এস আর শানু খান

  ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৭

বোকা কুকুর ও চালাক হনুমান

নিঝুমপুর। গুটি কয়েক ঘর, মানুষের বসবাস। গ্রামটির জন্ম বেশি দিনের নয়। বন্যাকবলিত হয়েই নিজেদের এলাকা ত্যাগ করে এখানে এসে বসবাস শুরু করেছিল এই নিঝুমপুরে। তখন এই নিঝুমপুরের অবস্থা ঠিক এই রকম ছিল না যেমন এখন দেখা যায়। নানা সব পুরানো গাছগাছালি দিয়ে আচ্ছাদিত ছিল গোটা অঞ্চল। আস্তে আস্তে মানুষ বেড়েছে। মানুষ বাড়ার সাথে সাথে বাগানে ভাব কিছুটা কাটলেও গাছ-গাছালি রয়েছে প্রচুর। তাইতো মাঝে মাঝে এই গ্রামে বন থেকে ছুটে আসে নানা পশু-পাখি। গ্রামের ছেলেপুলেরা সেগুলোর পিছু লাগে। শুধু যে ছেলেপুলে সেটাও কিন্তু একদম সঠিক নয়। কথায় আছে নাহ! আপন গাঁয়ে কুকুর রাজা। ঠিক যেন তাই। নিঝুমপুর গ্রামে হঠাৎ একদিন একটা হনুমানের আবির্ভাব ঘটল। সারা গ্রামে সাড়া পড়ে গেল। সারা নিঝুমপুরের ছেলে-বুড়ো সবাই সে হনুমানের পিছু নিলো। শুধু মানুষ নয় মানুষের সাথে তাল মিলিয়ে হনুমানকে তাড়া দিতে লাগল গ্রামের সব কুকুরও। ঘেউ ঘেউ করতে করতে হনুমানের দিকে ছুটতে লাগল। হনুমান এ-গাছ থেকে ও-গাছ তলায় গিয়ে আশ্রয় খুঁজতে লাগল। খানেক বাদে গ্রামের ছেলে বুড়োরা নাজেহাল হয়ে ক্লান্ত হয়ে হনুমানের পিছু ছাড়লেও পিছু ছাড়ল না নাছোড়বান্দা কুকুর। এক কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে মুহূর্তের মধ্যে এসে হাজির হলো নিঝুমপুরসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের সব কুকুর। অসহায় হনুমানের ভেতর জীবনের সংশয় এসে গেল। হনুমান চোরের মতো এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে লুকানোর ফর্মুলা আঁটছিল। কিন্তু কোনো কিছুতেই নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারছিল না। অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে হনুমান মাঠ কোনাকোনি ভোঁ দৌড় দিল। কিন্তু তাতেও কোনো ফল নেই। হনুমানের থেকেও এ গ্রামের রাস্তাঘাট গেঁয়ো কুকুরের ছিল বেশি চেনাজানা, মুখস্থ। হনুমানের পিছন পিছন ধাওয়া করল সব কুকুরও। খানেকটা চোখ-কান বন্ধ করে দৌড়ানোর পর হনুমান মনে মনে ভাবে, এই বুঝি কুকুররা আর পিছনে নেই। কিন্তু পেছনে ফিরেই জান বাঁচানোর জন্য দৌড়ের গতি আরো বাড়াতে বাধ্য হলো হনুমান। দৌড়াতে দৌড়াতে এক সময় আর পেরে উঠছিল না হনুমান। সেই কবে বন থেকে বের হয়েছে। তার পর থেকে আর ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া নেই। যেখানে যায় সেখানেই এমন না হলেও ভালো ব্যবহার জোটে না হনুমানের কপালে। কেউ একটা কলা দেয় তো বাকি তিনজনে পিছু নেয়। বিরক্ত করে। নানা রকম টিটকিরি করে। ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীরে আর চলা সম্ভব নয়। অবশেষে হনুমানের মনে একটা আশার প্রদীপ জ্বলে উঠল। ফাঁকা মাঠের ঠিক মাঝখানে একটা বড় বটগাছ। হনুমান মনে মনে কল্পনা করল, বলে কয়ে ওই বটগাছের তলা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলেই এক লাফে গাছের মাথায় উঠে বসে থাকব। কিন্তু মনে ভয়ও আছে তখনও। মনে হচ্ছে আর বুঝি পারলাম না। পেছনে কুকুরের পায়ের আওয়াজ শোনা যায়। খানেকটা দৌড়ায় আবার সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে বটগাছ আর কত দূর!! আবার পিছনে ফিরে দেখে কুকুররা কত দূর!! দৌড়ের গতি বাড়ায়। যাকে বলে মরণ দৌড়। কথায় আছে না, তালগাছের আড়াই হাত। তার এক বাস্তবতা পোহাচ্ছে বোকা হনুমান। অবশেষে বহু কষ্টে গিয়ে পৌঁছল বটগাছের তলায়। এক লাফে উঠে গেল বটগাছে। গিয়ে দাঁড়াল বটগাছের একদম মগডালে। উপরের দিক তাকিয়ে একটা বড় হাই ছাড়ল হনুমান। ওদিকে গাছে উঠতে অক্ষম কুকুররা বটগাছের নিচে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে ডাকাডাকি করতে লাগল। অসাড়ের তর্জনগর্জন সার। কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়ার পর হনুমান চাঙ্গা হয়ে উঠল। কুকুরদের বোকা বানানোর জন্য মাঝে মাঝে গাছের একদম নিচের ডালে এসে লম্বা লেজ ঝুলিয়ে কুকুরদের ডাকাডাকির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়ে আবার উপরে গিয়ে বসতে লাগল। সকাল ডিঙ্গিয়ে দুপুর হয়ে যায়, কিন্তু বটগাছের তলা থেকে কুকুর আর যায় না। হমুমানও নিরুপায়। নিচের দিকে তাকিয়ে ভয়ে শিউরে ওঠে। কম করে হলেও ১০-১২টি কুকুর। অবশেষে দুপুর পার হলে টুকটাক করে একটি-দুটি করে কুকুররা সব চলে যেতে লাগল। বোধহয় পেটে টান ধরেছে। কিন্তু হনুমান নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে গাছের একদম শিকড়ের ওপর বসে আছে একটা বড় মাপের কুকুর। ভয়ে হনুমান গাছ থেকে নামার সাহস পায় না। ধৈর্য ধরতে ধরতে এক সময় জানের ঝুঁকি নিয়েই নিচের দিকে নেমে আসে হনুমান। নিচে নেমে এসে দেখে গাছতলায় শিকড়ের ওপর মাথা দিয়ে নাকডেকে মনের সুখে ঘুমাচ্ছে এক ফেদো কুকুর। শরীরের হাড়গুলো ওর গোনা যাচ্ছে। দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, বড্ড অবহেলিত কুকুরটি। কত দিন কিছু খায় না সেই জানে। সামান্য দৌড়িয়েই ক্লান্ত হয়ে ঘুমের কোলে ঢুলে পড়েছে বেচারা। শরীরের এমন হাল ও শান্তির ঘুম দেখে প্রথমে হনুমানের মায়ার উদ্রেক হলেও তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা মনে হতেই প্রতিশোধের নেশায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে হনুমান। মেজাজ চরম গরম হয়ে ওঠে তার। টুক করে ঘুমন্ত কুকুরের লেজটা ধরে একে দৌড়ে চলে যায় বটগাছের মগ ডালে। মগ ডালে বসে কুকুরের লেজ ধরে কয়েক ঝাঁকি মেরে ঠাস করে ছেড়ে দেয় হনুমান। চোখের পলকে ঘুমন্ত কুকুর গাছের নিচে মাটিতে পড়ে ঘ্যাক করে ওঠে এবং ঘুমের ঘোরে কুকুরও ঠিক বুঝে উঠতে পারে না আসলে কী হলো তার সাথে। এমন সময় লাফ মেরে গাছ থেকে নেমে চোখ মিটিমিটি করে তাকানো ফেদি কুকুরের মুখে ঠাস ঠাস করে গোটা কয়েক থাপ্পড় বসিয়ে দেয় হনুমান। কুকুরের আর বুঝতে বাকি থাকে না যে, এবার তার পালা এসেছে। হনুমানের বাতাস ঘুরে এখন তার গায়ে এসে লাগছে। জান নিয়ে ঘেউ ঘেউ করে মাঠের ফসল সমান করতে করতে দৌড়ে পালায়। আর ওদিকে হনুমান উঁকিঝুঁকি মেরে নিজের পেটে হাত বুলিয়ে খাদ্যের সন্ধানে রওনা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist