মোনোয়ার হোসেন

  ৩০ মার্চ, ২০১৯

বেজির কোলে সাপের ছানা

এক ছিল বন। বনের মাঝে বড় এক শালগাছ। গাছের নিচে একটা কোর। সেই কোরে বাস করে এক বেজি পরিবার। বাবা বেজি-মা বেজি ও তাদের ছোট্ট এক সোনা বেজি। নাম বিজু। আজ বিজুর জন্মদিন। ছেলের জন্মদিনে বাবা-মায়ের মহা আয়োজন। বনের নানা রঙের ফুল এনে ঘর সাজিয়েছে। ছেলের জন্য মুখরোচক খাবারের আয়োজন করেছে। বাবা এনেছে তুলতুলে মুরগির ছানা। মা এনেছে তুলতুলে হাঁসছানা। কিন্তু বিজু বলল, সে এসব কিছুই খাবে না। খাবে সাপের ডিম। বাবা-মা পড়ল মহাবিপদে । হুট করে সাপের ডিম পাবে কোথায়? হঠাৎ মা বেজির মনে পড়ল নদীর তীরে যাওয়ার পথে ছোট ঝোপের ভেতর দেখেছিল এক মা গোগরাকে ডিম পারতে। সে বাবা বেজিকে বলল, ডিম পেয়েছি। বাবা বেজি বলল, কোথায়? নদীর তীরে ছোট ঝোপের নিচে এক গোগরা ডিম পেরেছে। তারা ঝোপের কাছে গিয়ে দেখল মা সাপ ডিমের ওপর বসে গভীর ভালোবাসায় ডিমগুলো বুকের নিচে জড়িয়ে ধরে আছে। তা দিচ্ছে। মা বেজি বলল, সর্বনাশ ! সাপ তো ডিমের ওপর বসে আছে। ডিমে তা দিচ্ছে। চুরি করব কীভাবে? বাবা বেজি একটা বুদ্ধি বের করল। বলল, তুমি পিছনের দিকে যাও। আমি সামনের দিক থেকে সাপের দিকে এগিয়ে যাব, সাপ যেই না আমাকে তাড়া করবে, অমনি তুমি পেছন থেকে এসে ডিম মুখে নিয়ে দৌড় দেবে।

যে ভাবা সেই কাজ। মা বেজি গেল পিছনের দিকে। বাবা বেজি ধীরে ধীরে সামনে এগুতে লাগল। সাপের বাসার দিকে। বেজি বাসার দিকে এগিয়ে আসছে দেখে সাপ প্রথমে ফণা তুলে ফোঁস ফোঁস করে বেজিকে ভয় দেখাতে লাগল। তবু বেজি পিছপা হলো না। এগিয়ে আসতেই লাগল। এবার মা গোগরা রেগে গেল। ফণা তুলে তেড়ে এলো বেজির দিকে। এই সুযোগে মা বেজি পেছন থেকে এসে দুটো ডিম মুখে নিয়ে দিল এক ছুট। ডিম নিয়ে বাসায় এসে দেখল ছেলে ঘুমিয়ে পড়েছে। তারা ছেলের মাথার দিকে ডিম রেখে বাইরে বেরিয়ে পড়ল। সন্ধ্যায় এলো বাসায়। এসেই তো অবাক। একটা ডিম ফোটে ফুটফুটে সাপছানা বেরিয়েছে। বিজু সাপছানার সঙ্গে খেলা করছে। সাপছানা লেজ দুলাচ্ছে। তির তির করে দৌড়াচ্ছে। তা দেখে বিজু খলখলিয়ে হাসছে। মাকে দেখেই দৌড়ে এলো বিজু। বলল, মা ও আমার বন্ধু। খেলার সাথী। সাপ তো আমাদের শত্রু। খেলার সাথী হয় কী করে? মনে মনে ভাবল মা বেজি। কিন্তু ছেলের আনন্দ দেখে কিছুই বলল না। হেসে বলল, ঠিক আছে, সে তোমার বন্ধু। বাবা-মা বাইরে যায়। খাবার নিয়ে আসে। দুই বন্ধু বাসায় খেলা করে। দৌড়াদৌড়ি খেলা। ছোটাছুটি খেলা। লাফালাফি খেলা। লুকোচুরি খেলা। এভাবেই দিন যায়। আস্তে আস্তে বিজু বড় হয়। সাপছানা বড় হয় । সাপছানাও এখন বিজুর মাকে মা বলে ডাকে। বাবাকে বাবা বলে ডাকে। এক দিন বিকেলে বিজু আর সাপছানা খেলা করছিল। হঠাৎ বিজুর যে কী হলো দৌড়ে এসে সাপছানার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। সাপছানাকে জখম করল। বাবা-মা রাতে বাসায় এসে দেখল সাপছানা জখম হয়ে পড়ে আছে। তার শরীর রক্তাক্ত! মা দৌড়ে এসে সাপছানাকে বুকে জড়িয়ে ধরল। বলল, কী হয়েছে বাছা, তোমার শরীরে জখম কেন? রক্ত কেন? সাপছানা বলল, বন্ধু বিজু খেলা করতে করতে আমাকে জখম করেছে। মা আঁতকে ওঠেন। তাহলে কী বিজু জেনে গেছে সাপ আমাদের শত্রু? সে ছেলেকে ডেকে বলল, বিজু সাপছানাকে জখম করেছ কেন? বিজু কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, বিশ্বাস করো মা, আমি ইচ্ছে করে বন্ধুকে জখম করিনি। তখন বন্ধু সাপকে দেখে আমার মাথায় কী যে হলো, ঝাঁপিয়ে পড়লাম বন্ধুর ওপর। জখম করে ফেললাম তাকে। তুমি আমাকে মাফ করো মা। আর কখনো এমন হবে না। মা হাফ ছাড়ল। যাক বাবা, বিজু এখনো জানে না সাপ আমাদের শত্রু। সে জানার আগেই সাপকে তার বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। জঙ্গলে ছিল ঔষধি গাছ। সে ঔষধি গাছ এনে বেটে সাপছানার ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিল। কয়েক দিনের মধ্যে সাপছানার ক্ষতস্থান সেরে উঠল। মা বেজি সাপছানাকে কাছে টেনে নিয়ে বলল, শোনো বাছা, আমরা বেজি, তুমি সাপ। আমরা পরস্পর শত্রু। আমাদের কাছে থাকা তোমার নিরাপদ নয়। তারচেয়ে তুমি তোমার বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যাও। সাপছানা বলল, ওসব আমি কিছু বুঝি না। আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাব না। তুমিই আমার মা, আমি তোমার কাছেই থাকব। বিজু আমার বন্ধু, আমি বন্ধুর কাছেই থাকব। সাপছানার কথা শুনে মা বেজির চোখে পানি চলে এলো। সে গভীর মমতায় সাপছানাকে টেনে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরল। তুমি আমার কাছেই থাকবে বাবা। আমি তোমার কোনো ক্ষতি হতে দেব না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close