নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

যুগ পেরোলেও নির্মাণ হয়নি হাসপাতাল

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লায় ২০ শয্যা করে দুটি সরকারি হাসপাতাল অনুমোদনের পরও নির্মাণ হয়নি ১৩ বছরেও। হাসপাতাল দুটি বাস্তবে না থাকলেও নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা বেতন পাচ্ছেন নিয়মিত। শুধু চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। হাসপাতাল দুটি না হওয়ায় ফতুল্লায় ও সিদ্ধিরগঞ্জের ১২ লক্ষাধিক মানুষ চিকিৎসা বিড়ম্বনায় ভুগছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত ২০০৭ সালে ১৭ জুলাই এক আদেশে নারায়ণগঞ্জ জেলায় তিনটি ২০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। অনুমোদিত আড়াইহাজার উপজেলায় একটি হাসপাতাল নির্মাণ করে চিকিৎসাসেবা চললেও সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার হাসপাতাল দুটি নির্মাণ হয়নি যুগ পেরোলেও। অথচ সরকারিভাবে এই দুটি হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগ ও বেতন-ভাতা সুবিধা চলছে ঠিকঠাকভাবেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে দুটি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে জমি বরাদ্দ চেয়ে লিখিত আবেদন করা হয়। এ বিষয়ে দুই দফতরে চিঠি চালাচালি হলেও জমি না পাওয়ায় হাসপাতাল আর নির্মাণ হয়নি। তবে বাস্তবে হাসপাতাল দুটি না থাকলেও সরকারি কাগজপত্রে রয়েছে। ডাক্তারও নিয়োগ বদলি হচ্ছে। হাসপাতাল দুটির চিকিৎসকদের বেতনও প্রদান করা হচ্ছে।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অস্তিত্বহীন এই দুটি হাসপাতালে গত ২ হাজার ১১ সাল থেকে দুজন মেডিকেল অফিসার, দুজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, দুজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিকেল), দুজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), দুজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি), দুজন জুনিয়র কনসালট্যান্টসহ হাসপাতাল দুটিতে ছয়টি করে ১২টি পদ রয়েছে। যার মধ্যে আটটি পদে চিকিৎসক আর চারটি হলো মেডিকেল অফিসার। দুই হাসপাতালে ১২ পদেই নিয়োগ হয়েছিল। বর্তমানে পদোন্নতি ও বদলি হয়ে ছয়জন চিকিৎসক অন্যত্র চলে গেছেন। আর ছয়জন বহাল রয়েছেন। তবে তারা কাজ করছেন অন্যত্র।

সিদ্ধিরগঞ্জের হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন ডাক্তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কাগজে-কলমে থাকা হাসপাতালে নিয়োগ পেয়ে এসে দেখি হাসপাতালের কোনো অস্তিত্ব নেই। এখানে বদলি হয়ে আসা ডাক্তাররা প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসে রোগী দেখছেন।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ মজিবুর রহমান বলেন, অনুমোদন পাওয়ার পরও হাসপাতাল নির্মাণ না হওয়া খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি আমার এতদিন জানা ছিল না। জেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে আমি বিষয়টি উত্থাপন করব। বিশ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করার মতো সরকারি জমি সিদ্ধিরগঞ্জে রয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের আটি আজিবপুর মৌজায় ৯ একর ৫ শতাংশসহ বহু সরকারি জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার পরও হাসপাতাল নির্মাণের জন্য জমি না পাওয়ার বিষয় সংশ্লিষ্ট মহলের উদাসিনতা। নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, অনুমোদিত হাসপাতাল দুটি নির্মাণ করতে তিন একর জমির প্রয়োজন। জমি বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসনে আবেদন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত জমি বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। জমি পেলেই নির্মাণকাজ শুরু হবে। হাসপাতাল না থাকলেও নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা বিভিন্ন হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। কেউ বসে বসে বেতন নিচ্ছেন না। জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন জানান, হাসপাতাল দুটির জন্য জমি পাওয়া যায়নি। চেষ্টা করছি জমির ব্যবস্থার করতে। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিলে উদ্যোগ নেব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close