গাজীপুর প্রতিনিধি

  ৩০ মার্চ, ২০২৪

৭ ফ্লাইওভার চালুর পরও ভোগান্তির শঙ্কা

* গাজীপুরের ৫ স্থানে যানজটে ভোগান্তি বাড়বে * ঈদযাত্রা : ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক

পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে গাজীপুর-এয়ারপোর্ট রুটে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে খুলে দেওয়া হয়েছে ৭টি ফ্লাইওভার। এরপরও দুর্ভোগের শঙ্কা কাটছে না। দেশের ৭৫ শতাংশ গার্মেন্ট শিল্প গাজীপুরে অবস্থিত। এজন্য ঈদের ছুটিতে সেখানে মহাসড়কে চাপ বাড়ে কয়েকগুণ। এছাড়া ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল যাওয়ার পথে গাজীপুর হয়েই যেতে হয়। এ কারণেও সেখানে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজধানীর আবদুল্লাহপুরের পরই গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকা শুরু। ঢাকা ও গাজীপুর- এ দুই জেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে টঙ্গী সেতু। এর দুই দিকেই চলছে র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ। তবে এ পথে উড়ালসড়ক নির্মাণ হওয়ায় ওপর দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করা যাচ্ছে। এরপরও গাজীপুর জেলার মধ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাঁচটি স্থানে (পয়েন্ট) ঈদে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে ঘরমুখো মানুষ ভোগান্তিতে পড়তে পারেন। গাজীপুর জেলায় যানজটের এসব স্থান চিহ্নিত করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থাগুলো। সড়ক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চিহ্নিত স্থানগুলোয় যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর বাজার বাসস্ট্যান্ড, হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ড, বাঘেরবাজার বাসস্ট্যান্ড ও শ্রীপুর উপজেলার মাস্টারবাড়ী বাজার এলাকাকে যানজটের সম্ভাব্য স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সিডস্টোর বাজার ও ভালুকা বাসস্ট্যান্ডেও যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর গাজীপুরের মধ্যে পঞ্চম স্থানটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা মোড়। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন স্থানে এখন কাজ চলছে। তবে এখন এ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে শুরু করে ময়মনসিংহের ভালুকা পর্যন্ত খানাখন্দ বা ভাঙাচোরা নেই। তবে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যত্রতত্র বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামার কারণে যানবাহনের জটলার সৃষ্টি হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ মহাসড়কের সবচেয়ে ব্যস্ততম পয়েন্ট চান্দনা চৌরাস্তা। প্রতি বছর ঈদ এলেই সেখানে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। চান্দনা চৌরাস্তায় নির্মাণ করা হয়েছে গোলাকার উড়াল সড়ক। ওই উড়াল সড়ক দিয়ে ময়মনসিংহ ও জয়দেবপুরের দিকে যাতায়াত করা যাচ্ছে। ময়মনসিংহের দিকে যাওয়ার পথে উড়াল সড়কটি যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে নিচের যানবাহন চলাচলের জন্য জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে। স্বল্প দূরত্বে চলাচল করা গণপরিবহনগুলো সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। এতে উড়াল সড়ক থেকে নেমেই গতি কমাতে হচ্ছে। অন্যদিকে ময়মনসিংহের দিক থেকে যারা ঢাকা বা জয়দেবপুরের দিকে যাতায়াত করছেন, তাদের পড়তে হচ্ছে যানজটের কবলে। বৃহস্পতিবার সকালেও সেখানে যানজট দেখা যায়।

ভিআইপি পরিবহনের চালক মো. মাসুম বিল্লাহর বলেন, ‘চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় উড়াল সড়ক চালু করা হলেও নিচে এখনো বিআরটি কাজ চলমান। আমাদের যাত্রী ওঠাতে হয়। তাই নিচ দিয়েই চলাচল করতে গিয়ে যানজটে পড়তে হচ্ছে। নিচের কাজ ঈদের আগে শেষ করা গেলে ভালো হতো।’ ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপে গাজীপুরের মহাসড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে হোতাপাড়া এলাকায় পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দুটি বড় পার্শ্ব রাস্তা আছে। বড় বড় শিল্পকারখানার যানবাহনগুলো এসব পার্শ্ব রাস্তা দিয়ে মূল সড়কে প্রবেশ করার ফলে এখানে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে।

গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়ার বাসিন্দা হুমায়ুন কবীর বলেন, সড়কে অনেক কাজ হচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ অংশে নানা ধরনের জঞ্জাল থাকে। যেখানে সেখানে যানবাহন অবৈধ পার্ক করে রাখা হয়। এতে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ভবানীপুর এলাকায় একটি ইউটার্ন আছে। এ সড়কের সঙ্গে যুক্ত পশ্চিম দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক ও পূর্ব দিকে নলজানি। ইউটার্ন থাকায় স্বল্প দূরত্বের গাড়িগুলো ভবানীপুর চৌরাস্তায় মোড় নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। ফলে ভবানীপুর চৌরাস্তার যানজট প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। ময়মনসিংহ মহানগরের দিকে যেতে যানজটের আরেকটি পয়েন্ট বাঘের বাজার। পশ্চিমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের মূল সড়ক ও পূর্ব দিকে শ্রীপুর সংযোগ সড়ক। দুই পাশের সড়কগুলো ব্যস্ত থাকায় বাঘের বাজারে প্রায়ই যানজট দেখা যায়। ঈদে ঘরমুখী মানুষের জন্য এ স্থান হতে পারে ভোগান্তির কারণ।

বাঘের বাজারের উত্তরে গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় প্রতিদিন ভয়াবহ যানজট হয়। পূর্ব দিকে শ্রীপুর উপজেলা সদরে যাওয়ার আঞ্চলিক সড়ক। পশ্চিমে লিচুবাগান হয়ে দোখলা গ্রামের সংযোগ সড়ক। সড়কের দুই পাশেই বিপুলসংখ্যক কলকারখানা ও ঘনবসতি থাকায় গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ীতে ভয়াবহ যানজট দেখা যায়। ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার সিডস্টোর ও ভালুকা চৌরাস্তা এলাকায় প্রায়ই যানজট দেখা যায়। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য মতে, ভালুকা সদর এলাকায় দুই পাশে দুটি বড় সড়ক ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত। আঞ্চলিক সড়ক দুটি মহাসড়কের মতোই ব্যস্ত। ফলে যানবাহনের চাপ লেগেই থাকে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি হতে পারে এ স্থান। এছাড়া সিডস্টোর এলাকার চিত্রও প্রায় একই। শিল্প এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র এটি। তাই সারা দিন প্রচুর গাড়ির চাপ থাকে। এখানেও ভোগান্তির আশঙ্কা আছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটনের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ, থানা-পুলিশ ও মোবাইল টিম থাকবে। এছাড়া ১০টি রেকার রিজার্ভে রাখা হবে। কোনো কারণে যানবাহন বিকল হলে দ্রুত সেগুলো সিরিয়ে নেওয়া হবে।’ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা মোড় এলাকা প্রতি বছরই ঈদে ঘরমুখো মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। কেপি পরিবহনের যাত্রী সুমন শিকদার বলেন, ‘ঈদ এলেই চন্দ্রা এলাকায় যানজট থাকে। যানবাহনের চাপে দুর্ভোগে পড়তে হয়।’ গাজীপুরের নাওজোড় হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, চন্দ্রা মোড় এলাকায় যানজট নিরসনে প্রতি বছরের মতো এবারও বিপুলসংখ্যক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া থানা-পুলিশও থাকবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close