মো. শাহ আলম, খুলনা
খুলনায় ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি থামছে না
৫৮০ কিলোমিটার সড়ক বেহাল
খুলনা মহানগরীতে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি থামছে না। পানির পাইপ লাইন স্থাপন এবং বাসা-বাড়ির সংযোগ দিতেই চলছে খোঁড়াখুঁড়ির যত আয়োজন। একটি সড়ক খোঁড়ার পর যেনতেনভাবে সেটি রেখে আবারও নতুন করে খোঁড়া হচ্ছে অন্য সড়ক। ইতোমধ্যেই ৫৮০ কিলোমিটার সড়ক বেহাল অবস্থায় রয়েছে। আর এভাবেই চলছে বিড়ম্বনার নগরজীবন।
বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা এবং ওয়াসার পাইপ লাইন বসাতে খোঁড়াখুঁড়ি, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে নগরীর অধিকাংশ সড়কের বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সড়কগুলোতে খানাখন্দ ও ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচল মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মহানগরীর ৬৪০ কিলোমিটার সড়কে ৫৮০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। এতে নগরবাসী চরম জনদুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এই দুরবস্থা থেকে নগরবাসী কবে মুক্তি পাবে তাও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। ওয়াসার বাসা-বাড়িতে সংযোগ দিতে দুই ফুট বাই তিনফুটের মতো গর্ত খোঁড়া হচ্ছে। ওয়াসার পুরনো সংযোগ রয়েছে ১৯ হাজারের মতো। এছাড়া আরো ২৬ হাজার মিলে ৪৫ হাজার গর্ত খোঁড়া হবে। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
জানা গেছে, মহানগরীতে খুলনা সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত ছোট বড় সড়ক রয়েছে এক হাজার ২১৫টি। সড়কগুলোর মোট দৈর্ঘ্য ৬৪০ কিলোমিটার। এর মধ্যে আড়াই শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যার দৈর্ঘ্য প্রায় ২০০ কিলোমিটার। এছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের একাধিক সড়ক রয়েছে। প্রধান সড়কসহ অনেকগুলো সড়কে ওয়াসার পানির লাইনের পাইপ বসানোর জন্য ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আছে। যেখানে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি হয়নি এমন সড়কগুলো বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে নগরীর এমন কোনো সড়ক নেই, যেখানে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়নি। ইট-খোয়া সরে গিয়ে সড়কগুলোতে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সে সকল গর্তের বেশিরভাগ মেরামত করা হয়নি। আবারও বর্ষা মৌসুম সামনে এ অবস্থায় এ সকল জরাজীর্ণ সড়ক সংস্কার করা না হলে দুর্ভোগের অন্ত থাকবে না নগরবাসীর।
কেসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী-২ মো. লিয়াকত আলী খান বলেন, নগরীর সড়কের এই বেহাল দশা নিয়ে সম্প্রতি প্রকৌশলীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মেয়র। বৈঠকে দ্রুত সড়কগুলো মেরামতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি গত বছর ১ আগস্ট সড়কের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন সিটি মেয়র।
খুলনা সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান মনি বলেন, ওয়াসা এমওইউ- মেমোরেন্ডাম অব আনআরস্ট্যান্ডিং অনুয়ায়ী, কাজ করছে না। কর্তৃপক্ষকে বার বার বলা সত্ত্বেও তারা কোনো গুরুত্ব না দেওয়ায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, মুখ্যসচিব, ওয়াসা বোর্ডকে বিষয়টি অবহিত করে কেসিসির পক্ষ থেকে দাফতরিক পত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। বর্তমানে বাসা-বাড়িতে ওয়াসার সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এই সংযোগ দিতে বড় বড় গর্ত খোঁড়া হচ্ছে। এতে করে নগরীর অলিগলির সড়কগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে। সামনে বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীর দুর্ভোগের অন্ত থাকবে না। নগরীর সড়কগুলোর কিছু অংশের পিচ মেশিন দিয়ে কেটে ওয়াসার পাইপ বসানো হয়েছে। ওই সকল স্থান ওয়াসা মেরামত করে দেওয়ার কথা রয়েছে। ওয়াসার কাজ শেষ না হলে পিচ দিয়ে মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না বলে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
খুলনা ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী এম ডি কামাল উদ্দিন আহমেদ ওয়াসার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ও নগরবাসীর সাময়িক দুর্ভোগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের কিছু অংশ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে মেরামত করে দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের একটি প্লান্ট ব্যবহার করে তাদের প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে সড়ক সংস্কার করা হচ্ছে। কিছু সড়ক চলাচল উপযোগী করার জন্য ইতোমধ্যে কার্পেটিং করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের সড়ক যেখানে যে অবস্থায় ছিল সেখানে সে অবস্থায় মেরামত করে দেওয়া হচ্ছে।
"