এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও অন্য দলের মনোনীত এবং স্বতন্ত্র বেশকিছু হেভিওয়েট প্রার্থী তাদের সংসদী আসনে জয়ী হতে পারেননি। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন আওয়ামী লীগের বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, জাতীয় পার্টির (জেপি-মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি (জাসদ) হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এবং জাতীয় পার্টির শেরীফা কাদের। ফল অনুসারে, বেশিরভাগ হেভিওয়েট প্রার্থীই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন।

হবিগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের কাছে। স্থানীয়ভাবে ঘোষিত ফল অনুসারে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সুমন পেয়েছেন ১ লাখ ৯৮ হাজার ভোট। সে তুলনায়, আওয়ামী লীগের দুবারের সংসদ সদস্য মাহবুব আলী পেয়েছেন ৪৭ হাজার ভোট।

পিরোজপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজের কাছে পরাজিত হয়েছেন জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। একসময় মঞ্জুর পিএস (ব্যক্তিগত সহকারী) হিসেবে কাজ করেছেন মহিউদ্দিন মহারাজ। আগের নির্বাচনগুলোয় এ আসনে টানা ছয়বার নির্বাচিত হওয়া মঞ্জু এবারই প্রথম হারলেন।

১৪ দলীয় জোট শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির আওতায়, এ আসনে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়ে মঞ্জুকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালে জাতীয় পার্টি (জেপি-মঞ্জু) গঠিত হওয়ার পর থেকে দলটি মাত্র একবারই- ২০১৪ সালে একটির বেশি আসনে জিতেছে। যে নির্বাচন বিএনপিসহ প্রধান বিরোধী দলগুলো বর্জন করেছিল।

রাজশাহী-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশাকে হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশা। ফজলে হোসেন বাদশা বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন।

অন্যদিকে পেশায় অধ্যাপক শফিকুর রহমান বাদশা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি কাঁচি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেন। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ঘোষিত ফল অনুসারে, শফিকুর রহমান বাদশা কাঁচি প্রতীকে পেয়েছেন ৫৪ হাজার ৯০৬ ভোট। ফজলে হোসেন বাদশা পেয়েছেন ৩১ হাজার ৪৬৬ ভোট। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থন পাননি ফজলে হোসেন বাদশা। শুরু থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমানের পক্ষে সক্রিয় প্রচার-প্রচারণা চালায়।

ঢাকা-১৮ আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খসরু চৌধুরীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। খসরু ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক। তিনি কেতলি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির সমঝোতার আওতায়, দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে আওয়ামী লীগ। অনানুষ্ঠানিক ফলে দেখা গেছে, শেরীফা কাদের মাত্র ৬ হাজার ৫৫৫ ভোট পেয়েছেন। আর খসরু পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৮৩১ ভোট।

টাঙ্গাইল-৮ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অনুপম শাহজাহান জয়ের কাছে পরাজিত হয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। অনানুষ্ঠানিক ফল অনুযায়ী, অনুপম শাহজাহান পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৪০১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গামছা প্রতীকে কাদের সিদ্দিকী পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৫০১ ভোট।

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন। এ নির্বাচনে অংশ নিতে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন গত বছরের ২৮ নভেম্বর পদত্যাগ করেন। এরপরে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন কুষ্টিয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। অনানুষ্ঠানিক ফল অনুসারে, কামারুল আরেফিন ট্রাক প্রতীকে ৪১ হাজার ২৮২ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাসানুল হক ইনু নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৭৩১ ভোট।

"