নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

‘সহসাই কাটছে না চালের সংকট’

* পাইকারি বাজারে কমলেও সুফল পাচ্ছেন না ক্রেতারা * বেড়েছে সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম * হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ

বেড়ে যাওয়া চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে নানা সরকারি পদক্ষেপের ফলেও সহসাই কাটছে না চালের সংকট। বিক্রেতারা বলছেন, দাম কমতে আরো দু-এক দিন সময় লাগবে। তবে পাইকারি বাজারে কমলেও সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ ক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন কেজিপ্রতি দুই-তিন টাকা কমলেও চালের সংকট সহসাই কাটছে না। এদিকে রাজধানীর বাজারে শাকসবজিসহ বেড়েছে নিত্যপণ্যের দামও। ফলে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ দেখছে সাধারণ মানুষ। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার এবং কাঁচাবাজার ঘুরে এমনই চিত্র দেখা যায়।

খুচরা বাজারে দেখা গেছে, মোটা স্বর্ণা ও পারিজা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫১-৫২ টাকা দরে। এ ছাড়া মিনিকেট কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে (ভালো মানের) ৬৪ টাকা দরে, মিনিকেট (সাধারণ) ৬০ টাকা, বিআর-২৮ ৫৮ টাকা, উন্নত মানের নাজিরশাইল ৭০ টাকা, নাজিরশাইল (নরমাল) ৬০, হাস্কি ৫৬, পাইজাম চাল ৫৫ টাকা, বাসমতী ৬৮ টাকা, কাটারিভোগ ৭৬ টাকা এবং পোলার চাল ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি বাজার বাদামতলী ও বাবুবাজারে গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা কমে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৭-৫৯ টাকায়। একইভাবে নাজিরশাইল ৬৬ টাকা, আটাশ ৫৩-৫৪ টাকা, উনত্রিশ ৫২-৫৩ টাকা ও স্বর্ণা ৪৬-৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাদামতলী চাল আড়তদার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জনপ্রিয় রাইসের স্বত্বাধিকারী হাজি রফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে এখন সব চালের দাম কমতির দিকে। তবে ক্রেতা নেই। বেচাবিক্রি খুবই খারাপ। দাম বাড়তির সময় মিলমালিকরা চাহিদা অনুযায়ী চাল সরবরাহ করতেন না। এখন তারা চাল বিক্রির জন্য ফোন করেন। বাবুবাজারের হাজি রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী হাজি জিয়াউল হক বলেন, চাল বিক্রি করে আড়তদার ও বেপারিদের টাকা পরিশোধ করি। তাই পাইকারি বাজারে দেড় থেকে দুই টাকা কমে চাল বিক্রি করছি।

খুচরা বাজারে এখনো চাল বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু পাইকারি বাজারে দাম কমছে, খুচরা বাজারেও কমবে। একটু সময় লাগবে। তবে দাম কমবেই। তবে এখন চালের দাম কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা কমলেও সহসায় আর কমবে না বলে জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী। প্রথম কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই বছর বোরো মৌসুমে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যা বছরের দুই-তৃতীয়াংশ খাদ্য ঘাটতি মেটায়। এ ছাড়া সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহ করতে পারিনি। ফলে গুদামে ধান-চালের মজুদ তলানিতে থেকে যায়। আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, বিদেশ থেকে সরকার এখন আতপ চাল আমদানি করছে। আর দেশের অধিকাংশ মানুষ আতপ চাল খেতে অভ্যস্ত না। কারণ তারা দীর্ঘদিন থেকে মোটা চাল খেয়ে আসছে। আর সরকারও এই চাল নিয়ে আসতে পারছে না। ফলে মোটা চালের যে চাহিদা সেটা থেকেই যাচ্ছে।

সম্প্রতি খোলাবাজারে চাল বিক্রির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, দেখেন অধিকাংশ মানুষ আতপ চাল কিনতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং তারা সরকারের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, আতপ চাল পরিবর্তন করে মোটা চাল দিতে। সরকারের লাখ লাখ টন চাল আমদানির পরও দীর্ঘস্থায়ী সংকট কাটবে না বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী। অন্যদিকে কাঁচাবাজারেও দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। বাজারে শাকসবজির সরবরাহ বাড়লেও কমছে না দাম। উল্টো বেড়ে যাচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি কাঁচামরিচ, শিম, গাজরের ১৫-২০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১০ টাকা।

গতকাল মহাখালী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় দাম বাড়ার তালিকার শীর্ষে রয়েছে শিম। কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে গতকাল বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়। আর কাঁচামরিচ ১১০ থেকে বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১২৫-১৩০ টাকা কেজি। গাজরের দাম ৮০ থেকে বেড়ে ১০০ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কেজিপ্রতি ঝিঙা, করলা, বেগুন ও বরবটি বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা দরে। এদিকে আগের সপ্তাহের মতোই এ সপ্তাহে অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে পেঁয়াজ ও রসুনের দাম। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা, আর দেশি রসুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে গরুর মাংসের দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। খাসির মাংস ৭০০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকা এবং সাদা ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। লাল মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা কেজি দরে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist