মাওলানা মাসউদুল কাদির

  ১৭ মার্চ, ২০২৪

সাওম তাকওয়া অর্জনের সোপান

আজ সাওমের ষষ্ঠ দিন। চলছে রহমতের সময়। পৃথিবীর মোমিনরা সাওম পরিপালন করছেন। এ সাওমই তাকওয়া অর্জনের মৌলিক সোপান। আল্লাহভীতির প্রগাঢ় স্বরূপচিত্রই হলো তাকওয়া। আভিধানিক অর্থে তাকওয়া বলা হয়, আল্লাহভীতি, পরহেজগারি, দীনিয়ত, বিরত থাকা, আত্মার পরিশুদ্ধি ও যেকোনো অনিষ্ট থেকে নিজেকে রক্ষা করা প্রভৃতি। তাকওয়া অর্জন মুমিনের অনেক বড় স্বপ্ন। শরীয়তের পরিভাষায় সব ধরনের অন্যায় এবং পাপাচার থেকে মহান আল্লাহর ভয়ে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে নিজেকে পরিচালনা করাকেই তাকওয়া বলে। আর তাকওয়া অর্জন করতে পারলেই মোমিনের সবটুকু সফলতা লাভ হয়। তাকওয়া অর্জন হলে আর কিছু লাগে না। তাকওয়া মূলত আল্লাহর ভালোবাসা পেতে বান্দাকে অগ্রসর করে দেয়।

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত করো। যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমাদের আগের যারা ছিল তাদেরে। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো। (সুরা বাকারা : আয়াত ২১)। অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসুল পাঠিয়েছি এই বার্তা দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুতকে বর্জন করো। (সুরা নাহল : আয়াত ৩৬)।

মোমিন তাকওয়া অর্জনকে জীবনের সবচেয়ে বড় পাথেয় মনে করে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা তাকওয়ার কথা খুব গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সাওমের বৈধতা বা অবশ্য কর্তব্যের এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল- যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)।

কুরআনের স্পষ্ট ভাষ্য হলো, লাআল্লাকুম তাত্তাকুন অর্থাৎ যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। বান্দার এ প্রশিক্ষণের সাফল্য এখানেই। সাওম পালনকারী সবকিছু থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখে অনন্তময়ের জান্নাত লাভের নেশায় বুঁধ হয়ে তাকওয়া অর্জনের পেছনেই সময় কাটাবে। আলোচ্য আয়াতে পূর্ববর্তীদের সাওমের বিষয়টি এনে সমকালীন মানুষকে সিয়ামের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন মহান আল্লাহ তায়ালা।

তাকওয়া অর্জনের উপায় সম্পর্কে হজরত কাব আল আহবার (রা.)-কে হজরত ওমর (রা.) প্রশ্ন করলে তিনি উল্টো জানতে চান, ‘আপনি কি কখনো কণ্টকাকীর্ণ রাস্তা অতিক্রম করেছেন?’ জবাবে হজরত ওমর (রা.) বললেন, হ্যাঁ, হজরত কাব বলেন, কীভাবে? এরপর হজরত ওমর রা. বলেন, ‘অতিসাবধানতার সঙ্গে দ্রুতবেগে এ রাস্তা অতিক্রম করেছিলাম।’ হজরত কাব বললেন, ‘এটাই তাকওয়া।’

মানুষের বাস্তবজীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যক্তি, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের প্রতিটি ক্ষেত্রেই একজন তাকওয়াবান মানুষের অতি প্রয়োজন। আজকের সমাজ-সংসার সবখানে তাকওয়ার উপস্থিতি থাকলে উন্নয়ন, সম্পর্ক ও সমৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতো। অশান্তি ও অকল্যাণের পথ বিনষ্ট হয়ে সতত মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী মানুষের সুন্দরম তৎপরতায় সজীব হয়ে উঠত এ ধরাধাম। তাই তাকওয়া অর্জনের সহজসুন্দর সময় হলো, মাহে রমাদান। এ মাসেই তাকওয়ার ছোঁয়ায় অনন্য সাফল্যচূড়ায় উন্নীত হতে পারে মোমিন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক : প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতু ইকরা দারুল উলুম, হবিগঞ্জ।

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close