বদরুল আলম মজুমদার

  ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

উপজেলা নির্বাচন

বিএনপি-জামায়াত বর্জনে একাট্টা

উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। যদিও বিএনপির পদধারী মাঠ নেতাদের মধ্যে শতাধিক প্রার্থী মনোনয়ন কিনে নির্বাচনী মাঠে আছেন। তবে জামায়াতের স্থানীয় নেতাদের অনেকে মনোনয়ন কিনলেও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার কথা বলেছে দলের হাইকমান্ড। এদিকে বিএনপি থেকে যেসব প্রার্থী নির্বাচনে আছেন, তাদের নির্বাচন বর্জন করার বার্তা দেওয়া হয়েছে। তারপরও দলের নির্দেশনা অমান্য করে যারা নির্বাচনে যাবেন, তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা জানান দলের দায়িত্বশীল নেতারা। তবে বিএনপির যেসব পদধারী নির্বাচনে গেছেন, তাদের অনেকেই দল থেকে পদত্যাগ করছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

অবশেষে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপি তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে দলের একটি অংশের মতামত উঠে এলেও এবারও নির্বাচন বর্জনের পথেই হাঁটছে দলটি। যদিও সারা দেশে শতাধিক নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকায় বিএনপির মাঠপর্যায়ের অনেক নেতা নির্বাচন করার পক্ষে দলে মতামত দিয়ে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে জোরালো মত ছিল। কিন্তু আগামী ৮ মে থেকে শুরু হওয়া সব ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গত সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এ বিষয়ে রুহুল কবির রিজভী এ প্রতিবেদককে বলেন, যে দল একতরফা নির্বাচন করতে গিয়ে বিএনপিসহ গণতন্ত্রমনা দলগুলোর হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে ভরে রাখে, তাদের অধীনে কোনো নির্বাচনেই বিএনপি অংশ নেবে না, নেওয়ার প্রশ্নও আসে না। তিনি আরো বলেন, ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনে বিএনপির শীর্ষনেতাসহ ২৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে কারান্তরীণ করা হয়। এদের অনেকেই এখনো কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও তার সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার যৌক্তিক সিদান্ত নিয়েছে।

এদিকে জামায়াত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে শুরু থেকেই পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গিতে ছিল। এজন্য দলের মাঠ নেতাদের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছিল অনেক আগেই। এরই অংশ হিসেবে সারা দেশের প্রায় সব কয়টি সাংগঠনিক ইউনিটে দলের প্রার্থিতা বাচাইয়ের কাজও শেষ করা হয়েছে। কিন্তু শেষমেশ বর্তমান সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী দলটি সমমনা বড় দল বিএনপির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে এবারও নির্বাচন বর্জনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জামায়াত। এরই মধ্যে দলের ২০-২২ নেতা দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করলেও তারা দলের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে জানান দলের এক দায়িত্বশীল নেতা।

জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দলের নীতিনির্ধারণী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদে আলোচনার পর উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার এ সিদ্ধান্ত হয়। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে শুরুর দিকে কিছুটা নমনীয় ছিল জামায়াত। জয়ের সম্ভাবনা আছে, এমন উপজেলাগুলোয় নির্বাচন করার ব্যাপারে দলের মাঠপর্যায়ে বার্তা ছিল। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও জেলা কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সিদ্ধান্ত বদলের বিষয়ে জামায়াতের নেতারা বলছেন, তারা হিসাব-নিকাশ করে দেখেছেন, ভোট হবে একটা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে। এতে অংশ নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষে ভালো করার সুযোগ কম।

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘জামায়াত উপজেলা নির্বাচন করছে না। সবকিছু পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সারা দেশে ২০-২২ জনের মতো নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদের প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, নিশ্চিত করে বলতে পারি, নামে-বেনামে জামায়াতের কোনো প্রার্থীই মাঠে থাকবে না। এটা আমাদের দলীয় সিদান্ত। আশা করি, তাই হবে। বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে জামায়াতও এ সরকারের অধীন গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বিএনপি এ উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর অন্যতম চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলনও সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার কারণে জামায়াতকেও শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিতে হয় বলে দলটির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনটি পদের বিপরীতে ১ হাজার ৮৯১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬৯৬, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭২৪ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ৪৭১ জন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির ৩৫ ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জড়িত অন্তত ২৫ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়া অন্য পদগুলোয় বিএনপির আরো ৫০ নেতা অংশ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। প্রথম ধাপে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এসব তথ্য জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close