প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২২ মার্চ, ২০২৪

বিক্রি হচ্ছে অপরিপক্ব তরমুজ

রমজানে অধিক মুনাফার আশায় চাষিরা খেত থেকে অপরিপক্ব তরমুজ বাজারে নিয়ে আসছেন। মৌসুমের সেরা সুস্বাদু ফল তরমুজ, খেত থেকে কৃষকরা সরাসরি পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন পিস হিসেবে। খেতের সবচেয়ে বড় তরমুজগুলো বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে। তবে সেই তরমুজ স্থানীয় বাজারে চড়া দামে পিস হিসেবে বিক্রি করলেও শহরের বাজারের সাধারণ ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে কেজি হিসেবে। এতে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে তরমুজের দাম। তাই অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি ঠেকাতে সরকারকে বাজার মনিটরিংয়ে নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান ভোক্তাদের। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জে পরিপক্ব তরমুজও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। যেটিকে ক্রেতারা বলছেন ‘অস্বাভাবিক দাম’। কারাসাজিতে অসাধু ব্যবসায়ীরা চড়া লাভ করলেও সে তুলনায় উৎপাদনকারী কৃষক পান না কিছুই। আর বর্তমান চড়া বাজারে তরমুজ কিনে খাওয়ার সাধ্য নিম্নবিত্তদের নেই।

জেলা কৃষি অফিস জানায়, সাধারণত ডিসেম্বর মাসে তরমুজের আবাদ শুরু হয়। ফল ওঠে এপ্রিলে। এরপর মে মাসজুড়ে মাঠে তরমুজ থাকে। সেই মাসই ভরা মৌসুম। পরিপক্ব তরমুজ উঠতে উঠতে চৈত্র মাস বা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ হয়। কিন্তু চাষিরা আগেভাগেই অপরিপক্ব তরমুজ তুলে বেশি লাভের আশায় বিক্রি শুরু করে দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের স্টেশন রোড ফল বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, একজন কৃষক পাঁচ থেকে ছয় কেজির একটা তরমুজের দাম পান সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা। কিশোরগঞ্জে আনতে পরিবহন খরচ তরমুজপ্রতি সর্বোচ্চ ৩০ টাকা। এরপর তিন দফা হাত বদলে সেই তরমুজ ক্রেতাদের কিনতে হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়।

আমতলী (বরগুনা) : বরগুনার আমতলীতে তরমুজ আসতে শুরু করেছে। বাজারে আসা তরমুজগুলো অনেকটাই অপরিপক্ব। কিন্তু সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় অপরিপক্ব এসব তরমুজ চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে।

কৃষক জামাল হোসেন বলেন, এই বছর ফলন ভালো হয়েছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে লাভবান হব। কিছু তরমুজ আমতলী নিয়ে এসেছি। এখানে প্রচুর চাহিদা। তবে সব কৃষক তরমুজ আনা শুরু করলে দাম কিছুটা কমবে বলে জানান তিনি। তরমুজ ক্রেতা সাইদুর রহমান বলেন, তরমুজসহ সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে। একেকটি তরমুজ ১০০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একটু বড় আকারের হলে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকাও দাম হাঁকাচ্ছে দোকানদার। তার মতে, বাজারে আসা তরমুজগুলো অপরিপক্ব এবং আকারে ছোট ও দাম বেশি।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : কলাপাড়ার তরমুজে বাম্পার ফলন হয়েছে। কুয়াকাটার খাজুরা গ্রামের কৃষক মো. রাসেল আকন এবার প্রায় ১৮ একর জমিতে তরমুজের চাষ করেছেন। কৃষক রাসেল আকন বলেন, ১৮ একর জায়গায় তাদের তরমুজ চাষে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এখন প্রায় ২৩ লাখ টাকা বিক্রি করতে পেরেছেন তারা।

নীলগঞ্জের কৃষক বেল্লাল হোসেন বলেন, আমরা কেজি হিসেবে তরমুজ বিক্রি করি না। ৩ থেকে ৫ কেজি ওজনের তরমুজ আমরা প্রতি ১০০ পিস ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করি। সর্বোচ্চ ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় একদম বড় সাইজের তরমুজগুলো বিক্রি করি আমরা। কুয়াকাটার আলীপুরের কৃষক মনির হোসেন বলেন, আমরা খেত থেকে পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি করি।

বরিশাল : বরিশালের বাজার রসালো ফল তরমুজে ভরে গেছে। তবে বাড়তি মুনাফা নিতে অপরিপক্ব তরমুজই বিক্রি হচ্ছে বেশি। তরমুজের দাম নিয়েও চলছে টালবাহানা। খেত থেকে পাইকাররা ঠিকা কিনলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। কৃষক আগেভাগে তরমুজের চাষাবাদ করে বাড়তি দামের আশা করছে। আর পাইকারা (মধ্যস্বত্বভোগী) তাদের কাছ থেকে স্বল্প মূল্যে তরমুজ খেত ক্রয় করে তার সুফল ভোগ করছেন।

পটুয়াখালীর বাউফল থেকে ট্রলারযোগে ১ হাজার ৭০০ পিস তরমুজ নিয়ে বরিশাল নগরীর ফলের আড়তে আসেন কৃষক খোকন হাওলাদার। ১৬০ টাকা প্রতিটি করে ১০০ পিস তরমুজের দর উঠেছে ১৬ হাজার টাকা। তার চাহিদা ছিল ২০ হাজার টাকা। খোকন বলেন, চাহিদা অনুযায়ী আড়তদার দাম না বলায় আমি চরম হতাশ। তরমুজ ক্রেতা বেসরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক রমজান আলী বলেন, আমার বাবা-দাদারাও কোনোদিন কেজিতে তরমুজ কিনে খায়নি। আমাকে কিনতে হচ্ছে।

বেনাপোল (যশোর) : যশোরের শার্শা-বেনাপোলে চড়া দামের পর এবার অপরিপক্ব তরমুজ কিনে ঠকছেন ক্রেতারা। গরমের মধ্যে রোজায় রসালো ফলটির চাহিদা বেশি থাকার সুযোগ নিচ্ছে কৃষকরা। কম দামে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকের কাছ থেকে সংগৃহীত এসব অপরিপক্ব তরমুজ নির্দিষ্ট পরিমাণ ‘কমিশনের’ বিনিময়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন আড়তদাররা। এতে ব্যবসায়ীরা লাভ গুনলেও বাড়ি নিয়ে কাটার পর লালের বদলে তরমুজের ভেতরের রং সাদা দেখে হতাশ হচ্ছেন ক্রেতারা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সৈয়দা তামান্না তাসনীম জানান, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যথাযথ পণ্য সরবরাহ না করাটা একটি অপরাধ। একজন ক্রেতা পাকা তরমুজ কিনবেন বলেই দাম পরিশোধ করেন। এক্ষেত্রে অপরিপক্ব বা কাঁচা তরমুজ সরবরাহ করাটা ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী প্রতারণা।

রাজবাড়ী : রাজবাড়ী জেলা শহরের বিভিন্ন বাজারে তরমুজের আমদানি থাকলেও তার বেশির ভাগ পরিপক্ব নয়। কাটার পর ভেতরে লাল রং দেখা গেলেও এখনো মিষ্টি স্বাদ আসেনি পুরোপুরি। ফলে এসব অপরিপক্ব তরমুজ চড়া দামে কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। এসব তরমুজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। আবার পিস হিসেবে নিতে গেলে দাম চাওয়া হচ্ছে আকাশছোঁয়া। তাতে ‘স্বাদ নিতে’ বাধ্য হয়ে ক্রেতারা কেজি হিসেবেই তরমুজ কিনছেন। তবে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি বন্ধের ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ চান। পিস হিসেবে তরমুজ কিনতে চান তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close