ক্রীড়া প্রতিবেদক
সিরিজ হারল বাংলাদেশ
সিরিজটি যেন বাংলাদেশকে হিসাব-নিকাশ বুঝিয়ে দেওয়ার পালা হিসেবেই নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগের ম্যাচটি জিতে টানা ১১ ম্যাচের পরাজয়ের ধারা থামাতে পেরেছিল তারা। সেই জয়ে উজ্জীবিত ক্যারিবিয়ানরা এবার ব্যাটে-বলে আরো দাপুটে পারফরম্যান্সে আদায় করে নিল আরেকটি জয়। তাতে অবসান হলো তাদের দীর্ঘ এক অপেক্ষার। পরশু রাতে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে উড়িয়ে এক ম্যাচ বাকি রেখেই সিরিজ জিতে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এটির আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্যারিবিয়ানদের সবশেষ সিরিজে জয়টি ছিল ২০১০ সালে। গত ৬ বছরে টানা ৪টি সিরিজে জয়ের পর এবার হার মানতে হলো বাংলাদেশকে। সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে এ ম্যাচটি ছিল আগের উইকেটেই। তবে আগের দিনের ব্যাটিংটা করতে পারেনি বাংলাদেশ। গুটিয়ে যায় তারা কেবল ২২৭ রানেই।
একটা সময় অবশ্য এ রানকেও মনে হচ্ছিল অভাবনীয়। ৭ উইকেট হারায় তারা ১১৫ রানে। সেখান থকে মাহমুদউল্লাহ ও তানজিম হাসান বিপর্যয় কাটান রেকর্ড জুটিতে। তাতে ম্যাচ কিছুটা দীর্ঘায়িত হয়েছে বটে, এছাড়া লাভ খুব বেশি হয়নি। রান তাড়ায় তেমন কোনো কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ৭৯ বল বাকি রেখেই ম্যাচ শেষ করে ক্যারিবিয়ানরা।ওয়ানডে ক্যারিয়ারের আগের ১৬ ম্যাচে যার উইকেট ছিল কেবল ৯টি, ম্যাচে ২ উইকেটের বেশি ছিল না যার, সেই জেডেন সিলস এখানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের হয়ে ম্যাচের শুরুতে তানজিদ হাসান চড়াও হন মার্কিনো মিন্ডলির ওপর। অভিষিক্ত পেসারের দ্বিতীয় ওভারে ২টি ছক্কা একটি ৪ মারেন বাঁহাতি ওপেনার। আরেক পাশে সিলস শুরু থেকেই ছিলেন ক্ষুরধার। তাকেই উইকেট উপহার দিয়ে ফেরেন সৌম্য সরকার। তিনে নেমে নড়বড় কয়েকটি ওভারের পর বাজে শটে উইকেট হারান লিটন কুমার দাস। চলতি বছর ৪ ওয়ানডেতে লিটনের রান ০, ০, ২ ও ৪। ফিফটি নেই সবশেষ ১২ ইনিংসে। একটু পর সিলসের বল ছাড়তে গিয়ে স্ট্যাম্পে টেনে আনেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দারুণ খেলতে থাকা তানজিদ ঠিক আগের ম্যাচের মতোই ক্যাচ তুলে দেন পয়েন্টে (৩৩ বল ৪৬)।
আফিফ হোসেন ও মাহমুদউল্লাহ এরপর জুটি গড়ে তোলার আভাস দেন। কিন্তু জুটি ৩৬ রানে থামার পর আরো ২টি উইকেট পড়ে যায় ঝটপট।
আশা জাগানিয়া শুরুর পর পরিস্থিতির তোয়াক্কা না করে দায়িত্বজ্ঞানহীন শটে উইকেট বিলিয়ে দেন আফিফ (২৯ বলে ২৪)। এ উইকেটের পর জাকের আলিকে শুরুতেই থামান গুডাকেশ মোটি। মার্কিনো মিন্ডলির প্রথম শিকারে পরিণত হন রিশাদ। বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে তখন রান ৭ উইকেটে ১১৫, ড্রেসিং রুমে শঙ্কার ভিড়। তানজিম ক্রিজে গিয়েই এমন খেলতে শুরু করেন যে, মাহমুদউল্লাহও গাঝাড়া দিয়ে ওঠেন। তাদের ব্যাটিং দেখে বোঝার উপায় ছিল না, কত বড় সংকটে ছিল দল। তানজিম আগেও ব্যাটিং প্রতিভার নমুনা কিছু দেখিয়েছেন। এবার এ ম্যাচের ব্যাটিংয়ে ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন ভবিষ্যতে অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার রসদ তার ভেতরে আছে। এ দুজনের ব্যাটেই দলের রান দেড়শ’ পেরিয়ে দুশ’ ছাড়িয়ে যায়। দুজনের জুটিতে গড়া হয় রেকর্ড। প্রথম ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়ে তানজিম বিদায় নেন ৪৫ রানে। ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বস্তি ফেরান রোস্টন চেইস। ৯২ রানে থামে জুটি, অষ্টম উইকেটে যা বাংলাদেশের রেকর্ড। আগের সেরা ৮৪ ছিল মোহাম্মদ মিঠুন ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের। তানজিমের বিদায়ের পরের ওভারেই আউট হয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। ৯২ বলে ৬২ রানের ইনিংসে ৪টি ছক্কা মারেন তিনি। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে ছক্কার রেকর্ডে এখন যৌথভাবে শীর্ষে মাহমদুউল্লাহ ও তামিম ইকবাল (১০৩টি)।
এ পুঁজি নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আটকানো এমনিতেই কঠিন ছিল বাংলাদেশের জন্য। তারপরও উত্তেজনা কিছুটা থেকে থাকলে উদ্বোধনী জুটিতেই তা শেষ করে দেন ব্র্যান্ডন কিং ও এভিন লুইস। দলকে শতরানের শুরু এনে দেন দুজন। লুইস ২৮ রানে একবার ক্যাচ দিয়েছিলন, নিতে পারেননি সৌম্য সরকার। পরে লুইসের বিদায়েই ভাঙে ১০৯ রানের জুটি। ২টি ৪ ও চার-ছক্কায় ৪৯ করে ফেরেন লুইস।
তাসকিন আহমেদকে বিশ্রাম দিয়ে এদিন শরিফুল ইসলামকে খেলায় বাংলাদেশ। কিন্তু তিনি বা অন্য কেউ পারেননি বলার মতো কিছু করতে। লুইসের বিদায়ের পর কিং আরেকটি কার্যকর জুটি গড়েন কেসি কার্টির সঙ্গে। জুটিতে ৬৬ রান আসে ৪৮ বলে।
কিংয়ের সামনে ছিল শতরানের হাতছানি। তবে দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা নাহিদ রানার দুর্দান্ত এক ইয়র্কার তাকে থামায় ৭৬ বলে ৮২ রান করে। শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেননি কার্টিও। ৭ চারে ৪৫ করে আউট হয়ে যান তিনি। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় নিয়ে সংশয় জাগেনি একটুও। আগের ম্যাচে জয়ের দুই নায়ক শেই হোপ ও শেরফেইন রাদারফোর্ডের হাত ধরে শেষ হয় ম্যাচ। আজ সেন্ট কিটসেই হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৪৫.৫ ওভারে ২২৭/১০
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৩৬.৫ ওভারে ২৩০/৩
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : ৩ ম্যাচের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-০তে এগিয়ে।
ম্যাচসেরা : জেডেন সিলস।
"