নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ অক্টোবর, ২০১৭

গৃহহীন ও বেকাররা শহরমুখী মেয়রদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

নদীভাঙনে ভিটামাটি হারিয়ে এবং গ্রামে কর্মসংস্থানের অভাবে প্রতিদিনই শহরে আসছে শত শত মানুষ। এ জন্য সব শহরেই গৃহহীন ও উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সারা দেশের শহরাঞ্চলে প্রায় ৬০ লাখ গৃহের সংকট রয়েছে, যা উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিটি ও পৌর মেয়ররা। এ পরিস্থিতিতে টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি-১১) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও পরিকল্পিত নগরায়ণ হুমকিতে পড়েছে। এ জন্য নগরের দরিদ্রদের আবাসন নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

গতকাল রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত নগরের দরিদ্রদের জন্য গৃহায়নে অর্থায়নবিষয়ক জাতীয় সম্মেলনে বিশিষ্টজনরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের নগর উন্নয়ন কর্মসূচি দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সহ-আয়োজক ছিল জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, নগর উন্নয়ন অধিদফতর, মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ম্যাব), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউ অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শহরের বেশির ভাগ গরিব বস্তিতে অবৈধভাবে বসবাস করে। যেখানে জীবনমান অত্যন্ত নিম্নমানের। বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত বাড়ির অভাব। এই বাড়ির সংকট আরো বাড়বে। ২০২১ সাল নাগাদ এই সংকটের পরিমাণ দাঁড়াবে ৮৫ লাখ। আর গ্রামে সংকট হবে ৩৫ লাখ। অনুষ্ঠানে নগর দরিদ্রদের আবাসন সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে তৈরি ব্র্যাকের কমিউনিটি লিড হাউজিং মডেল, ইউএনডিপি ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের লো-ইনকাম হাউজিং মডেল তুলে ধরে আলোচনা করা হয়। দারিদ্র্যবান্ধব নগর পরিকল্পনা ও নগর দরিদ্রদের গৃহায়ন ঋণের জন্য সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে অংশীদারিত্ব জোরদার করা, জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্তকরণের জন্য সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে দেশের সব সিটি করপোরেশনসহ প্রায় ৭৫ জন পৌর মেয়র এবং ইউএনডিপি ও বেসরকারি সংস্থা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ের আরো তিন শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।

ব্র্যাকের স্ট্র্যাটেজি, কমিউনিকেশনস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক আসিফ সালেহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কুমিল্লার মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও বরিশালের মেয়র আহসান হাবিব কামাল।

আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আক্তার মাহমুদ, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. সুলতান হাফিজ, মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আলহাজ মোহাম্মদ আবদুল বাতেন, আরবান ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টরের পরিচালক ড. খুরশীদ জাবিন হোসেন তৌফিক এবং ন্যাশনাল হাউজিং অথরিটির চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব খন্দকার আখতারুজ্জামান।

গৃহায়ন মন্ত্রী বলেন, অপরিকল্পিত বাড়ি নির্মাণ ও জনসংখ্যা বাড়ার কারণে প্রতিদিন ২৩৫ হেক্টর ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। এজন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেখানেই বাড়ি হবে, অনুমতি লাগবে। এ সংক্রান্ত নগর অঞ্চল পরিকল্পনা আইন শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে। বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার ৭ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছে, আরো ১০ হাজার বাড়ি নির্মাণ করবে।

সাঈদ খোকন বলেন, দ্রুত নগরায়ণ, ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা, জমির অপ্রতুলতার কারণে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরগুলোতে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ বাসস্থান গড়া এই সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি ছোট টিনের আবাসনের পরিবর্তে উঁচু ভবন নির্মাণের তাগিদ দেন। তিনি বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে ছুটে আসা মানুষের জন্য টিনের ঘর দিয়ে আবাসন সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এজন্য ২০০ পরিবারকে মডেল হিসেবে ধরে টোকিও, সিঙ্গাপুর ও কোরিয়ার আদলে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, হাউজিং কোম্পানি, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (রাজউক) সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয় করে আবাসিক ভবন গড়ে তোলা যেতে পারে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, রোহিঙ্গাদের ভাষা চট্টগ্রামের স্থানীয়দের মতো হওয়ায় তারা ছড়িয়ে পড়ছে। এরা নানা সংকট তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি।

বগুড়া পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশে ৩২৮টি পৌরসভা আছে। পৌরসভাগুলোতে সরকারি বরাদ্দ বাড়াতে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি রাতে কারা বাইরে ঘুমায়। বগুড়াতে ৩৩৩ জনসহ আরো ২০টি পৌরসভায় ২০ হাজারের মতো লোক বাইরে ঘুমায়। তাদের কোনো জমি নেই, তাদের জন্য আমাদের ভাবতে হবে। শুধু যাদের জমি আছে, তাদের নিয়ে কাজ করলেই হবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist