বদরুল আলম মজুমদার

  ২৩ মে, ২০২৪

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ

পাত্তা দিচ্ছে না আ.লীগ-বিএনপি

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা এ নিষেধাজ্ঞায় তাদের জন্য রাজনৈতিক লাভণ্ডক্ষতি দেখছেন না। মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরের এক সপ্তাহের মাথায় দেশের সাবেক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি এখন বেশ আলোচনার বস্তুতে পরিণত হয়েছে রাজনীতিঘেঁষা মানুষ ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে। এ নিয়ে তর্কযুদ্ধ চলছে ধোঁয়া উঠতে থাকা গরম চায়ের আড্ডায়। তবে বিষয়টিতে সরকার কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। এদিকে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তির ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছেন সরকারবিরোধী নেতারা।

গত সোমবার গভীর রাতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে এ নোটিস জারির পরপরই পুরো দেশে নিমেষেই চাউর হতে থাকে খবরটি। জেনারেল আজিজের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, এ নিষেধাজ্ঞায় খুশি হওয়ার মতো কিছু নেই। সরকারবিরোধী শিবিরের অপর রাজনৈতিক নেতারাও বিএনপির মহাসচিবের সুরেই কথা বলেছেন। আজিজের ওপর এ নিষেধাজ্ঞায় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে লাভবান হওয়ার কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। সরকার এ নিয়ে ড্যাম কেয়ার।

সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে এতটা গুরুত্ব দিতে চাইছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা মনে করছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকার এখন স্থিতিশীল। এ অবস্থায় সাবেক এক সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সরকারের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। তারা মনে করছেন, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সরকার বা আওয়ামী লীগের বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। তবে আওয়ামী লীগের একটি সূত্রের মতে, গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেই আজিজ আহমেদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হওয়ার বিষয় গণমাধ্যমে খবর হয়েছে। এবার পরিবারের সদস্যদের যুক্ত করে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া ভোটের আগে যে মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়, আজিজ আহমেদকে সেই নীতিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি।

তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের কারো কারো মত হচ্ছে, এ নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে সরকারের সঙ্গে মার্কিননীতির টানাপড়েন শেষ হয়নি। ভিসানীতির আওতায় না হলেও মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর তিন দিনের বাংলাদেশ সফরের এক সপ্তাহের মধ্যেই আজিজ আহমেদের ব্যাপারে এ ঘোষণায় এখনই সতর্ক হওয়ার দরকার। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেটা বলেছে, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ মিশনকে জেনারেল আজিজের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। জেনারেল আজিজের বিষয়ে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটা ভিসানীতির প্রয়োগ নয়।

জাতীয় নির্বাচনের আগে যখন ভিসানীতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, তখন মার্কিন প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছিল। সেই প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কথা তুলে ধরেছিল। এরপরই ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। এবার যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সফরে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বার্তা দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা এলো। ফলে যুক্তরাষ্ট্র বাইরে যা-ই বলুক না কেন, তারা তাদের পরিকল্পনা ও অবস্থান থেকে সরে আসেনি বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে দলটির নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রকে আওয়ামী লীগের নেতাদের ‘পাত্তা’ না দেওয়ার বিষয়টির জবাবও হতে পারে আজিজ আহমেদের ওপর এ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা।

আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় খুশি হওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে, নিজেদের শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে হবে এবং নিজের শক্তি নিয়েই এদের (সরকার) পরাজিত করতে হবে। এদিকে বিএনপি নেতারা মনে করেন, এটা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ব্যাপার। এটা দেশকে বিদেশের কাছে ছোট করেছে। প্রসঙ্গত, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির স্থানীয় সময় সোমবার দুপুরে (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোরে) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বাইডেন প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্তটি প্রকাশ করে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে জেনারেল আজিজ ও তার পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসনকে শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনরায় নিশ্চিত করা হলো। এদেশে সরকারি সেবা আরো স্বচ্ছ ও নাগরিকদের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর পথ প্রশস্ত হলো। সেইসঙ্গে ব্যবসা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং মুদ্রা পাচার ও অন্যান্য অর্থনৈতিক অপরাধের অনুসন্ধান ও বিচার নিশ্চিতে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার বিষয়টি পরিষ্কার হলো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close