আব্দুল আলীম, নারায়ণগঞ্জ

  ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯

শিল্প-কারখানার বর্জ্য

শীতলক্ষ্যায় বাড়ছে দূষণ

নারায়ণগঞ্জে বিবর্ণ হয়ে পড়েছে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি। দূষণের কবলে পড়ে বহু আগেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়েছে এ নদীর পানি। কুচকুচে কালো রং আর ঝাঝালো দুর্গন্ধে পানি ব্যবহার তো দূরের কথা শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে চলাচল করাই এখন দুরূহ ব্যাপার। যদিও এই পানি অবলম্বন করে এখানকার বাসিন্দাদের চলে জীবন-জীবিকা।

একসময় এ এলাকার বাসিন্দারা পান করত এ নদীর পানি। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। খাওয়া তো দূরের কথা বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি স্পর্শও করা যায় না। নদীপথে চলাচলের সময় নাকে রুমাল চেপে রাখতে হয়। এলাকাবাসীর দুঃখ, নদীর পচা পানি। নদীতে এখন মাছ নেই। বেড়েছে মশার উপদ্রব। কমে গেছে ফসলের উৎপাদন। সংকট দেখা দিয়েছে খাবার পানির। বেড়েছে রোগবালাই। পচা পানির কটূ গন্ধে তীরবর্তী মানুষের দুর্ভোগও বেড়েছে। বিপন্ন হয়ে গেছে পরিবেশ। বিপর্যস্ত মানুষের জীবন। দূষণের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে নদী দখলের প্রতিযোগিতাও চলছে।

নারায়ণগঞ্জের চর সৈয়দপুর থেকে নরসিংদীর পলাশ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক নালা, ড্রেন ও খাল দিয়ে বিভিন্ন শিল্প-কারখানার বর্জ্য মিশ্রিত পানি এসে মিশছে শীতলক্ষ্যায়। রাজধানীর শ্যামপুর, পাগলা, নয়ামাটি, সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল, শিমরাইল, আরামবাগ, ডেমরা, কোনাপাড়া, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচ হাজারের বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত ডাইং বর্জ্য, কেমিক্যাল বর্জ্য, পলিথিন, পয়ঃনিষ্কাশন বর্জ্যসহ নানা ধরনের বর্জ মিশ্রিত পানি ও ময়লা-আবর্জনা বিভিন্ন খাল, ক্যানেল ও ড্রেনের মাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছে শীতলক্ষ্যায়। এসব বর্জ্য মিশ্রিত পানি গড়িয়ে এসে কোনো রকম শোধন ছাড়াই সরাসরি মিশছে শীতলক্ষ্যায়। যার কারণে নারায়ণগঞ্জের সব খাল বিল ও নালার পানি দূষিত হয়ে পড়েছে।

পরিবেশ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন শুধু অপরিশোধিত ১৫ কোটি লিটার ইন্ডাস্ট্রিয়াল বর্জ্য বিভিন্ন খাল-বিল দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে এসে মিশছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের পয়ঃনিষ্কাশন ও গৃহস্থালি বর্জ্য, পলিথিন, বাজারের উচ্ছিষ্ট অংশ, হোটেল রেস্তোরাঁর বর্জ্যসহ আরো কয়েক কোটি লিটার বর্জ্য এসে পড়ছে শীতলক্ষ্যায়।

শীতলক্ষ্যা নদীতে ডিও মেনাস ডিজলভ অক্সিজেনের পরিমাণ থাকার কথা ৪ থেকে ৬ মিলিগ্রাম প্রতি লিটার। কিন্তু বর্তমানে আছে মাত্র ১ থেকে ২ মিলিগ্রাম প্রতি লিটার। নদীর পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় নদীতে জলজপ্রাণী বা মাছসহ কোনো প্রাণী টিকতে পারছে না।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (পবা) নারায়ণগঞ্জ শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট এবি সিদ্দিক জানান, পরিবেশ দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নামমাত্র জরিমানা করেই দায়িত্ব শেষ করছেন পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। কিন্তু তারা পরিবেশ দূষণ বন্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেয় না। বছরের পর বছর নোটিস দেওয়ার পর যেসব প্রতিষ্ঠান এখনো ইটিপি প্লান্ট নির্মাণ করেনি, তাদের কারখানা বন্ধ ও সিলগালা করেনি।

শীতলক্ষ্যা নদী পার হয়ে প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জে আসেন আব্দুল জব্বার। তিনি জানান, নদীর পানি এতটাই বিষাক্ত এবং দুর্গন্ধ যে, নাকে রুমাল চেপে নদী পারাপার হতে হয়। নদীর পানি যতই কমছে, ততই বাড়ছে দূষণের মাত্রা। এলাকাবাসীর অভিযোগ বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই খরচের কারণে ইটিপি চালায় না। রাতের আঁধারে এসব কেমিক্যাল বর্জ্য মিশ্রিত পানি ছেড়ে দেয় খাল-বিলে।

নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক নয়ন মিয়া জানান, নারায়ণগঞ্জে তরল বজ্য নির্গমনকারী ৩১৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ইটিপি প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু তারা রাতের বেলায় অপরিশোধিত পানি সরাসরি নদী বা খালে ছেড়ে দেয়। জনবল সংকটের কারণে তাদরে মিনিটরিং করা যাচ্ছে না। শুষ্ক মৌমুসে নদীতে দূষণ বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া বলেন, শীতলক্ষ্যাসহ নদী দূষণের কারণগুলো চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close