গাজী শাহনেওয়াজ

  ০৬ এপ্রিল, ২০২৪

এনআইডিতে নামের সঙ্গে পদ-পদবি নয়

জাতীয় ভোটার পরিচয়পত্রে (এনআইডি) থাকা ব্যক্তির নামের আগে বসানো যাবে না কোনো ধরনের উপাধি কিংবা পদবি। এখন আইনজীবী, ডক্টরেট, ডাক্তার, প্রফেসর, হাজি ও আলহাজ এসব উপাধি এখন নেমপ্লেট ও দপ্তরের চেম্বারে ব্যবহার করতে হবে। হিন্দু নারীদের ব্যাপারে স্বামী চাইলেই তার বংশীয় পরিচয় ব্যবহার করাতে পারবেন না। এখন থেকে এ সম্প্রদায়ের নারীরা জন্মসূত্রের বংশ পরিচয় ব্যবহার করতে পারবেন। বিচারপতিদের উপাধি এনআইডিতে বসাতে আগ্রহী হলে তাকে আবেদন সাপেক্ষে এটা করতে হবে। এমনকি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এনআইডিতে পদবি যুক্ত করতে চাইলে স্বপক্ষে দিতে হবে দালিলিক প্রমাণ। তাছাড়া যেকোনো ব্যক্তি চাইলে তার নিজ নাম ও জন্মতারিখ এবং পিতা ও মাতার নাম ও জন্মতারিখ একাধিকবার সংশোধন করতে পারবেন না। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ-সংক্রান্ত নানা বাস্তবসম্মত নিয়মকানুন জাতীয় পরিচয়পত্র ও সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত (সংশোধন, যাচাই এবং সরবরাহ) প্রবিধানমালা-২০১৪, ভোটার তালিকা আইন-২০০৯-এর ধারা-৩-এর দফা (কক) এ বর্ণিত ‘নাম’ এর অর্থ অনুসারে এবং জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০ সংশোধন করে নতুন এ বিধান যুক্ত করার মাধ্যমে নামের আগে পদবি বসানোর জন্য তৎপর ব্যক্তির তৎপরতা বন্ধ হবে। সাম্প্রতিককালে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিষয়টি স্পষ্ট করেছে।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব ও এনআইডি উইংয়ের ডিজি হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা অশোক কুমার দেবনাথ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, মানুষের জন্মণ্ডপরিচয় নির্ধারণ করা হয় জন্মনিবন্ধন সনদ দ্বারা। এটাকে ভিত্তি ধরেই একজন নাগরিক সমাজে পরিচিতি লাভ করেন। কিন্তু শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের পর যখন কর্মে প্রবেশ করেন, তখন পেশার ধরন অনুযায়ী তার জীবিকা নির্বাহ হয়। তবে জাতীয় ভোটার পরিচয়পত্র মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হওয়ার সুবাধে অনেকেই নামের আগে উপাধি বা পদবি বসাতে হুমড়ি পেয়ে পড়েন। আবার হিন্দু মেয়েদের বিবাহের পর স্বামীর ঘরে এসে নামের শেষে বৈবাহিক সূত্রের পদবি ধারণ করা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এখন একজন এসএসসি পাস সনদধারী হিন্দু ধর্মের নারীর স্বামী পদবি নিতে পারবেন না। কারণ শিক্ষা সনদে এসএসসি পাস লিপিবদ্ধ নামের বাইরে যেতে পারবে না ওই নারী। এ বিধান করার মাধ্যমে একজন নারীর বংশ পরিচয়টি নিয়ে স্বগর্বে বেঁচে থাকতে পারবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এনআইডিটি বাধ্যতামূলক করার পর নামের আগে উপাধি সংযুক্ত করা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। মন চাইলেই একজন আইনজীবী, একজন ডক্টরেট, শিক্ষক, অধ্যাপক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী নামের আগে এগুলো বসানোর জন্য তদবির শুরু করেন। রুটিং ওয়ার্ককাজ সম্পন্ন করাই যেখানে চ্যালেঞ্জ; বাড়তি এসব ঝামেলায় নানামুখী চাপে রাখেন ওইসব পদধারীরা। বলেন, তার মূল পরিচয় তার জন্মসনদে কিংবা শিক্ষা সনদে থাকা নামটি। এতেই সন্তুষ্ট নন। যখন যে পেশায় থাকবেন, সেটি নামের আগে বসানো রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। যদি বসাতে হয়, নিজ কর্মস্থলে কিংবা ভিজিটিং কার্ডে লিখলেই চলে। কমিশন সুনির্দিষ্ট করে যে বিধানটি স্পষ্ট করেছে, এটি ইতিবাচক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কতিপয় সংশোধনের ক্ষেত্রে কমিশন থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্পষ্ট করেছে নামের পূর্বে উপাধি কিংবা পদবি যুক্ত করা যাইবে না। আর ভোটার তালিকা আইন-২০০৯-এর ধারা-৩-এর দফা (কক) এ বর্ণিত ‘নাম’ এর অর্থ অনুসারে এবং জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০-এর ধারা-৫ অনুসারে নামের প্রারম্ভে ‘ড.’, ‘প্রফেসর’, ‘হাজি’, ‘আলহাজ’, ‘অ্যাডভোকেট’ প্রভৃতিসহ অন্য কোনো পদবি বা উপাধি যুক্ত করে নাম সংশোধন করার সুযোগ নেই। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ প্রধান বিচারপতির নামের পূর্বে ‘প্রধান বিচারপতি’ ও বিজ্ঞ বিচারকগণের নামের পূর্বে ‘বিচারপতি’ সংযোজনের বিষয়ে করা এক রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ডিভিশন থেকে প্রদত্ত রায়ের নির্দেশনা অনুসারে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ বিচারকদের ক্ষেত্রে নামের পূর্বে ‘প্রধান বিচারপতি’ বা ক্ষেত্রমত ‘বিচারপতি’ পদবি যুক্ত করার আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ভোটার তালিকা আইন ও বিধিমালা অনুসারে নামের পূর্বে অর্জিত উপাধি বা পদবি সংযুক্ত করার কোনো বিধান নেই।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, হিন্দু বিবাহিত মহিলাদের নিজ নামের শেষে পিতা বা স্বামীর নাম কিংবা স্বামীর গোত্র যুক্তকরণ সংক্রান্তে কমিশন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রে হিন্দু বিবাহিত মহিলাদের নাম পরিবর্তন বিষয়ে গত ২০১৮ সালের ১৯ মার্চ নির্বাচন কমিশনের ২২তম সভায় বলা হয়, ‘এসএসসি পাস ভোটারের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের ক্ষেত্রে যারা এসএসসি পাস তাদের এসএসসি সনদে উল্লেখ থাকা নাম ঠিক রেখে সংশোধন করতে হবে’। বলা আছে, “যদি সন্তানের শিক্ষা সনদের সঙ্গে মিল রেখে পিতা ও মাতার নিজ নাম আংশিক সংশোধনের আবেদন দাখিল করা হয়; উক্তরূপ সংশোধনের ক্ষেত্রে নিম্নরূপ বিষয়াদি প্রণিধানযোগ্য। এক্ষেত্রে মূল নাম ঠিক থাকিলে এবং পিতা-মাতার নিজের শিক্ষা সনদ না থাকলে অবশ্যই অনলাইন জন্মসনদ দাখিল করিতে হইবে এবং তদনুযায়ী সংশোধন করিতে হইবে। আর ডাটাবেজে আবেদনকারী অর্থাৎ পিতা ও মাতার শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক বা তদূর্ধ্ব থাকিলে তাহাদের শিক্ষা সনদ সংশোধনসাপেক্ষে সংশোধন করিতে হইবে। এমনকি আবেদনকারীর অন্যান্য সন্তানের শিক্ষা সনদে একই রকম নাম রয়েছে কি না, তা পর্যালোচনা করে দেখবেন রেজিস্ট্রশন কর্মকর্তারা। সেক্ষেত্রে যে সন্তানের শিক্ষা সনদে অসংগতি রয়েছে তার শিক্ষা সনদ সংশোধন করার হবে। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা দাবিকর্তা ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মতারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামসংবলিত গেজেট, মুক্তিবার্তা, লালবার্তা, অনলাইন জন্মসনদ, ভাতা বহি এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এর ওয়েববার্তা যাচাইয়ান্তে প্রাপ্ত তথ্য বিবেচনায় নিতে হইবে। তাছাড়া এ ধরনের আবেদন ‘খ’ অথবা তদূর্ধ্ব ক্যাটাগরিতে নিষ্পত্তি করবেন ইসির কর্মকর্তারা।

জাতীয় পরিচয়পত্রের নিজ নাম, পিতার নাম, মাতার নাম ও জন্মতারিখ ইত্যাদি মাঠপর্যায়ে একাধিকবার সংশোধন করা যাইবে না। তবে উক্তরূপ সংশোধন চাওয়া হইলে সেটি ‘ঘ’ ক্যাটাগরি হিসেবে মহাপরিচালক কর্তৃক নিষ্পত্তি করা হইবে। ওয়ারিশ সনদ/পারিবারিক সনদ/উত্তরাধিকার সনদ দাখিলের ক্ষেত্রে উক্ত সনদে ওয়ারিশগণ/পরিবারের সদস্যগণের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ ‘ক্রনোলজিক্যাল অর্ডার’ অনুসারে জন্মতারিখ ও বয়স উল্লেখ থাকিতে হইবে। পিতা-মাতা, স্বামী- স্ত্রীর নামের সংশোধনের ক্ষেত্রে উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে বিদ্যমান তথ্যভাণ্ডার যাচাই করিতে হইবে। পিতা-মাতা, সন্তান ও ভাই-বোনদের মধ্যে পারস্পরিক অস্বীকৃতি। বিরোধ দেখা দিলে অধিকতর যাচাইয়ের জন্য ‘ডিএনএ’ পরীক্ষার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট পত্র প্রেরণ করতে হবে। তথ্য গোপন করিয়া সরকারি চাকুরি প্রাপ্তির পর জাতীয় পরিচয়পত্রের বিভিন্ন তথ্য সংশোধনের জন্য প্রাপ্ত আবেদনগুলো নিষ্পত্তির জন্য কমিশনের অনুমোদনক্রমে ইতোপূর্বে গঠিত কমিটি এতদসংক্রান্ত আবেদনসমূহ প্রাপ্তির পর যাচাই-বাছাই করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন মহাপরিচালক, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের নিকট দাখিল করিবেন। সংশোধনের ক্ষেত্রে কারিগরি জটিলতা উদ্ভূত হইলে এনআইডি উইংয়ের কারিগরি অধিশাখার মতামতের ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করিতে হইবে। সকল শিক্ষাসনদ/জন্মসনদ/মৃত্যুসনদ অনলাইনে যাচাই করিতে হইবে। অনলাইনে না পাওয়া গেলে নিষ্পত্তিকারী কর্মকর্তা তাহার বিবেচনায়/বিচারবুদ্ধি (কন্সসায়েন্স) প্রয়োগ করে যাচাইপূর্বক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজনে নিষ্পত্তিকারী কর্মকর্তা ‘ক’, ‘খ’, ‘খ-১’, ‘গ’, ‘গ-১’ এবং ‘ঘ’ ক্যাটাগরির আবেদন নিষ্পত্তিকরণের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় তথ্য/প্রমাণাদি/মতামতসহ তদন্ত প্রতিবেদন প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সহকারী উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার অথবা উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসারের নিকট প্রেরণ করিতে পারিবেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট মতামত প্রদান করিবেন।”

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close