নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা ৩৫ হচ্ছে

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গতকাল বুধবার যুগ্ম সচিব মো. সাজজাদুল হাসান স্বাক্ষরিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাধারণ অধিশাখা থেকে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। চিঠিতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সাধারণত সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর। আর অবসরে যাওয়ার বয়সসীমা ৫৯ বছর। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়স ৬৫ বছর করার জন্য প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আবেদন করেছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। বিষয়টি যেহেতু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধির আওতার মধ্যে পড়ে, তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দাবিসংক্রান্ত সেই চিঠি বা প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশে ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছরে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রাপ্ত পত্র একই সঙ্গে পাঠানো হলো। বর্ণিত বিষয়ের সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধি সম্পৃক্ততা থাকায় সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন চাকরি প্রার্থীরা। এ দাবিতে গত সপ্তাহেও রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। গত ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে শত শত চাকরিপ্রত্যাশী শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে শহরের গুরত্বপূর্ণ এ মোড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনরতরা জানান, তারা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ করার দাবিতে এখানে অবস্থান করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, আমরা গত ১৪ বছর ধরে এ দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু আজও তার সমাধান পাইনি। বিষয়টি সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি কামনা করেন তারা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও এ নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়েছে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে জানিয়েছিলেন তৎকালীন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হেসেন। এ বছরের ৩ জুলাই সংসদে তিনি বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হলে বিভিন্ন পদে বিপরীতে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। ফলে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরো বেশি প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে ৩০ বছরের কম বয়সি প্রার্থীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হতে পারে।

সাবেক মন্ত্রী বলেছিলেন, বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশনজট নেই। আগে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের সেশনজট থাকলেও বর্তমানে উল্লেখযোগ্য কোনো সেশনজট নেই বললেই চলে। শিক্ষার্থীরা ১৬ বছরে এসএসসিসহ ২৩/২৪ বছরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে থাকে। চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর হওয়ার ফলে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পরও তারা চাকরিতে আবেদনের জন্য কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ বছর সময় পেয়ে থাকে। এছাড়া ৩০ বছর বয়সসীমার মধ্যে একজন প্রার্থী আবেদন করলে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ২-১ বছর লেগে যায়। ফলে চাকরিতে যোগদানের জন্য ন্যূনতম বয়স ৩০ বছর থেকে ৩৫ বছর করার যে দাবি করা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তার কাছাকাছি পর্যায়ে উপনীত হয়।

পাবলিক সার্ভিস কমিশনের রিপোর্টের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেছিলেন, ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় বিভিন্ন স্তরে উত্তীর্ণ প্রার্থীগণের বয়স ও জেন্ডারভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী কম বয়সি (২৩-২৫) সুপারিশকৃত প্রার্থীর সংখ্যা সব থেকে বেশি (৩৭.৬৮ শতাংশ) এবং বেশি বয়সি (২৯-এর ঊর্ধ্বে) সুপারিশকৃত প্রার্থীর সংখ্যা সব থেকে কম ১.৭১ শতাংশ)। সাবেক মন্ত্রীর ভাষ্যমতে, চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা ৫৭ বছর থেকে ৫৯ বছরে উন্নীত হওয়ায় বর্তমানে শূন্যপদের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই কমে গেছে। এ প্রেক্ষাপটে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হলে বিভিন্ন পদে বিপরীতে চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। এসব শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close