নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

এলপিজির সংকট বাড়ল দাম

হঠাৎ সরবরাহে টান পড়েছে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস এলপিজির। ফলে দাম বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে। জানুয়ারিতে কমার পর ফেব্রুয়ারিতে দাম বেড়েছে এলপিজির। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ডলার ও জ্বালানি দামের সংকটের মধ্যে এলপিজির দাম ওঠানামা করছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতি ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ২৬৬ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। গত জানুয়ারি মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ছিল ১ হাজার ২৩২ টাকা। একইভাবে বেড়েছে অটোগ্যাসের দামও। নির্ধারিত নতুন দাম সন্ধ্যা ৬টা থেকেই কার্যকর হয়েছে।

১২ কেজি সিলিন্ডার ছাড়াও সাড়ে ৫ কেজি থেকে শুরু করে ৪৫ কেজি পর্যন্ত সব সিলিন্ডারের দামই বাড়ানো হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। তবে সরকারি পর্যায়ে সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দামের পরিবর্তন হয়নি। সেটি আগের দাম ৫৯১ টাকাই রয়েছে। এদিকে, বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অনেক খুচরা দোকানে তা পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের অন্যান্য এলাকাতেও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো সিলিন্ডার পাঠাচ্ছে না বলে খবর হয়েছে। বেশির ভাগ কোম্পানিই সরবরাহ কমিয়েছে বলে জানিয়েছেন এজেন্ট ও খুচরা বিক্রেতারা। আবার অনেক খুচরা দোকানে এলপিজির মজুদ নেই। যাদের আছে তারাও ১২ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডারের দাম চান ১৬০০ টাকা।

অথচ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ঘোষিত নতুন দাম অনুযায়ী, ১২ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ১২৪ টাকা ৮৫ পয়সা। এলপি গ্যাস অপারেটরগুলোর সংগঠন এলপিজি অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লোয়াব) মনে করছে, শিল্প-কারখানাসহ বহুমুখী কাজে এলপি গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে সরবরাহে টান পড়েছে। খুচরায় সরবরাহে ঘাটতির ক্ষেত্রে এটিকেই কারণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। ঘাটতির সুযোগ নিয়ে বাড়ছে দাম।

ঢাকার পীরেরবাগে একটি ছোট্ট খাবারের দোকানের মালিক গোলাপ মিয়া বলেন, গ্যাসের দাম রাতারাতি আড়াই শ টাকারও বেশি বাড়ছে। গ্যাসের দাম তো আগে কখনো এভাবে বাড়তে দেখিনি। মনে হয় গ্যাসের সংকট। এই সুযোগে দাম বাড়তে ?শুরু করেছে। এভাবে বাড়লে তো হোটেল ব্যবসা করে টিকে থাকা যাবে না। তার কথার সত্যতা পাওয়া যায় বিভিন্ন খুচরা দোকানে খবর নিয়ে।

আগারগাঁওয়ে গ্রিন হার্ডওয়্যার নামে একটি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি যে ডিলারের কাছ থেকে গ্যাস কিনে এনে বিক্রি করেন, দুদিন ধরে তারা গ্যাস দিচ্ছেন না। ফলে দোকানের সামনে কিছু খালি সিলিন্ডার সাজানো আছে।

গ্যাস আছে কি না জানতে চাইলে গ্রিন হার্ডওয়্যার থেকে বলা হয়, আজকে গ্যাস নেই। রাতে এলে বিক্রি করা যাবে। তবে দাম সম্ভবত ১২ কেজি ১৬০০ টাকা ধরতে হবে।

আরেকজন খুচরা বিক্রিতা সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি এখন ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডার ১৬০০ টাকা করে বিক্রি করছেন। রাতে গ্যাসের ট্রাক আসবে কি না নিশ্চিত নন। যদি তা-ই হয় তবে আগামীকাল আর গ্যাস বিক্রির উপায় থাকবে না।

লোয়াবের সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, বাজারে চাহিদা বেশি আর সরবরাহ কম হলে এ ধরনের বিষয় হতে পারে। গত কয়েক মাসে যেভাবে আমদানি হচ্ছিল জানুয়ারি মাসে, সেভাবেই হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে কিছু গ্যাস শিল্প-কারখানায় এলপি গ্যাসের ব্যবহার বেড়ে গেছে। ইন্ডাস্ট্রি খাতে গ্যাস যাওয়ায় সাধারণ ভোক্তারা একটু কম পাচ্ছেন।

লোয়াবের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে মাসে ১ লাখ ২০ হাজার টন এলপিজি ব্যবহার হচ্ছে।

সরকার নির্ধারিত মূল্য বাজার ও বাস্তবতা পরিপন্থি দাবি করে আজম জে. চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন অদক্ষ হওয়ার কারণে এলপি গ্যাসের দাম সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। তারা শুধু সৌদি সিপি বিবেচনায় নিয়ে দাম ঠিক করে। অথচ এখানে অনেক প্রিমিয়ামের বিষয় রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close