reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৫ জুলাই, ২০২২

সফল তিন নারী খামারি

লালমনিরহাটের নারীরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। ঘরের কোণ থেকে এখন উদ্যোক্তা। খামার করছেন, হ্যান্ডিক্রাফট করছেন। খামারে উৎপাদিত দুধ-ডিমসহ সব কিছুরই বাইপ্রডাক্ট তৈরি করছেন। এতে জেলাব্যাপী সাড়া পড়ে গেছে। এমনই তিনজন সফল নারী হলেন ফাতেমা বেগম, রিনা আক্তার এবং উত্তমা রায় রত্না। তাদের নিয়ে লিখেছেন ফারুক আলম

আদিতমারী উপজেলার বাসিন্দা ফাতেমা বেগম। মনে করা হয় উপজেলার প্রথম মুরগির খামারি তিনি। তখনও ব্রয়লার মুরগি আসেনি। ২০০ লেয়ার মুরগি দিয়ে শুরু। পরে নানা জটিলতায় সব বন্ধ হয়ে যায়। ৪ বছর আগে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় একটি গাভি কেনেন। এখন তার গোয়ালে একটি গাভি থেকে ৪টি। গোয়ালে ৬ লাখ টাকার গরু আছে।

একই উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের বাসিন্দা রিনা বেগম। তার খামারে ৩০টি গরু আছে। দুধ দিচ্ছে ১০টি গাভি। তার স্বামীও খামার পরিচালনা করছেন। প্রথম দিকে সাফল্য আসেনি। এখন আর পেছন ফিরে তাকাতে হচ্ছে না। খামার থেকে বছরে ২০ লাখ টাকার বেশি আয় করছেন। বায়োগ্যাস প্লান্টে রান্নাও করেন। এতে গরু থেকে বছরে আয় বেড়েছে।

প্রতীক ডেইরি খামার। উত্তমা রায় রত্নার নিজ হাতে গড়া। তার খামারে ৪০টি গাভি, ১০০টি বিভিন্ন জাতের ছাগল, ৫০০০ মুরগি, ১০০ জোড়া উন্নত জাতের কবুতর, মাছের খামার রয়েছে। শুরু একটি গরু দিয়ে। এখন তার গরুর সংখ্যা ৬০টি। দুধ দিচ্ছে ২০টি গরু। দুধের তৈরি বাইপ্রডাক্ট তৈরি করছেন নিজেই। তার খামারে কাজ করছেন ১০ জন কর্মচারী। তাদের বেতন দিচ্ছেন। শহরের রেল বাজারে একটি শোরুম করেছেন। সেখানেই তার খামারের উৎপাদিত দুধ দিয়ে তৈরি মিষ্টি, ছানা, ঘিসহ নানা বাইপ্রডাক্ট বিক্রি করছেন। এবারের পুলিশ নারী কল্যাণ সংস্থার শিল্প মেলায় একটি স্টল দিয়েছেন। রত্নার খামারে এখন প্রায় ১০ কোটি টাকার গরু, ছাগল, মুরগি রয়েছে।

খামারে কাজ করা সবিতা রানী বলেন, ‘আমি সাড়ে ৪ হাজার টাকা বেতনে কাজ করি। গত ১০ বছর ধরে রত্না আপার খামারে আছি। আগের চেয়ে আমার সংসার ভালো চলছে।’

প্রতীক ডেইরির সেলার ফাতেমা বলেন, ‘আমাদের ফার্ম বেশ সাড়া ফেলছে। এখানকার তৈরি খাবার বিক্রি হচ্ছে। মাঝখানে করোনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চিন্তায় ছিলাম। পাশে একটি মেলা হচ্ছে, আর কয়েকদিন মেলা চললে, আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।’

রত্না বলেন, ‘বর্তমানে সব খাবারের দাম বেশি। এখন দুধ বেঁচে পোষাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে দুধের বাইপ্রডাক্ট তৈরি করতে হচ্ছে। তার পরও লাভ করা মুশকিল। আমার ৭৫টি গাভির মধ্যে এখন ৪০টি আছে। বাকিগুলো বিক্রি করে দিয়েছি। খাবারের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে গাভিসহ সব খামার করা কঠিন হয়ে যাবে।’

উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা স্বপন কুমার বলেন, ‘প্রতীক ডেইরি খামার আমাদের লালমনিরহাটের একটি মডেল খামার। প্রথম থেকেই এই খামার দেখাশোনা করছি। আমাদের প্রাণিসম্পদ ডিএলও ও ইউএলও স্যারেরা আন্তরিক। আমরা চাই এরকম নারী খামারি তৈরি হোক।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর অলম বলেন, ‘সরকার ঘোষিত নারীর ক্ষমতায়নের দিকে আমরা নজর দিচ্ছি। এখন নারীরা খামার করছেন। সেখান থেকে তারা নিজেরাই গড়ে তুলছেন নিজেদের ভবিষ্যৎ। এতে তাদের সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদণ্ডআপদ থেকেও রক্ষা পাচ্ছেন সহজেই। নারীদের উৎসাহিত করতে ট্রেনিং, সভা, সমাবেশে খামারের কথা বলছি। সমবায় বা যৌথ খামার ব্যবস্থা আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close