আবদুস সালাম

  ৩০ জুন, ২০১৮

ফুটবল খেলার আদ্যন্ত

তোমরা অনেকেই জানো যে, ফুটবল হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি লেখা। অন্যান্য খেলার তুলনায় এর প্রতি মানুষের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। বিশ্বকাপ, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ছাড়াও প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি ও স্যাটেলাইটের যুগে অজপাড়াগাঁয়ে বসেও ফুটবলপ্রেমীরা ফুটবল খেলা দেখার সুযোগ পায়। আর বিশ্বকাপ ফুটবল দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকি। অথচ আমরা অনেকেই জানি না ফুটবল খেলার ইতিহাস সম্পর্কে। সংক্ষেপে আজ তোমাদের জানাব ফুটবল খেলার ইতিহাস সম্পর্কে।

ফুটবল হলো বায়ুপূর্ণ পদগোলক, যা পা দিয়ে খেলা হয়। ফুটবল খেলার উৎপত্তি নিয়ে বেশ মতভেদ রয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০ অব্দে গ্রিক এবং রোমানরা প্রথমে এই খেলা শুরু করেছিল। বিভিন্ন নামে এ খেলাটি প্রাচীন, মিসর, পারস্য, ব্যাবিলন, গ্রিস, চীনেও প্রচলিত ছিল। অনেকে মনে মনে করেন প্রথমদিকে এ খেলার খেলোয়াড়দের সংখ্যা ছিল ২৭ জন। আবার কোথাও ২০ বা ১৫ জন। আর গোলরক্ষকের সংখ্যা ছিল পাঁচজন। ফুটবল খেলার আগের নিয়ম পরিবর্তন করে নতুন নিয়ম বা বিধিবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে ১৮৪৮ সালে তৎকালীন বিশিষ্ট ফুটবল খেলোয়াড়রা কেম্ব্রিজে একত্র হন। অবশ্য তখনো খেলোয়াড়দের সংখ্যার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। পরে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে আইন করা হয় যে প্রত্যেক দলে একজন গোলরক্ষকসহ ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকবে। তাই ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকেই আধুনিক ফুটবলের যাত্রা শুরু হয় বলা যায়। এ আইন অনুসারে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের ৫ মার্চ ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের মধ্যে খেলা হয়। এভাবেই তবে আধুনিক ফুটবলের বিকাশ ঘটেছে ইংল্যান্ডে। মধ্যযুগের শেষের দিকে ইংরেজ ক্রীড়াবিদ জেসি থ্রিং এ খেলার প্রথম নিয়ম তৈরি করেন। পরে কালক্রমে এই খেলাটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। টোটাল ফুলবলের জনক বলা হয় নেদারল্যান্ডসের রাইনাস মিশেলসকে।

তোমাদের অনেকের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে একটি আদর্শ ফুলবল খেলার মাঠ ও বলের পরিমাপ কত? হ্যাঁ, এখন সেটাই বলব। আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য মাঠের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১১০ মিটার (১২০ গজ), সর্বনিম্ন ১০০ মিটার (১১০ গজ) এবং প্রস্থ সর্বোচ্চ ৭৫ মিটার (৮০ গজ), সর্বনিম্ন ৬৪ মিটার (৭০ গজ) হতে হবে। মাঠের স্পটগুলো (টাচলাইন, গোললাইন, মধ্যরেখা, মাঝখানের বৃত্ত, পেনাল্টি স্পট, কর্নার নেওয়ার জায়গা ও ফ্ল্যাগ পোস্ট) অবশ্যই পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান হতে হবে। গোলপোস্টে দুটি বারের দূরত্ব হবে ৭.৩২ মিটার (আট গজ) এবং উচ্চতায় ২.৪৪ মিটার (আট ফুট)। আর গোলাকার বলের পরিধির মাপ সর্বোচ্চ ৭০ সেন্টিমিটার হতে হবে, সর্বনিম্ন ৬৮ সেন্টিমিটার। ম্যাচ শুরুর সময় বলের ওজন সর্বোচ্চ ৪৫০ গ্রাম, সর্বনিম্ন ৪১০ গ্রাম।

এত গেল মাঠ ও বলের পরিমাপের কথা। এখন জানাব ফুটবল খেলার কিছু নিয়ম-কানুনের কথা। প্রতিটি দলের খেলোয়াড়দের নির্দিষ্ট জার্সি, শর্টস, মোজা, শিন গার্ড, বুট পরতে হয়। গোলরক্ষকদের সাজ-পোশাক খেলোয়াড়দের চেয়ে একটু ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। খেলা পরিচালনা করেন একজন রেফারি এবং দুজন সহকারী রেফারি। সহকারী রেফারিরা কর্নার কিক, থ্রো-ইন, অফসাইডের সিদ্ধান্ত দিয়ে মূল রেফারিকে সাহায্য করবেন। যদিও মূল রেফারির বাঁশিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। মূল রেফারি সাতটি কারণে কোনো খেলোয়াড়কে হলুদ কার্ড দেখাতে পারেন আর তা হলো : ১. অখেলোয়াড়োচিত আচরণের জন্য, ২. অশোভন শব্দ কিংবা আচরণের জন্য, ৩. খেলার নিয়মের বিরুদ্ধাচরণ করলে, ৪. আবার খেলা শুরু করতে দেরি করলে, ৫. প্রতিপক্ষের কর্নার কিক বা ফ্রি-কিক নেওয়ার সময় নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়ানোর রীতি মানতে না চাইলে, ৬. রেফারির আদেশ ছাড়া মাঠের বাইরে থেকে ভেতরে ঢুকলে, ৭. অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবে মাঠের বাইরে চলে গেলে। এ ছাড়া মূল রেফারি ৬টি কারণে কোনো খেলোয়াড়কে লাল কার্ড দেখাতে পারেন। আর তা হলো : ১. গুরুতর ফাউল করলে, ২. কাউকে হিংস্রভাবে আঘাত করলে, ৩. প্রতিপক্ষের কোনো খেলোয়াড় কিংবা রেফারিকে থুথু দিলে, ৪. প্রতিপক্ষের গোল মেনে না নিলে অথবা হাত দিয়ে গোল করার চেষ্টা করলে, ৫. অসম্মানজনক বা অশ্লীল মন্তব্য করলে, ৬. একই ম্যাচে কোনো খেলোয়াড়কে প্রথম হলুদ কার্ড দেখানোর পর দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখানো হলেই তা লাল কার্ড দেখানো বলে বিবেচিত হবে।

খেলার মোট সময় ৯০ মিনিট। ৪৫ মিনিট পর বিরতি দেওয়া হয়। তবে খেলোয়াড়দের ইনজুরির কারণে, খেলোয়াড়রা ইচ্ছাকৃতভাবে সময় নষ্ট করলে কিংবা বদলি খেলোয়াড় মাঠে নামতে নষ্ট হওয়া সময় হিসাব করে রেফারি অতিরিক্ত সময় নির্ধারণ করতে পারেন। তবে অমীমাংসিত খেলার ফলাফল নিশ্চিত করা জরুরি হলে সে ক্ষেত্রে ৯০ মিনিটের পর আরো ৩০ মিনিট সময় বাড়ানো হয়। তাতেও খেলা নিষ্পত্তি না হলে টাইব্রেকারের মাধ্যমে খেলার ফলাফল নির্ণয় করা হয়। বর্তমানে ফিফা একটি নিয়ম চালু করেছে। তা হলোÑযদি কোনো খেলোয়াড় পেনাল্টি শট নেওয়ার আগ মুহূর্তে পুরোপুরি দাঁড়িয়ে যান বা অন্য কাউকে পাস দেন তাহলে সেটা পেনাল্টি হিসেবে আর গণ্য হবে না। উল্টো প্রতিপক্ষকে একটি ‘ফ্রি কিক’ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। যে খেলোয়াড় পেনাল্টি নিতে গিয়ে এটা করবেন, তাকে রেফারি চাইলে হলুদ কার্ডও দেখাতে পারেন।

এবার জানাব ‘ফিফা’ সম্পর্কে কিছু তথ্য। বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থার নাম হলো ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। সংক্ষেপে ফিফা বলা হয়। এ সংস্থার প্রতিষ্ঠা হয় ১৯০৪ সালে। এর সদর দফতর সুইজারল্যান্ডের জুরিখে। বর্তমান সদস্য দেশের সংখ্যা ২২১টি। ফিফার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশ : ৭টি। যথা : বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ড। এই ফিফা প্রতি চার বছর পরপর বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন করে থাকে। ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবল বিশ্বকাপ বা সকার বিশ্বকাপ নামেও পরিচিত। যেখানে পুরুষ জাতীয় ফুটবল দল অংশগ্রহণ করে থাকে। বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হয় ১৯৩০ সাল থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফিফার আইন-কানুন মেনে সদস্য দেশগুলো বাছাই পর্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। বর্তমানের নিয়ম অনুযায়ী বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে মোট ৩২টি দল অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। ফিফা বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এবার ফিফার অন্তর্ভুক্ত সব উপযুক্ত দেশ ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিল। এ প্রসঙ্গে একটি কথা বলে রাখি, ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারিতে আয়োজিত এক ফিফা কাউন্সিলে সবার সম্মতিতে ভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়, ২০২৬ সাল থেকে ফিফা বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে ৪৮টি দল অংশগ্রহণ করবে।

এবার তোমাদের বিশ্বকাপ ফুটবল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জানিয়ে রাখি। গোল্ডেন বল এবং গোল্ডেন সু-রীতি চালু হয় ১৯৮২ সাল থেকে। ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ তৈরি হয় ১৯৭৩ সালে, যার ভাস্কর ইতালির সিলভিও গাজ্জানিগা। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ ফুটবলে সর্বাধিকবার পাঁচবার (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪ ও ২০০২) বিজয়ী হয়েছে ব্রাজিল। বিশ্বকাপ ফুটবলে দ্রুততম গোলদাতা : তুরস্কের হাকান সুকুর যিনি ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে মাত্র ১১ সেকেন্ডে গোল করেন। আর ১৯৯১ সাল থেকে ফিফা মহিলা বিশ্বকাপ শুরু হয়। বর্তমানে ফিফা বিশ্বকাপ-২০১৮ রাশিয়ায় ১৪ জুন শুরু হয়েছে চলবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত। আমাদের সবার প্রত্যাশা, বাংলাদেশও একদিন ফিফা বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণ করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist