মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট

  ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

জন্মনিয়ন্ত্রণে পিছিয়ে সিলেট

৫২ শতাংশ দম্পতির জন্মনিয়ন্ত্রণে অনীহা : প্রজনন হার ২ দশমিক ৯

সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার গৃহিণী আকলিমা আক্তার। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় গত শুক্রবার ভর্তি হন সিলেট নগরীর বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা পরিচালিত একটি হাসপাতালে। গত শনিবার ওই হাসপাতালে ফুটফুটে এক পুত্রসন্তান প্রসব করেন তিনি। আকলিমার আরো তিন সন্তান রয়েছে। দুজন মেয়ে ও একজন ছেলে। তিন সন্তানের পরও আবার সন্তান নেওয়া প্রসঙ্গে আকলিমা বলেন ‘স্বামীর ইচ্ছা’। জানালেন, তার স্বামী আবদুস সোবহান কুয়েতে থাকেন। দুই-তিন বছর পর দেশে আসেন মাসখানেকের জন্য। তিনি অধিক সন্তান নিতে আগ্রহী। জন্মনিয়ন্ত্রণে কোনো পদ্ধতি ব্যবহারেও আপত্তি তার। শুধু আবদুস সোবহান নন, সিলেটের অনেকেই পরিবার পরিকল্পনায় আগ্রহী নন। জন্মনিয়ন্ত্রণের কোনো পদ্ধতিও ব্যবহার করেন না তারা। প্রবাসী আধিক্য, ধর্মীয় গোড়ামি, দারিদ্র্য, হাওরাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে পরিবার পরিকল্পনায় দেশের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে সিলেট। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘পরিবার পরিকল্পনা ও মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচি’ পুস্তিকার তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে প্রজনন হার বা নারীপ্রতি সন্তান জন্ম (টিএফআর) ২ দশমিক ৩ জন। অথচ সিলেটে তা ২ দশমিক ৯ জন। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারেও পিছিয়ে সিলেটের দম্পতিরা। বর্তমানে দেশে গড়ে ৬২ দশমিক ৪ ভাগ দম্পতি পদ্ধতি ব্যবহার করেন। কিন্তু সিলেটে তা ৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ সিলেটের ৫২ ভাগ দম্পতিই জন্মনিয়ন্ত্রণে কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করেন না।

কেন পিছিয়ে সিলেট? প্রশ্নে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর সিলেটের বিভাগীয় পরিচালক কুতুব আহমদ জানালেন, পিছিয়ে থাকার প্রধান কারণ প্রবাসীরা। তিনি বলেন, ‘সিলেটের ৯ শতাংশ লোক প্রবাসে থাকেন। তারা কখন দেশে আসেন-কখন চলে যান সে খবর আমরা জানি না। ফলে তাদের কাছে আমাদের বার্তা পৌঁছানো যায় না। এসব প্রবাসী পরিবারে জন্ম হার অনেক বেশি।

কুতুব উদ্দিন বলেন, সারা দেশের চেয়ে সিলেটে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমও পরে শুরু হয়েছে। দেশের সব জায়গায় যেখানে ১৯৭৭ সালে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম শুরু হয়েছে সেখানে সিলেটে এ কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭৯ সালে। এছাড়া প্রথম দিকে এই কার্যক্রমে সিলেটে বেশ বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। আর চা বাগান ও হাওরাঞ্চলের কারণেও আমাদের কার্যক্রমে সমস্যা হয়। দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে হাওর এলাকায় সব সবসময় যাওয়া যায় না। চা শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা। এসব কারণে আমরা কিছুটা পিছিয়ে আছি। তবে আমরা দ্রুত এগিয়ে চলছি।

স্বাস্থ্যকর্মী রওশনারা মনির রুনা বলেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে দম্পতিদের আগ্রহী করে তুলতে ধর্মীয় গোড়ামিই সবচেয়ে বড় বাধা। এখনও সিলেটে কিছু এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা পরিবার পরিকল্পনার বার্তা দিয়ে যেতে পারে না। পদ্ধতি ব্যবহারের কথা বলতে পারে না। এগুলোকে ধর্মবিরোধী কাজ বলে অপব্যাখ্যা দেন গ্রামের মুরব্বি ও ধর্মীয় নেতারা। এজন্য ব্যাপক প্রচারণার প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

সিলেট সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে সিলেটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও ভোলাগঞ্জ উপজেলা। প্রত্যন্ত এসব উপজেলায় জন্ম হারও বেশি।

সিলেট সমাজকল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বেলাল আহমদ বলেন, জন্মনিয়ন্ত্রণে সরকারের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম আগের চেয়ে এখন অনেক স্তিমিত হয়ে পড়েছে। সরকারি বরাদ্দ কমে গেছে। ফলে আগে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে যে গতিশীলতা ছিল তা এখন নেই। এছাড়া এক্ষেত্রে জনবলের অভাবও রয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষকে আগ্রহী করে তোলার জন্য পর্যাপ্ত মাঠকর্মী নেই। সিলেটের ১৮ শতাংশ দম্পতির কাছে পরিবার পরিকল্পনার বার্তা এখনো পৌঁছানো হয়নি বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, সারা দেশে পরিবার পরিকল্পনায় অগ্রগতির কারণে সরকার হয়তো এই ইস্যুতে আগের মতো সোচ্ছার নয় কিন্তু সিলেট যেহেতু পিছিয়ে রয়েছে তাই এলাকার জন্য বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন। তবে সিলেটের সিভিল সার্জন মনে করেন, আগের অবস্থান থেকে সিলেট এখন অনেক এগিয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist