নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ মার্চ, ২০১৯

তুরাগতীরে উচ্ছেদ অভিযান

নদীরক্ষায় কিছুটা নির্দয় হতে হবে

নদীরক্ষার জন্য প্রয়োজনে কিছুটা নির্দয় হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন। গতকাল বৃহস্পতিবার তুরাগ নদের দুই তীরে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে উচ্চ আদালত তুরাগ নদকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করেছেন। এখন নদর প্রাণ বাঁচানোর জন্য নির্দয় হলেও আমাদের সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এই এলাকায় কিন্তু আগেও উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে। আবার লোকজন এসে বসতি করেছে। এবার আর তেমনটা হবে না। কারণ আমরা এবার কোনো মানবিকতা দেখাব না। নদরক্ষার প্রয়োজনে নির্দয় হতে হবে আমাদের।’ তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীর দুই তীরকে দখলমুক্ত করতে জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে উচ্ছেদ অভিযান। দ্বিতীয় ধাপের নবম দিন পর্যন্ত গাবতলী সেতু থেকে দিয়াবাড়ি জোহরাবাদ পর্যন্ত নদীতীরের অবৈধ স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। নদ খর¯্রােতা করে তুলতে মার্চের ২৮ তারিখ পর্যন্ত চলবে এই অভিযান।

তিনি আরো বলেন, ‘এক পাশে বেড়িবাঁধ, একপাশে নদ। মাঝখানে লোকজন বসতি বানালো কীভাবে? বাঁধ তো নদর পাড়েই দেওয়া হয়েছিল! এখানে যারা বাড়িঘর বানিয়েছে, তারা জলসীমা ভরাট করে নদকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। তারা বলছে, এটা তাদের পৈতৃকভিটা। এই দাবি মোটেও সত্য নয়। পৈতৃকভিটা এমন বালি দিয়ে ভরাট থাকে! কয়েক দিন আগে নদের জমি ভরাট করে এখনো ভবন নির্মাণ করছে! দখলদারদের কারণে নদের সৌন্দর্য কেউ দেখতে পারছে না। এরা দুই পাশ থেকে ভরাট করতে করতে জীবন্ত একটা নদকে মেরে ফেলেছে। এটা চলতে দেওয়া যায় না।’

রাজধানীর গাবতলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা এসে তুরাগ নাম নিয়ে চলে গেছে গাজীপুর পর্যন্ত। এই নদকে কেন্দ্র করেই মিরপুর, আশুলিয়া, সাভার ও গাজীপুর অঞ্চলে গড়ে উঠেছে অসংখ্য জনপদ। তবে কালের বিবর্তনে এক সময়ের ¯্রােতস্বিনী এই নদ এখন মৃতপ্রায়। মিল-কারখানার আবর্জনা বুকে ধারণ করে নষ্ট হয়ে গেছে এর পানিও। সেই সুযোগে নদর দুই তীরকে ভরাট করে বসতি নির্মাণ করেছে দখলদাররা।

তবে তুরাগ তীরের উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর বেশ কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, পৈতৃকভিটা থেকে তাদের সরিয়ে দিচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ। তাদের অভিযোগ, আমরা ব্রিটিশদের সময় থেকে এখানে বসবাস করছি। যে জমিতে আমরা আছি, সেই জমির জন্য নিয়মিত খাজনাও পরিশোধ করছি। তারপরও বিনা নোটিশে আমাদের এখান থেকে তুলে দিচ্ছে তারা। এমনকি কোনো ক্ষতিপূরণও দেয়নি। আমরা এখন কোথায় যাব? রাস্তায় বসা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। এ সময় নিজেদের দাবির পক্ষে জমির দলিলসহ বিভিন্ন কাগজপত্রও দেখান অভিযোগকারীরা।

এদিকে, ২০০০ সালের জলাধার সংরক্ষণ আইনে নদ তীরের প্রাকৃতিক জলাশয় বা নিম্নভূমি ভরাট করাকে আইনত দ-নীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। রাখা হয়েছে এক থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধানও। এই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই গাবতলী এলাকার জোহরাবাদ, বড়বাজার, পালপাড়া, আমিনবাজার থেকে দিয়াবাড়ি আশুলিয়া পর্যন্ত নদের মাঝ পর্যন্ত দখল করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close