মনির হোসেন, বেনাপোল (যশোর)

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

ভাষা দিবস মিলিয়ে দিল এপার-ওপার বাংলাকে

‘একই আকাশ একই বাতাস, দুই বাংলার মানুষের ভাষা এক। একই নদী একই জল। আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি বলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমাদের প্রাণ কাঁদে। তাই তো বারবার ছুটে আসি দুই দেশের বাঙালি বাংলাভাষী মানুষের পাশে।’

বাঁশের বেড়া উপেক্ষা করে ভাষার দাবিতে আন্দোলনে শহীদদের সম্মিলিত শ্রদ্ধা জানাল ভারত-বাংলাদেশ। ‘বিশ্ব মানব হবি যদি, কায়মনে বাঙালী হ’ এ শ্লোগানে গত বুধবার দুই বাংলার মৈত্রী পরিষদের আয়োজনে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে এক সঙ্গে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তের শূন্যরেখায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একুশ মঞ্চে’।

সীমান্তের অস্থায়ী শহীদ বেদি ঢাকল ফুলের চাদরে। মিষ্টি বিতরণ, আলোচনা আর গানে গানে মাতোয়ারা হলো দুই বাংলার একই আকাশ একই বাতাস। এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে জড়ো হয়েছিল হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী মানুষ। দুইদেশের জাতীয় পতাকা, নানা রং এর ফেস্টুন, ব্যানার, প্লেকার্ড, আর ফুল দিয়ে বর্নিল সাজে সাজানো হয় শূন্যরেখা এলাকা।

উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর ভারত-পাকিস্তান দুই দেশ সৃষ্টি হলে ভাগ হয়ে যায় বাংলা। পাকিস্তানের অংশে থাকা পূর্ব পাকিস্তান ১৯৭১ সালে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ হয়। পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে ভারতের রাজ্য হয়ে। ২০০২ সালে ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দুই বাংলার ‘ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গা-পদ্মা ভাষা ও মৈত্রী সমিতির’ উদ্যোগে সীমান্তবর্তী প্রায় ২০টি সংগঠন বেনাপোল-পেট্রাপোলের এই মিলন মেলার সূচনা করে।

সকাল সাড়ে ১০টায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী শ্রী জ্যোতি প্রিয় মল্লিক, লোকসভার বনগাঁ অঞ্চলের সাংসদ মমতা ঠাকুর, বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ও বনগাঁ পৌর মেয়র শংকর আঢ্যর নেতৃত্বে ভারত থেকে আসা শতশত বাংলাভাষী মানুষ বাংলাদেশিদের ফুল ছিটিয়ে বরণ করে নেয় একে অপরকে। শূন্যরেখায় অস্থায়ী শহীদ বেদীতে প্রথম ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান উভয় দেশের জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক শাহিন চাকলাদার, যুগ্ম-সম্পাদক আব্দুল মুজিদ ও বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন। ভাষা দিবসের মিলন মেলায় বিজিবি বিএসএফকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। এর পর দুইদেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী মানুষ দিবসটি উদযাপন করে যৌথভাবে।

বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, ‘দুই বাংলার মানুষ আজ আমরা এক হয়েছি। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন আমাদের অধিকার বোধের জম্ম দিয়েছিল। সালাম, বরকত, রফিক, শফিক জব্বারসহ হাজারো মানুষের রক্তের বিনিময়ে রাষ্ট্রভাষার যে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা বিশ্বে বিরল।’

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘আমি বাংলায় কথা বলি পুনর্জন্মে আমি বাঙালি হতে চাই। কাটাতারের বেড়া আমাদেরকে আটকাতে পারে কিন্ত আমাদের আবেগকে আটকাতে পারবে না। আগামী ২০ বছর পর দুই বাংলা এক হয়ে যাবে।’

মঞ্চে একুশের কবিতা আবৃতি, ছড়া, গীতিনাট্য, আলোচনা আর সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে পশ্চিম বাংলার কবি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সঙ্গীত শিল্পী অনুপম রায়, অভিনেতা জয়ন্ত চট্রোপাধ্যায়, ঋষি চক্রবর্তী, বাংলাদেশের সঙ্গীত শিল্পী কিরণ চন্দ্র রায়, ফাতেমাতুজ্জোহরা সংগীত পরিবেশন ও আবৃতি করেন। দুইদেশের সীমান্ত রেখা ভুলে নিরাপওা বেস্টনি পেরিয়ে ভাষা প্রেমীরা ছুটে এসে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরে আবেগে আপ্লত হয়ে পড়ে। দুই বাংলার মানুষের এ মিলনমেলায় উভয় দেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসাহের সৃষ্টি হয়। ফুলের মালা ও জাতীয় পতাকা বিনিময় করেন। বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্টে ঢল নামে হাজার হাজার মানুষের। ক্ষণিকের জন্য হলেও স্তব্ধ হয়ে যায় আন্তর্জাতিক সীমারেখা।

দুইবাংলার মিলন মেলায় নেওয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা। কড়াকড়ি আরোপ করা হয় দুই সীমান্তে। বেনাপোল পেট্রাপোল চেকপোস্টে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য বিজিবি ও বিএসএফ অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে। ২০০২ সাল থেকে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল চেকপোস্টের জিরো পয়েন্টে মাতৃভাষা দিবস পালন করে আসছে দুইবাংলার মানুষ। এছাড়া আয়োজনস্থলে বর্ণমালা গ্যালারি, বইমেলা ও বাংলাদেশের একশ’ স্বেচ্চাসেবীর স্বেচ্ছায় রক্ত দান করেন। যা ভাষা উৎসবকে প্রাণবন্ত এবং দুই বাংলার মানুষকে আরও বেশি অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist