আমিনুল ইসলাম হুসাইনী
মাগফিরাত অর্জনে তিন আমল জরুরি
দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে সময়। ফুরিয়ে যাচ্ছে গুনাহ মাফের সুবর্ণ সুযোগ। এমন সুযোগ হায়াতে আর আসবে কি না জানি না। যদি না আসে? যদি তার আগেই নিভে যায় প্রাণপ্রদীপ। আর আমলনামায় থেকে যায় কুৎসিত কালো অক্ষরের পাহাড়। তখন কী উপায় হবে? কেমন কাটবে কবরের প্রথম রাত? সেই নিকষ রাতের অন্ধকার দূর করার এখনই সময়। গুনাহ মাফের এই মাহেন্দ্রক্ষণেই মাগফিরাত হাসিল করে নিতে হবে। নতুবা হাদিসের ভাষ্যমতে আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। নবীজি (সা.) তো বলেই দিয়েছেন, ‘রমজান পেয়েও যে তার গুনাহ মাফ করাতে পারল না, সে ধ্বংস হোক।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস ১৮৮)
কত গুনাহগার বান্দাকে আল্লাহ এই মাগফিরাতে ক্ষমা করেছেন। জান্নাতি এই কাফেলায় আমরাও শামিল হতে পারি। তার জন্যে প্রয়োজন অনুতপ্ত হৃদয়। অনুশোচনার অশ্রু। জেনে না-জেনে, বুঝে না-বুঝে, শয়তানের প্রবঞ্চনায় জীবনে কম তো পাপ করিনি। পাপের এই সমুদ্র থেকে উদ্ধার হতে তিনটি কাজ বেশি বেশি করতে হবে।
এক. আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। বিনয়ে বিগলিত হয়ে বলতে হবে- ওগো আল্লাহ! আমি অতিশয় দুর্বল। তুমি মহা শক্তিধর। তেমনি ক্ষমাশীল। আমার দুর্বলতাই আমার ভুলের কারণ। তোমার ইবাদতে উদাসীনতা, তোমার দেখানো পথ থেকে দূরে সরে যাওয়া, পদস্থলন ও ত্রুটি-বিচ্যুতি- এই সবই আমায় জাহান্নামের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। রাব্বুল আলামিন। তুমি দয়ার সাগর। তোমার দয়া, তোমার অনুগ্রহই কেবল আমাকে এই জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে পারে।’
দুই. আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার জন্যে আমাদেরও অন্যকে ক্ষমা করতে হবে। আমাদের ভাই-বন্ধু, প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক স্থাপন করব। তারা হয়তো আমাদের মনে দুঃখ দিয়েছে। তাই বলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করব না। তাদের দূরে ঠেলে দেব না। বরং তাদের ক্ষমা করে দেব। কাছে টেনে নেব। আল্লাহও আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ ক্ষমা করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ক্ষমা করবেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস ২১৯৯)
তিন : তওবা করা। বান্দা যখন কোনো গুনাহ করে, তখন আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে দেয়াল তৈরি হয়ে যায়। গুনাহের দেয়ালের কারণে আল্লাহর রহমত বান্দার কাছে পৌঁছতে পারে না। ফলে বান্দা গুনাহ করতেই থাকে আর দেয়ালও মজবুত হতে থাকে। এই মজবুত দেয়াল তখনই চুরমার হয়ে যায়, যখন বান্দা তওবা করে। তওবা এমনই এক পরশপাথর, যা গুনাহগার বান্দাকে বেগুনা মাসুম বানিয়ে আল্লাহর বন্ধুতে রূপান্তরিত করে।
আল্লাহ তো জানেনই, শয়তান মানুষের চোখে প্রবঞ্চনার চশমা পরিয়ে রাখবে। মানুষের চোখে পাপচার হয়ে ওঠবে রঙিন প্রজাপতি। সে জন্যেই তিনি তওবার দরজা খোলা রেখেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদাররা, তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা করো। আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে ঝরনা প্রবহমান।’ (সুর তাহরিম, আয়াত ৮)
কায়মানোবাক্যে ক্ষমা চায়লে আল্লাহ খুশি হন। বান্দার আকাশচুম্বি পাপও ক্ষমা করে দেন। তবে ক্ষমা পাওয়ার জন্যে রয়েছে কিছু শর্ত। অর্জন করতে হয় আল্লাহ গুণাবলি। কারো জন্যে কল্যাণের দোয়া করেও নাজাতের সনদ পেতে পারি। কত গুনাহগার বান্দা মুক্তির সনদ পেয়ে গেছে। কান পাতলেই শোনা যায় সেই জান্নাতি কাফেলার কোলাহল।
লেখক : প্রাবন্ধিক, খতিব কসবা জামে মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
"