কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

  ২৩ মে, ২০২৪

বাড়িতে নেতাকর্মীর ভিড়, শোক

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের (আনার) মৃত্যুর খবর শুনে গতকাল বুধবার সকাল থেকেই তার নিশ্চিন্তপুর এলাকার বাড়ির সামনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ওই এলাকা লোকারণ্য হয়ে যায়। পাশে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে নেতাকর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আহাজারিতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। দুপুর ১২টার দিকে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান ও কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু আজিফ।

পরিবার ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, ১২ মে আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম চিকিৎসার জন্য দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। ১৪ মে পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। তবে ১৬ মে সংসদ সদস্যের মুঠোফোন থেকে আনোয়ারুল আজিমের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফের কাছে ফোন আসে। তিনি ফোন ধরতে পারেননি। পরে আবার তিনি ফোন করলে মুঠোফোনটি বন্ধ পান। এর পর থেকে সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস গত রবিবার বিকেলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে গিয়ে তার বাবার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানান। পশ্চিমবঙ্গে আনোয়ারুল আজিম খুন হয়েছেন বলে গতকাল তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশের পুলিশ।

নিশ্চিন্তপুরের চারতলা বাড়িতে ছোট মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন আনোয়ারুল আজিম। বাড়ির নিচতলা গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বসবাসের কক্ষ। চতুর্থ তলায় রান্নাঘর।

স্বজনরা জানান, এই বাসা থেকে ১২ মে সকালে বের হন আনোয়ারুল আজিম। যাওয়ার সময় বলে যান তিনি ভারতে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন।

এমপি আজিমের মৃত্যুর ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি সফিকুল ইসলাম অপু দলের পক্ষ থেকে শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক ও সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে কালীগঞ্জের মানুষ একজন প্রাণের নেতাকে হারাল। তার ধারণা, মূলত ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তারা ভারত থেকে মরদেহ ফেরত পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। এরপর জানাজা শেষে পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল আলম সাংবাদিকদের জানান, আনোয়ারুল আজিম এলাকায় জনপ্রিয় ছিলেন। এ কারণে একটি মহল চক্রান্ত করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে হত্যার কারণ ও হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে আনোয়ারুল আজিম আনার। তিনি ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি।

ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে তিনবার (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) নির্বাচিত সংসদ সদস্য। একজন ক্রীড়া সংগঠক এবং এক সময়ের জনপ্রিয় ফুটবল খেলোয়াড়। ছাত্রজীবনে আন্তঃস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ফুটবলে তার নেতৃত্বাধীন দল কালীগঞ্জ সরকারি ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

ছাত্রজীবন থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নিয়ে রাজনীতিতে আসেন। স্থানীয় পৌর নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচন দিয়ে ভোটের রাজনীতি শুরু করেন। এর আগে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে দায়িত্ব পালন করেন।

চলতি মাসের ১২ তারিখে চিকিৎসার উদ্দেশ্য ভারতের কালকাতায় যান আজিম। তবে ১৩ মে থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল তার। সবশেষ তার ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাবার খোঁজ পেতে ১৯ মে ঢাকার ডিবি কার্যালয়ে যান। গতকাল সকালে ভারতের কলকাতার নিউটাউন এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে আজিমের মরদেহ উদ্ধার করার খবর আসে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close