নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

স্টেশন ঘিরে নতুন বাড়ি বেড়েছে ভাড়াও

কয়েকদিন আগেও আশপাশ এলাকায় অনেক ফ্ল্যাট ফাঁকা ছিল। বাড়িমালিকরা ভাড়াটিয়া পাচ্ছিলেন না। তবে নতুন বছরের প্রথম মাস থেকে প্রচুর ভাড়াটে উঠছে। প্রতিদিনই ফ্ল্যাট খুঁজতে মানুষ আসছে। তাই ভাড়াও আগের চেয়ে বাড়িয়েছেন মালিকরা- এ অবস্থা ঢাকার উত্তরায় মেট্রোরেল স্টেশন সংলগ্ন দিয়াবাড়ী, সোনারগাঁও জনপথ, উত্তরা সেক্টর ১৫, মেট্রোরেল চত্বর, উত্তরা মডেল টাউন, সেক্টর ১৫, অ্যাভিনিউ ৯ নম্বরের। তাছাড়া এখন শত শত নতুন বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে। প্রায় সব অলিগলিতেই দেখা মিলছে সুউচ্চ ভবনের। রাতদিন নির্মাণকাজ চলছে। যেগুলোর কাজ শেষ হয়েছে, সেগুলোতে প্রতিদিনই ভাড়া নেওয়ার জন্য আসছেন অনেকে।

দেখা গেছে, দিয়াবাড়ী এলাকায় মেট্রোরেল ডিপোর কাছাকাছি নির্মাণ হচ্ছে ৮ তলার একটি বাণিজ্যিক ভবন। যেখানে শুধু অফিস, ব্যাংক ও বিমার জন্য ভাড়া দেওয়া হবে। এই বিল্ডিংয়ের নির্মাণকাজ তদারকিতে দায়িত্বে থাকা জাকির হোসেন বলেন, মেট্রোরেলের স্টেশন ঘিরে এই এলাকায় প্রচুর মানুষের বসবাস হবে। সে কারণে তিন মালিক মিলে এই বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করছেন। এই বিল্ডিংয়ের মতো আশপাশে প্রায় শতাধিক বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে। আমাদের ভবনের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তবু প্রতিদিন ফ্লোর ও অফিস ভাড়া নেওয়ার জন্য লোকজন আসছে। তারা খোঁজখবর নিচ্ছে, ভাড়া জানছে ও বুকিং দিতে চাচ্ছে।

দিয়াবাড়ী বটতলা এলাকায় দীর্ঘদিন চায়ের দোকান পরিচালনা করা মনছুর আহমেদ বলেন, মেট্রোরেল হওয়ার পর এই এলাকায় সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। প্রতিদিন অনেক মানুষ বাড়ি খুঁজছে। কয়েক মাস আগেও এখানে মানুষ থাকতে চাইত না। কারণ তখন যোগাযোগব্যবস্থা ভালো ছিল না। এখন মেট্রোরেলের কারণে সবকিছু বদলে গেছে।

মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে একটি ৬তলা বাড়ির নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। তিনজন মিলে বাড়িটি নির্মাণ করছেন। তাদের মধ্যে একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আসলে মেট্রোরেল হওয়ার পর এদিকে আর কোনো জমি বিক্রি হচ্ছে না। সবাই ভাবছে এর দাম আরো অনেক বাড়বে। মূলত আগেই যারা জায়গা কিনেছে তারা এখন বাড়ি নির্মাণের কাজ করছে। মেট্রোরেলের কারণে যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হওয়ায় সবাই এদিকে এসে থাকতে চাচ্ছে। তাই এ অবস্থায় আমরা ঋণ নিয়ে দ্রুত বাড়ির কাজ করছি।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেট্রোরেলকে কেন্দ্র করে দিয়াবাড়ী, উত্তরা ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর সেক্টর, সোনারগাঁও জনপথ, মেট্রোরেল চত্বর, উত্তরা মডেল টাউন, সেক্টর ১৫, অ্যাভিনিউ ৯ নম্বর, পঞ্চবটি, উত্তরা পশ্চিম অ্যাভিনিউ ও বিরুলিয়া এলাকায় নতুন আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং প্রতিষ্ঠান।

দিয়াবাড়ী বটতলা এলাকার বাড়িমালিক সাজ্জাদুল ইসলাম মুকুল বলেন, এতদিন খুব একটা ভাড়াটে পাওয়া যেত না। তবে মেট্রোরেল চালুর পর রূপ ও চাহিদা বদলে গেছে। আগে আমার বাড়ির তিন-চারটা ফ্ল্যাট ফাঁকা ছিল। এখন ফেব্রুয়ারি থেকে সেগুলো ভাড়া হয়ে গেছে। আগে বাড়ি ভাড়া ছিল ১০ হাজার টাকা। এখন ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা।

সার্বিক বিষয় নিয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মাদ খান বলেন, মিরপুর থেকে দিয়াবাড়ীর দিকে মধ্যবিত্ত, নিম্ন, নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকদের সংখ্যা বেশি। এখন এখানে যখন বড় ধরনের ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে, তখন এখানে সেসব মানুষকে সরে যেতে হচ্ছে। কারণ সেখানে বড় বড় কোম্পানি, ক্ষমতাধররা ঢুকে যাচ্ছে। এতে জমির দাম বাড়ছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। তাই মেট্রোরেল ঘিরে এসব এলাকার বাড়িভাড়া বাড়ছে। তবে সমস্যা চিহ্নিত করে মেট্রোরেল স্টেশনকেন্দ্রিক আবাসন, বাণিজ্যিক ভবন নিয়ে সঠিক ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

২০১২ সালে অনুমোদিত এমআরটি-৬ প্রকল্পের (উত্তরা-মতিঝিল) নির্মাণকাজ ২০১৬ সালে শুরু হয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে। এরই মধ্যে প্রকল্প ব্যয় ১১ হাজার ৪৮৭ কোটি বাড়িয়ে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবে মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। গত ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রুট উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটি বাদে ২৯ দিনে টিকিট বিক্রি করে আয় হয়েছে ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close