মো. আবু সাইদ খোকন, আমতলী (বরগুনা)

  ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’

বাহান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির আবেদন জাতীয় সীমানা ছাড়িয়ে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা লাভ করেছে। একুশে ফেব্রুয়ারি এখন শুধু বাঙালির নয়, দেশের এবং বিদেশের সব জাতির ভাষার লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা।

মায়ের ভাষার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রতিদিন লড়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের উপকূলের জেলা পটুয়াখালী ও বরগুনার রাখাইন জনগোষ্ঠী। নিজস্ব মাতৃভাষার সংরক্ষণ, প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা ও বিকাশের দাবি জানিয়েছেন রাখাইনরা।

জানা গেছে, ১৭৮৪ সালে রাখাইনরা মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে এদেশের সমুদ্র উপকূলে বসতি স্থাপন শুরু করে। পরে ধীরে ধীরে বাংলাদেশে সামাজিক কৃষ্টি-কালচার ও ভাষা-সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যায় এবং সম্প্রীতির মেলবন্ধন গড়ে তোলে। কিন্তু তাদের একটি নিজস্ব ভাষা আছে, যা তারা পারিবারিক পরিমণ্ডলে ব্যবহার করে। তাদের শিশুরা রাখাইন ভাষায় কথা বলতে শেখে। সেই ভাষাটি এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়ে বিলুপ্তির পথে।

কিন্তু রাখাইন শিশুদের জন্য নেই তাদের মাতৃভাষার পাঠ্যপুস্তক কিংবা রাখাইন ভাষাভাষীর শিক্ষক। ফলে ওইসব রাখাইন শিশু বঞ্চিত হচ্ছে মাতৃভাষার শিক্ষার অধিকার থেকে। ৯০ ভাগ শিশু তাদের মাতৃভাষা লিখতে কিংবা পড়তে পারে না।

বেসরকারি সংস্থা কারিতাসের সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পে (রাখাইন) কর্মরত চান্দা সরকার (২৮) বলেন, সরকারি বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে রাখাইন ভাষা শিক্ষার সুযোগ নেই। তবে রাখাইন ভাষার নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে। কিছু কিছু পাড়া-মহল্লায় পুরোহিত ও বয়স্ক মানুষ শিশুদের ওই বর্ণমালা দিয়ে রাখাইন ভাষা শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

রাখাইন ভাষা সংরক্ষন, বিকাশ ও সংকট বিষয়ে তালতলীর রাখাইন সমাজ উন্নয়ন সংস্থার সাধারন সম্পাদক মি. মংচিন থান বলেন, হাজার বছরের প্রাচীন ও সমৃদ্ধ রাখাইন ভাষা ও সংস্কৃতি, যা বাংলা সংস্কৃতির খুব ঘনিষ্ঠ। রাখাইন নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণ, চর্চা ও বিকাশে সরকারিভাবে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি।

তিনি জানান, তালতলীর ১২টি পাড়ায় ২ হাজার ৫০০ রাখাইন পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্য বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নামিষেপাড়া ও কবিরাজপাড়ায় সীমিত পরিসরে রাখাইন ভাষা শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় রাখাইন ভাষায় শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করা না গেলে রাখাইন ভাষা অস্তিত্ব সংকটে পড়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে আশংকা তার।

নিজ ভাষার অস্তিত্ব রক্ষায় রাখাইন ভাষা ও কালচারাল ইনস্টিটিউট স্থাপন ও তাদের মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক স্তরে শিক্ষাদানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণের দাবি ওই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সবার।

এ প্রসঙ্গে বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, রাখাইন ভাষা ও সংস্কৃতির ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যে বিশেষ প্রকল্প আছে সেখানে যোগাযোগ করা হবে, যাতে রাখাইন ভাষা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটানো যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close