ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রথম চ্যালেঞ্জ জিততে চান নয়া কোচ
শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ইনডোরের বাইরের নেটে লম্বা সময় একাই বোলিং করলেন হাসান মুরাদ। কিছুক্ষণ পর আরেক নেটে লিটন কুমার দাসকে বোলিং করতে চলে গেলেন তিনি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে হয়তো এ দিন জাতীয় ক্রিকেট লিগে ব্যস্ত থাকার কথা ছিল তরুণ বাঁহাতি স্পিনারের। অথচ তিনি এখন এখানে। কারণ, সাকিব আল হাসান যে নেই!
তবে সাকিব না থাকলেও তাকে নিয়ে আলোচনা মোটেও থেমে নেই। মিরপুরে স্টেডিয়ামের বাইরে প্রায় প্রতিদিনই চলছে পক্ষে-বিপক্ষে নানা কর্মসূচি, মিছিল-স্লোগান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ দুয়ারে দাঁড়িয়ে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন যে ক্রিকেটীয় আলোচনায় ক্রিকেটই নেই। বাংলাদেশের নতুন কোচ ফিল সিমন্সের প্রথম চ্যালেঞ্জ এখন এখানেই। মাঠের বাইরের সবকিছুকে দূরে ঠেলে ক্রিকেটে মনোযোগী রাখতে হবে দলকে।
মাঠের বাইরের নানা ঘটনাপ্রবাহের অংশ সিমন্সের কোচ হয়ে আসাও। গত মঙ্গলবার আচমকাই চান্দিকা হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করে নাটকীয়ভাবে কোচ হিসেবে ঘোষণা করা হয় সিমন্সের নাম। পরদিন সকালে তিনি ঢাকায় চলেও আসেন ক্যারিবিয়ান এই কোচ। হাথুরুসিংহের অবশ্য বিসিবির সব অভিযোগ উড়িয়ে বলেছেন, সত্যের জয় হবেই। সব মিলিয়ে মাঠের বাইরে এত কিছু হচ্ছে যে, কোচ হিসেবে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এসবের মুখোমুখি হতেই হতো সিমন্সকে। সব ছাপিয়ে ক্রিকেটকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বললেন কোচ। দলের সামনে দারুণ এক হাতছানিও তিনি মনে করিয়ে দিলেন।
‘ভালো বিষয় হলো, আমাদের সামনে খুব গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট ম্যাচ। আমরা যদি পরবর্তী কিছু ম্যাচ জিততে পারি, (টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের) ফাইনালের লড়াইয়ে চলে আসতে পারি। আমার অগ্রাধিকার সবসময় ক্রিকেট এবং সোমবারের (প্রথম টেস্টের প্রথম দিন) জন্য দলকে তৈরি করার দিকে। গত দুই দিন ছিল দারুণ। ছেলেরা কঠোর পরিশ্রম করেছে। ক্রিকেটকে ঘিরে যত সংশয় ছিল, সেগুলো সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। মনোযোগ ধরে রেখে সোমবারের জন্য প্রস্তুত হওয়ার চেষ্টা করছি।’
ফাইনালের স্বপ্ন অবশ্য একটু বাড়াবাড়িই মনে হতে পারে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে এখন পর্যন্ত আট ম্যাচে তিন জয়ে ৩৪.৩৮ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে সাত নম্বরে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর বাকি শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচ। এই চার ম্যাচের সবকটি ফল নিজেদের পক্ষে আনতে পারলে, অন্য দলগুলোর অবস্থার ভিত্তিতে ফাইনালের লড়াইয়ে থাকতে পারে বাংলাদেশ।
তেমন কিছু করতে হলে মাঠের ক্রিকেটে মনোযোগ ধরে রাখার মূল কাজটা করতে হবে ক্রিকেটারদের। কিন্তু ভরাডুবিময় ভারত সফরের পর আরেক সিরিজের আগে প্রধান কোচ পরিবর্তন ও দলের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার সাকিবের দেশে আশা নিয়ে নাটক মিলিয়ে ক্রিকেটারদের জন্য মনোযোগ ঠিক রাখার কাজটি সহজ নয়। সিমন্স নিজেও মানছেন এটি। টেস্ট শুরুর আগের সময়টায় দলের প্রস্তুতিতে এখানেই জোর দিচ্ছেন কোচ।
‘এটি (বাইরের ঘটনায় মনোযোগ হারানো) বড় ভাবনার বিষয়। সামনের কয়েক দিনে এটিই আমাদের কাজের বড় একটা অংশ হবে, (ক্রিকেটাররা) যাতে ক্রিকেটের বাইরের কিছু নিয়ে চিন্তা না করে, মাঠের ক্রিকেটে সব মনোযোগ থাকে। আমরা কেবল সেসব নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, যা আমাদের হাতে আছে। সোমবারের জন্য কীভাবে প্রস্তুত হব, আমরা নিয়ন্ত্রণ তা করতে পারি। এভাবেই দলের মনোযোগ ঠিক রাখার চেষ্টা করছি।’
বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে কোচদের বিদায় সাধারণত সুখকর হয় না খুব একটা। হাথুরুসিংহের আগে রাসেল ডোমিঙ্গো এবং স্টিভ রোডসের বিদায়টাও স্বাভাবিক ছিল না। আগেও নানা সময়ে দেখা গেছে একই চিত্র। সেই বাস্তবতা জেনেই চ্যালেঞ্জটি নিতে এসেছেন সিমন্স। উপভোগের মন্ত্রে দলকে সাফল্য এনে দেওয়ার আশা তার।
‘যে কোনো আন্তর্জাতিক দলের কোচের চাকরিই ‘হট সিট।’ আপনি বলতে পারেন, বাংলাদেশ ভিন্ন বা পাকিস্তান ভিন্ন। তবে আমার কাছে বিষয়টা হলো ক্রিকেটারদের তৈরি করা, সব কিছু উপভোগ করা এবং ম্যাচ জেতা। এই মুহূর্তে আর কিছু নিয়ে ভাবছি না। গত দুই দিন সব কিছু খুব ভালো গেছে।’
‘দুই দিনেই আমি বলতে পারব না, কতটা কঠিন। খুব বেশি দিন হয়নি যে তরুণ ক্রিকেটাররা পারফর্ম করেছে। পাকিস্তানে গিয়ে জেতা সহজ কাজ নয়। হ্যাঁ তরুণ ক্রিকেটারদের উন্নতির কাজটা কঠিন, সব জায়গায়ই কঠিন। তবে তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি যা বুঝতে পেরেছি, তাদের মধ্যে সেই আকাঙ্ক্ষাটা আছে।’
"