলার মোট ৯৫টি বিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ না হওয়ায় দিশেহারা চাকরি প্রার্থীরা। আদৌও চাকরি হবে কিনা সেটি নিয়েও সংশয়ে রয়েছে।

যশোরের চৌগাছা উপজেলার স্বরূপদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরি প্রার্থী মফিজুর রহমান বলেন, চাকরি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলে গেছে। খুব কষ্টে আছি। তিনি আরো বলেন, আমরা ১৭ জন মিলে উচ্চ আদালতে রিট করেছি। আদালতের রায় না পেলে নিয়োগ হচ্ছে না। দ্রুত নিয়োগটা হয়ে যাক সেই কামনা করছি।

চৌগাছার খড়িঞ্চা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরি প্রার্থী আলমগীর হোসেন বলেন, চাকরি হয়েও হচ্ছে না। নানা জটিলতায় চার বছর ধরে ঘুরছি। শেষ পর্যন্ত আমরা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। কারণ চার বছর আগেই ২১ জনকে চূড়ান্ত করা হয়েছিল। এই ২১ জনকে নিয়োগ না দিয়ে পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এটা অবৈধ। আমরা আদালতে আবেদন করেছি, ২০১৪ সালে আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ফলে আমাদের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হোক। আমরা আদালতের রায়ের অপেক্ষায় আছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চাকরি প্রার্থী বলেন, দুইজন শীর্ষ জনপ্রতিনিধির টানাটানিতে আমরা বলি হয়েছি। তাদের নিজেদের মধ্যে গ্রুপিংয়ের কারণ আমরা চার বছর ধরে ভুগছি। এটার একটি নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। কারণ চাকরি প্রার্থী সবাই কম-বেশি টাকা খরচ করেছে। ফলে চাকরির বিষয়টি চূড়ান্ত হলেও অনেক কিছু মীমাংসা হয়ে যাবে।

চৌগাছা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) বেলায়েত হোসেন জানান, আদালতে মামলা থাকায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম বলেন, মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ঝুলে থাকা দফতরি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অচিরেই নিয়োগ সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী। আর যে বিদ্যালয়গুলো নিয়ে আদালতে মামলা আছে, সেখানে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। আদালতের নিদের্শনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close