জিনিয়াস মাহমুদ

  ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

হাতি

অনেক দিন আগে এক জঙ্গলে একটি হাতি ছিল। হাতিটি ছিল খুবই মোটাতাজা এবং অনেক শক্তিশালী। জঙ্গল থেকে একটু দূরেই ছিল একটি পাহাড়। সেই পাহাড়ে অনেক কলাগাছ ছিল। সেখান থেকে হাতিটি রোজ রোজ কলাগাছ খেত। সে সব সময় ভালো-তাজা বড় কলাগাছগুলো খেত। তাও আবার একটি কলাগাছের চার ভাগের এক ভাগ খেয়ে বাকিটা ফেলে দিত। আর যেগুলো ছোট ছোট চারা সেগুলো শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে উপড়ে ফেলে দিত। এক দিন দুপুরবেলা। হাতিটির প্রচণ্ড খিদে পায়। সে ওই পাহাড়ের দিকে হাঁটতে থাকে। পরে পাহাড়ে গিয়েই বেশ কিছু কলাগাছ উপড়িয়ে খেতে শুরু করে। সে এগাছ ভেঙে একটু খায়, ওগাছ ভেঙে একটু খায়। এভাবে হাতিটি অনেকগুলো কলাগাছ নষ্ট করে ফেলে।

পাহাড়ের এক পাশে ছিল পিঁপড়ার বাসা। সেখানে অনেকগুলো পিঁপড়া একসঙ্গে থাকত। একটি পিঁপড়া লক্ষ করল হাতিটি প্রচুর কলাগাছ নষ্ট করছে; যা দেখে তার খুব খারাপ লাগল। তাই সে একপা দুপা করে হাতিটির দিকে এগিয়ে গেল। তারপর কাছে গিয়ে হাতিটিকে ডেকে বলল, হাতি ভাই, ও হাতি ভাই, তুমি এসব কী করছো! এত এত কলাগাছ নষ্ট করছো কেন? পিঁপড়ার কথা শুনে হাতিটি এদিক-সেদিক তাকায়। তার আশপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে সে ফিসফিস করে বলল, কে ডাকল আমাকে? কই, কাউকেই তো দেখতে পাচ্ছি না!

আমি পিঁপড়া। এই যে আমি। এই দিকে। এবার হাতিটি পিঁপড়াকে দেখতে পেল। আরে পিঁপড়া যে! তা কী যেন বলছিলে ভাই? বলছিলাম, এই যে তুমি এত কলাগাছ নষ্ট করছো। কলাগাছের চারাগুলো উপড়ে ফেলে দিচ্ছো। তাতে কি তোমার একটুও খারাপ লাগছে না? এভাবে কলাগাছ নষ্ট করতে থাকলে তো একসময় সব কলাগাছ শেষ হয়ে যাবে। তখন তুমি কী খাবে? তোমাকে তো তখন না খেয়ে থাকতে হবে। পিঁপড়ার কথা শুনে হাতিটি হাসতে হাসতে বলল, কী যে বলো না! এত কলাগাছ থাকতে আমি না খেয়ে থাকব কেন? এখানে তো আমাকে ছাড়া আর কোনো হাতি নেই। যেহেতু এখানে আমিই একমাত্র হাতি এবং আমিই একমাত্র কলাগাছ খাই; সেহেতু প্রতিদিন শতেক কলাগাছ নষ্ট করলেও কোনো সমস্যা নেই। তাতে কখনোই আমার খাবারের অভাব পড়বে না। আর কলাগাছের চারার কথা বলছো, আগে তো বড় গাছগুলো খেয়ে শেষ করি। তারপর না হয় ওগুলো নিয়ে ভাবা যাবে। এই বলে হাতিটি আবার কয়েকটা কলাগাছ ভেঙে এগাছ থেকে ওগাছ থেকে একটু একটু করে খেয়ে পেট ভরলে পরে বাকিটা শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে পাহাড় থেকে নিচে ফেলে দেয়। তারপর সে হাসতে হাসতে জঙ্গলে চলে যায়। কিছুদিন পর আবার এক দিন পিঁপড়ার সঙ্গে হাতিটির দেখা হয়। হাতিটি পিঁপড়াকে দেখেই সে বলে উঠল, কী খবর পিঁপড়া? কেমন দিনকাল যাচ্ছে?

পিঁপড়া বলল, এই তো বেশ ভালোই আছি ভাই। তা তুমি কেমন আছো শুনি? হ্যাঁ ভাই, আমিও খুব ভালো আছি। হাতি ভাই, তুমি কি এখনো আগের মতো কলাগাছ নষ্ট করো? হ্যাঁ, করি তো। দেখো ভাই, এভাবে আর কলাগাছগুলো নষ্ট করো না। একসময় তোমাকে পস্তাতে হবে। পিঁপড়ার কথা শুনে হাতিটি একটু রেগে গিয়ে বলল, এসব কথা ছাড়া তোমার মুখে কি আর কোনো কথা নেই নাকি! অ্যাঁ। যাও তো ভাই, অন্যের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজে কী খাবে না খাবে, তা নিয়ে ভাবো গিয়ে, যাও। আমি গেলাম। বলেই হাতিটি সেখান থেকে চলে যায়।

হাতিটি প্রতিদিন অকারণে অসংখ্য কলাগাছ নষ্ট করায় আর কলাগাছের চারাগুলো উপড়ে ফেলে দেওয়ায় একসময় পাহাড়ের সবগুলো কলাগাছই শেষ হয়ে যায়। তারপর হাতিটি কয়েক দিন লতাপাতা গাছের ছাল খেয়ে কোনো মতে দিন কাটায়। এরপর থেকেই তার অনাহারে দিন কাটতে শুরু করে। এভাবে কিছুদিন না খেয়ে থাকতে থাকতে ধীরে ধীরে হাতিটি দুর্বল হয়ে পড়ে। সে এখন আগের মতো হাঁটতে পারে না। হাঁটতে গেলে শরীর কাঁপে। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল, এ জঙ্গল ছেড়ে অন্য কোনো জঙ্গল বা পাহাড়ে চলে যাবে। যেখানে গেলে আবার মনভরে কলাগাছ খেতে পারবে। পরদিন কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়েই হাতিটি এ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পড়ে। হাঁটতে থাকে কলাগাছের সন্ধানে। কিছুদূর গিয়ে হঠাৎ হাতিটি মাথা ঘুরে একটি গর্তে পড়ে যায়। শরীর দুর্বল বলে শত চেষ্টা করেও আর গর্ত থেকে উঠতে পারেনি। বাঁচাও বাঁচাও বলে সে চিৎকার-চেঁচামেচি করলেও তার ডাক কারো কানে পৌঁছায়নি। কেউ আসেনি তাকে সাহায্য করতে। এভাবে দিনের পর দিন না খেয়ে গর্তে পড়ে থাকতে থাকতে এক দিন হাতিটি সেখানেই মৃত্যুবরণ করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close