গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৮ মে, ২০১৭

স্মার্টকার্ডে আঙুলের ছাপ ও আইরিশ মূল্যহীন!

স্মার্টকার্ড পাওয়ার শুরুটা ছিল বেশ আগ্রহ, উৎসাহ ও উদ্দীপনার। নাগরিকরা এটি পেতে ব্যাকুল ছিলেন। তাই রোদ-বৃষ্টি, ভোগান্তি মাথায় নিয়েই তারা চোখের মণির ছবি (আইরিশ) ও আঙুলের ছাপ দেন। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে নারী-পুরুষের এই স্মার্টকার্ড নেওয়া যেন এক রকম যুদ্ধও। কিন্তু এখন উৎসাহ নেই, নেই স্মার্টকার্ড নেওয়ার জন্য কোনো আগ্রহও। ঢাকা-ঢোল পিটিয়ে আইরিশ ও আঙুলের ছাপ নেওয়া হলেও তা এখন স্মার্টকার্ডের জন্য মূল্যহীন বলে জানিয়েছে খোদ নির্বাচন কমিশনই।

স্মার্টকার্ডে থাকা নাগরিকদের তথ্য একটি সার্ভারে জমা থাকবে। নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে যতটা সম্ভব নিরাপদে থাকবে এই তথ্যগুলো যেন হ্যাকাররা তথ্য চুরি করতে না পারে। আইরিশ স্ক্যানের ও ফিঙ্গার প্রিন্ট তথ্য সার্ভার সংরক্ষণ হবে বাইনারি কোড আকারে। ফলে চুরি হলেও এই তথ্যগুলো থাকবে সুরক্ষিত। কিন্তু আইরিশ ও আঙুলের ছাপ কার্ডের অংশ নয়।

জানতে চাইলে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, স্মার্টকার্ড ভোটার নাগরিকদের কাছে অতি-মূল্যবান। ফলে এটি পেতে ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আইরিশ ও ১০ আঙুলের ছাপ স্মার্টকার্ডের অংশ নয়। শুধু ভোটার নাগরিকের তথ্যভা-ারে এই তথ্যটি আগের তথ্যের সঙ্গে যোগ হচ্ছে।

এনআইডির ডিজি ব্রি. জে. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, স্মার্টকার্ডে আইরিশ ও আঙুলের ছাপ একটি অ্যাডেড অ্যাডভানটেজ। এটি অতিরিক্ত সুবিধা বা নিরাপত্তা সুরক্ষা কিংবা নাগরিকদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার জন্য সংযোজন করা হয়েছে। তবে এটা করতে গিয়ে অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। স্মার্টকার্ড সংগ্রহকারীদের রোদের মধ্যে তিন-চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে, স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এ ছাড়া কমিশনের মাঠ পর্যায়ের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন তাদের মাসের পর মাস এটা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। তবু কমিশনের সিদ্ধান্ত হয়েছে আইরিশ ও ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়েই কার্ডটি দিতে হবে।

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যমতে, আইডিয়া প্রকল্পের অধীনে স্মার্টকার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রকল্পের প্রাথমিক পরিকল্পনায় ১১টি অনুষঙ্গ এবং ভোটার নাগরিকদের সেবাদান-সংক্রান্ত ২১টি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে নাগরিকের আইরিশ ও ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল না। পরে আরেকটি সংশোধিত প্রকল্প গ্রহণ করা হয় ২০১৬ সালের ১৮ মে। এতে প্রকল্পের ২২টি অনুষঙ্গ ঠিক করা হয়। যার মধ্যে নতুন সংযোজিত জি-২১ অনুষঙ্গে আইরিশ ও ১০ আঙুলের ছাপ অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

তবে, স্মার্টকার্ডের বিতরণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে নাগরিকদের ১০ আঙুলের ছাপ ও আইরিশের প্রতিচ্ছবি না নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। কিন্তু সমালোচনা এড়াতে কমিশন তা নাকচ করে দিয়েছে। নাকচ হওয়ার আগে সিদ্ধান্ত ছিল, আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে এটির কাজ সম্পন্ন করার। এর জন্য নাগরিকের সুবিধাজনক সময়ে জেলা, উপজেলা কিংবা কমিশনের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে স্বপ্রণোদিত হয়ে এটি সংযোজন করার সুযোগ দিতে চেয়েছিল কমিশন।

২০০৭ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির সময় অতিরিক্ত (বাই প্রডাক্ট) হিসেবে কাগজে ছাপানো একটি পরিচয়পত্র দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু এই পরিচয়পত্রটি মেশিন রিডেবল নয়। স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্লাস্টিক কার্ডে তৈরি। মেশিন রিডেবল। এর সঙ্গে একটি চিপ আছে। এই কার্ডধারীদের দুটি অতিরিক্ত তথ্য সরকারের ডেটাবেইজে আছে। বিভিন্ন নাগরিক সেবার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে এই কার্ড ব্যবহার হবে বলে জানানো হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist