নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯

ঢাকায় ধুলা বাড়াচ্ছে ২০ হাজার ট্রাক

নির্মাণসামগ্রী নিয়ে রাজধানী ও আশপাশে চলাচল করে প্রায় ২০ হাজার ট্রাক। এসব খোলা ট্রাকে মালামাল পরিবহনের সময় কোনো ঢাকনা দেওয়া হয় না। অনেক সময় ট্রাকের ফাঁকফোকর দিয়ে সড়কে পড়ে ধুলা ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী। মালামাল খালাসের পর পানি না ছিটিয়েই চলে যায় ট্রাকগুলো। যাওয়ার সময় ট্রাকের গায়ে লেগে থাকা ধুলাবালি-ক্ষুদ্র কণা ছড়িয়ে পড়ে রাস্তায়, বাতাসে। এজন্য পরিবহন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের অবহেলা আর অজ্ঞতাকে দূষছেন সংশ্লিষ্টরা। চিকিৎসকরা বলছেন, এভাবে ছড়িয়ে পড়া ধুলা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ডভ্যান ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসেবে, ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় প্রায় ২০ হাজার ট্রাক বালু, ইট, সিমেন্ট, নির্মাণ এলাকার মাটি, পাইলিংয়ের কাদা-মাটি, রেডিমিক্স কংক্রিট পরিবহন করে। এসব ট্রাক গাবতলী, আমিনবাজার, মোহাম্মদপুর, বছিলা, আবদুল্লাহপুর, শ্যামপুর, পোস্তগোলা, পাগলা, ডেমরা, সারুলিয়া, কাঁচপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বালু ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চলাচল করে।

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, নির্মাণসামগ্রীর স্তূপীকরণ, পরিবহন ও প্রক্রিয়াকরণের প্রতিটি ধাপে অব্যবস্থাপনার ফলে ধূলিকণা ছড়িয়ে বায়ুদূষণ করছে। হাজার হাজার ট্রাক শহরে ধুলা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এমন নয় যে এক-দুই জায়গায় দূষণ হচ্ছে, শহরজুড়েই এসব ট্রাক বালু উড়াতে উড়াতে যায়। ঢেকে পরিবহন করে না।

তিনি বলেন, শীতকালে কুয়াশার একটা ঘন আবরণ বাতাসকে খুব একটা ওপরে উঠতে দেয় না। একটা আবদ্ধ জায়গার মধ্যে ধূলিযুক্ত-বিষাক্ত কণাযুক্ত বাতাসটা ধোঁয়া এবং ধুলার একটা মিশ্রণ তৈরি করে। ফলে বাতাসটা অনেক ভারী হয়ে ওঠে।

বাতাসে ভাসমান এই ধূলিকণার ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, বাতাসের মাধ্যমে এসব ধূলিকণা শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করছে। এটা ফুসফুসের প্রদাহসহ যেকোনো ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। যাদের আগে হাঁপানি ছিল তাদের হাঁপানি আরো বাড়ায়, ব্রংকাইটিস হতে পারে। এছাড়া চোখের সমস্যা, নাকের কিছু সমস্যাও হতে পারে এ ধুলার কারণে। রাজধানীর গাবতলী, যাত্রাবাড়ীসহ কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে, নির্মাণ সামগ্রীবাহী ট্রাকের অবাধ চলাচল।

গাবতলীতে দেখা যায়, সিমেন্টবাহী একটি খালি ট্রাক গাবতলীর দিকে যাচ্ছে। ট্রাকের কেবিনে পড়ে থাকা সিমেন্টের গুঁড়া বাতাসে উড়ছে। ওই ট্রাকের পেছনে আমিন বাজার ব্রিজ ঘাট এলাকায় গিয়ে কথা হয় চালক জাফর আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, দ্য সিমেন্ট জয়েন্ট নামে প্রতিষ্ঠানের ট্রাকটি আমিন বাজার ব্রিজ ঘাট থেকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সিমেন্ট সরবরাহ করে। ব্রিজঘাট থেকে সিমেন্ট বোঝাই করে কমপক্ষেগ ১ হাজার ট্রিপ যায় রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায়।

ট্রাক থেকে সিমেন্টের গুঁড়া ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা সিমেন্টের ব¯ত্মায় ছোট ছোট অসংখ্য ছিদ্র থাকে। আর সিমেন্টের অতিক্ষুদ্র কণা এসব ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে আসে। এছাড়া কোনো কারণে বস্তা ছিঁড়ে গেলেও অন্যান্য বস্তার সঙ্গে সিমেন্ট লেগে যায়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। সিমেন্ট জাহাজে আসে। ওঠানো নামানের সময় অনেকবার নাড়াচাড়া হয়। শ্রমিকরা লোড-আনলোড করেন। ফলে ছিদ্রগুলা আরো বড় হয়ে সিমেন্ট বের হয়। আবার বস্তা ফেটে গেলে অন্য রস্তায় সিমেন্ট লেগে থাকে।

গাবতলী ব্রিজঘাট এবং গাবতলী গরুরহাট বালুঘাট এলাকা তিন ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা গেছে, কোনো ট্রাকের মালামালই ত্রিপল দিয়ে ঢাকা হয় না।

এ কারণে জানতে চাইলে নুরুন্নবী নামে একজন বালু ব্যবসায়ী বলেন, প্রত্যেকটা ট্রাকে ত্রিপল দেওয়া থাকলেও শ্রমিকরা তা ব্যবহার করেন না। আমরা মালিকরা প্রতিটা গাড়িতে ত্রিপল কিনে দিয়েছি। মাল লোড করার পরেই ত্রিপল দিতে হয়। দেখা যাচ্ছে লেবাররা গাফিলতি করে ত্রিপল দিয়ে ঢাকেন না।

মীর হোসেন নামে একজন ট্রাক শ্রমিক বলেন, দিনে ঢাকনা দিলেও রাতে কড়াকাড়ি না থাকায় তা দেন না তারা। দিনের বেলায় গেলে ঢেকে নিই। কিন্তু রাতের বেলা তেমন ঢাকি না। দিনের বেলা পুলিশ ধরে, তবে রাতের বেলায় ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া আর কোথাও পুলিশ ধরে না।

গাবতলী থেকে বালু নিয়ে শ্যাওড়াপাড়াগামী একটি ট্রাক অনুসরণ করে দেখা যায়, ট্রাকের চাকা-বডির বিভিন্ন অংশে বালি আটকে আছে। এছাড়া বাড়তি বোঝাই করায় ঝাঁকুনিতে তা সড়কে পড়ছে। এভাবে বালু পরিবহনের কারণ জানতে চাইলে চালক রাকিব দাবি করেন, সব সময় ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখেন তারা। ড্রাইভিং সিটের পেছনে একটি ত্রিপলও দেখান তিনি। আসলে সব সময় ত্রিপল দেই। কিন্তু আইজকা দেইনি।

গাবতলী এলাকায় ছোট ট্রাকের পাশাপাশি বালু বহন করে বড় বড় ডাম্প ট্রাকও। এসব ট্রাকেও ঢাকনা নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close