নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩

পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া

রোজার আগেই অসাধু চক্রের থাবা বাজারে

রমজান মাস এলেই পণ্যের চাহিদা বাড়ে। কিন্তু এবার রোজার দুই মাস বাকি থাকলেও এই মাসটিকে ঘিরে প্রয়োজনীয় বেশ কটি পণ্যের দাম চড়তে শুরু করেছে। ছোলা, ভোজ্য তেল, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, চিনি, খেজুরসহ বেশ কটি পণ্যের বাজার চড়া হয়ে উঠেছে। দাম কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে শুল্কছাড়সহ নানা নীতিসহায়তা দিলেও এর প্রভাব পড়ছে না। মূলত মিল ও মোকামপর্যায় থেকেই দাম বাড়ায় পাইকারিতে এর প্রভাব পড়েছে। ফলে খুচরা বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যেন আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে।

শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর প্রধান বাজারগুলো ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। তালতলা বাজারের খুচরা চিনি বিক্রেতা সামিউল বলেন, আগেও নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি হয়নি। এখন নতুন করে দাম বেড়েছে। এ ঘোষণার পর থেকে সরবরাহ কম। বোঝা যাচ্ছে না পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। চিনি নিয়ে অস্থিরতা দীর্ঘদিন ধরে। সরকার কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে না বলে খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শুধু চিনি নয়, মসলাসহ আদা-রসুন ও শুকনো মরিচের দামেও অস্থিরতা চলছে। সপ্তাহান্তেই বাড়ছে দাম। এখন প্রতি কেজি আদা ১৫০-২০০ টাকায় ঠেকেছে। রসুনের দামও বেড়ে হয়েছে ১৫০-১৮০ টাকা। বাজারে তুলনামূলক কিছুটা কম দামে দেশি জাতের আদা-রসুন থাকলেও সেগুলোর চাহিদা কম। আগে যে শুকনো মরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হতো ১০০-১৫০ টাকায় তা এখন ৫০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। আমদানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন সংকটে পণ্যটির রেকর্ড পরিমাণ দাম বেড়েছে। বর্তমানে শুকনো মরিচ কেজিপ্রতি সর্বনিম্ন ৩৫০-৫০০ টাকায় ওঠানামা করছে। আসন্ন রমজানের আগে সরবরাহ না বাড়লে দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে আমদানি করা ভারতীয় মরিচ বিক্রি হচ্ছে (গুজরাটি) ৩২০-৩৭০ টাকায়। মিয়ানমার থেকে আমদানি করা মরিচের কেজি ৩৫০-৩৭০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘ সময় পর মরিচের দাম এতটা বেড়েছে।

বাজারে এ তিন মসলা পণ্যের দামের হেরফেরের বিষয়টি লক্ষ করা যাচ্ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্যেও। সংস্থাটি বলছে, গত বছর একই সময়ে দেশে আদার দাম মানভেদে ৫০-১১০ শতাংশ, রসুনের দাম ৪৫-১২৭ শতাংশ এবং শুকনো মরিচের দাম ৭৫-১৫২ শতাংশ কম ছিল।

এদিকে বাজারে দুই সপ্তাহ আগে সরু চালের দাম বেড়েছে। সঙ্গে কেজিতে প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। স্বস্তি নেই এখন শীতের সবজিতেও। প্রায় প্রতিটি পণ্য বিক্রি হচ্ছে আগের থেকে ৫-১০ টাকা বেশিতে। আজও এসব পণ্যের দাম বাড়তি দেখা গেছে।

বাজারভেদে সরু মিনিকেট চাল ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের বিআর ২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা। ভালো মানের নাজিরশাইল চালের কেজি ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা। আর মোটা চাল ৫৪-৫৫ টাকা কেজি।

অন্যদিকে শীত মৌসুম শেষ না হলেও বাজারে দাম চড়া মৌসুমি সবজির। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা সরবরাহ ঘাটতির কথা বললেও বাস্তবে তেমনটি দেখা যায়নি। বরং বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহের চিত্রই দেখা গেছে। এরই মধ্যে কেজিতে দাম বেড়ে গেছে ১০ টাকা পর্যন্ত।

ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে প্রতি কেজি ১৫৫-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ডিমের দামে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। কোনো কোনো এলাকায় প্রতি ডজন (১২ পিস) ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। তবে নিত্যপণ্যের বাজারগুলোতে এ দাম ১২৫ টাকা দেখা গেছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, রমজানে প্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খুলতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ নির্দেশনা ও ডলার সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে। এর পরও ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুদ করে দাম বাড়িয়ে দেয়। ভোক্তা অধিকার আইন প্রয়োগ করে এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। না হলে মজুদ কারবার বন্ধ হবে না।

দেশে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম কমেছে। এ মুহূর্তে কোনো পণ্যের দাম কমা ছাড়া বাড়ার কোনো কারণ নেই। তার পরও যদি পণ্যের দাম বেড়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে অথবা কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে দেবে। তিনি এও বলেন, রোজায় পণ্য আমদানিতে যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয়, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যে আশ্বাস দিচ্ছে তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন গোলাম রহমান।

অবশ্য কঠোর বার্তা দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। রোজার মাসে কেউ যেন ভোক্তাদের জিম্মি করতে না পারে, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের সতর্ক থাকতে বলেছেন মন্ত্রী। বুধবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের একটি সেশনে মতবিনিময়ে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সম্মেলনে ২ মিনিট কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। এর মধ্যে ৩০ সেকেন্ড বলেছি রোজায় বাজার পরিস্থিতি নিয়ে। সেখানে বলেছি, রমজান মাস সামনে রেখে কেউ যাতে সুযোগ নিতে না পারে। আপনারা সরকারের হাত। আপনারা খেয়াল রাখবেন কেউ যাতে সুযোগ না নেয়। শক্ত ব্যবস্থা নেবেন।

কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রোজায় পেঁয়াজের চাহিদা বেশ বেড়ে যায়। এখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম চলছে। এবার রোজায় এই পণ্যের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এদিক দিয়ে স্বস্তি পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘একজন কৃষি অর্থনীতিবিদ হিসেবে আমি আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেল, চিনি, ডালসহ সব পণ্যের দামই এখন অনেক কমেছে। অনেক পণ্যের দাম করোনার আগের অবস্থানে চলে এসেছে। সরকার কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করলে এবার রোজায় পণ্যমূল্য বাড়বে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close