শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ প্রতিনিধি
বঙ্গবন্ধুর স্পর্শের চা শিল্প এগিয়ে নিতে হবে
বাণিজ্যমন্ত্রী
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু আজকের এই দিনে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্পর্শিত চা শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। চা শিল্পের সঙ্গে দেড় লাখ শ্রমিকের ভাগ্য জড়িয়ে আছে। অনেক বছর ধরে চা শ্রমিকদের বেতন নিয়ে কথা চলছিল, সেটাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বসে মালিকপক্ষকে একতরফা চাপিয়ে বেতন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। চা বোর্ডের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চা শিল্প এবং এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে হৃদয়ে ধারণ করেন।’
রবিবার (৪ জুন) মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে তৃতীয় জাতীয় চা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই, চা শিল্পটা বাড়ুক। আমি নিজে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে খুঁজি, আমার চায়ের কাপটা কোথায়। এমনি করে কিন্তু চা আমাদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চা আমাদের জীবনের পার্ট হয়ে গেছে। প্রধান পানীয় হিসেবে চা ছাড়া আমরা অন্য কিছু চিন্তাও করতে পারি না।’
টিপু মুনশি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে এক লাখ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হচ্ছে। প্রতিবছর দেশে চায়ের চাহিদা ৫-৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৭ কোটি মানুষ এক কাপ করে চা পান করলেও ১৭ কোটি কাপ চা প্রয়োজন। আমরা একজন প্রতিদিন ৩-৪ কাপ চা পান করে থাকি। কিন্তু চা উৎপাদন সে হারে বৃদ্ধি পায় না। এজন্য চা উৎপাদন বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আবদুস শহীদ এমপি বলেন, ‘চা শিল্পের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুধু চা শিল্পই নয় প্রতিটি সেক্টরে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান রয়েছে। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, আর বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। চা শিল্পের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে চা শ্রমিকরা। আর এদেশে চা শ্রমিকদের নাগরিকত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই যখনই দেশে নির্বাচন আসে তখনই চা শ্রমিকরা বঙ্গবন্ধুর নৌকায় ভোট দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধুর কৃতিত্ব চা শ্রমিকরা কখনো ভুলেননি, ভুলবেনও না। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন চা শিল্পের ব্যাপক প্রসার। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন চা শিল্পের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।’
দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় চা পুরস্কারপ্রাপ্ত আট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। একর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদনের জন্য ভাড়াউড়া চা বাগান, সর্বোচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন চা উৎপাদনকারী বাগান মধুপুর চা বাগান, শ্রেষ্ঠ চা রপ্তানিকারক আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লিমিটেড, শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্রায়তন চা উৎপাদনকারী মো. আনোয়ার সাদাত সম্রাট (পঞ্চগড়), শ্রমিক কল্যাণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা বাগান জেরিন চা বাগান, বৈচিত্র্যময় চা পণ্য বাজারজাতকরণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট লিমিটেড, দৃষ্টিনন্দন ও মানসম্পন্ন চা মোড়কের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা প্রতিষ্ঠান গ্রিন ফিল্ড টি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং শ্রেষ্ঠ চা পাতা চয়নকারী উপলক্ষী ত্রিপুরা ও নেপচুন চা বাগান।
প্রথমবারের মতো শ্রেষ্ঠ চা পাতা চয়নকারীর পুরস্কার পেয়েছেন উপলক্ষী ত্রিপুরা। আটটি ক্যাটাগরিতে দেওয়া পুরস্কারের মধ্যে একমাত্র চা শ্রমিক হিসেবে শ্রেষ্ঠ চা পাতা চয়নকারীর সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নেপচুন চা বাগানের চা শ্রমিক উপলক্ষী ঘণ্টায় চা পাতা উত্তোলন করতে পারেন প্রায় ৫০ কেজি। এক বছরে তিনি চাপাতা উত্তোলন করেছেন ২৮ হাজার ৩৪৪ কেজি, যা তাকে এনে দিয়েছে জাতীয় চা পুরস্কার।
চা শ্রমিক নেতা রামবজন কৈরী বলেন, এটা নিঃসন্দেহে নারী প্লাকারদের জন্য একটি উৎসাহ। চা বাগান টিকিয়ে রাখতে যাদের অবদান সর্বাগ্রে তাদের আরো বেশি করে সম্মাননা প্রদান করা যেতে পারে। প্রত্যেকটি চা বাগানে প্রত্যেক চায়ের সিজন শেষে বাগানের প্লাকারদের মধ্য থেকে সেরাদের এভাবে যদি উৎসাহিত করা হয় তাহলে তাদের কর্ম উদ্দীপনা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম। এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশীয় চা সংসদের সভাপতি কামরান টি রহমান, টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শাহ মঈনুদ্দিন হাসান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল।
"