ফুলগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি

  ২২ জানুয়ারি, ২০২৩

আওয়ামী লীগ, জাসদ ও জাতীয় পার্টি : লড়াই হবে ত্রিমুখী

বিগত ৫০ বছরে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হয়নি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার জন্য এখন থেকে চলছে ত্রিমুখী লড়াই।

ফেনী জেলায় তিনটি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত ফেনী-১ আসন। ১৯৭৩ সালে এই আসন থেকে তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত সাংবাদিক এ বি এম মুসা এমপি নির্বাচিত হন। মাঝে কিছুদিন সামরিক শাসন থাকলেও তারপর থেকে জাতীয় পার্টির আমলে, ফেনী-১ আসন থেকে লে. কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম বীর বিক্রম এমপি নির্বাচিত হন, তারপর থেকে ৯১, ৯৬, ২০০১ ও ২০০৯ সালে নির্বাচনে টানা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আসন থেকে নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে না আসার কারণে আওয়ামী লীগের জোটের শরিক দল হিসেবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য হন। গেল ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শিরীন আখতার নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয় বার এই আসন থেকে নির্বাচিত হন। হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করেন।

এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ভোটের এক বছর হাতে থাকা সত্ত্বেও মাঠে-ময়দানে কাজ করে যাচ্ছে মনোনয়নের আশায়। সভা-সমাবেশ, দলীয় কর্মকাণ্ড, ওয়াজ মাহফিলসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যায়। তবে এ আসনে বিগত ৫০ বছর কোনো আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারেনি, এজন্য এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জোর দাবি জানান, ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।

এ আসন থেকে এখন পর্যন্ত যারা মনোনয়নের জন্য দৌড়াচ্ছেন, তারা হলেন বর্তমান জাসদ সমাজতান্ত্রিক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার ও ফেনী ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ আবদুল্লাহ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান, ফেনী জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি শাহরিয়ার ইকবাল রিয়াদ, বিএনপির ফেনী ১ আসনের সমন্বয়ক রফিকুল আলম মজনুর নাম শোনা যাচ্ছে।

ফেনী-১ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রোটকল অফিসার ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের নাম শোনা যাচ্ছে।

মনোনয়নপ্রত্যাশী তৃণমূল থেকে উঠে আসা ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী, করোনাকালীন সময়ে ফেনী ১ আসনের জনগণকে তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছেন। করোনার ধাক্কায় এই মহামারি সময়ও অগ্রভাগে থেকে করোনা মোকাবিলা করেন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ১৯৮৯ সাল থেকে হরিপুর আলী আকবর উচ্চবিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে ছাত্রলীগের পদযাত্রা শুরু করেন, জীবনের প্রথম যাত্রা থেকেই জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯১ সালে ফেনী সরকারি কলেজ একাদশ শ্রেণির ছাত্রলীগের সভাপতি। ১৯৯৩ সালে সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯৪ সালের ফেনী জেলা ছাত্রলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক। ১৯৯৮ সালে ফেনী জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ২০০৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০১৩ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে বর্তমান পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এখন পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, তৃণমূলের ত্যাগী পরীক্ষিত কর্মীদের তিনি মনোনয়ন দিবেন। সে হিসেবে আমি এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২৫টি মামলা দিয়ে ৪৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আপিল বিভাগের মাধ্যমে সব ষড়যন্ত্রমূলক মামলা থেকে অব্যাহতি পাই। ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত রাজপথে থেকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের সুখে-দুঃখে কখনো রাজপথ ত্যাগ করেনি। ফেনী ১ আসনের সব নেতাকর্মীর দাবির প্রেক্ষিতে, এবার তিনি বঙ্গবন্ধুরকন্যা শেখ হাসিনার কাছে মনোনয়ন চাইবেন, তিনি যদি মনোনয়ন দেন তাহলে ৫০ বছরের রেকর্ড ভেঙে এই ফেনী ১ আসনটি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে সক্ষম হবে বলে জানান তিনি।

ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সহ-সভাপতি শেখ আবদুল্লাহ ফেনী ১ আসনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মাঠে-ঘাটে কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দুর্যোগে তিনি জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। করোনা মহামারির সময়ও তিনি এলাকার জনগণের জন্য মাঠে থেকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন, দলের বিভিন্ন সবার সমাবেশে দলীয় কর্মকাণ্ডে তিনি সবসময় অর্থ জোগান দিয়ে আসছেন। গেল ২০১৮ সালে তিনি জোটের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তিনি একচেটিয়া জনসমর্থন অর্জন করেন, কিন্তু ভোটের ঠিক তিন থেকে চার দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তখন ফেনী-১ আসনের সর্বস্তরের জনগণের একমাত্র চাহিদা ছিল শেখ আবদুল্লাহ ফেনী-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হবেন। তবে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করেন। এ বিষয়ে তিনি জানান, গতবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেখ আবদুল্লাহকে দেখবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন। সে হিসেবে তিনি এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন, তিনি শতভাগ আশাবাদী এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ফেনী ১ আসনের জন্য মনোনীত করে নৌকার মনোনয়ন দিবেন।

এদিকে বর্তমান নতুন করে ফেনী জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি শাহরিয়ার ইকবাল রিয়াদ জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে নির্বাচন করার জন্য বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড ও দলীয় কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে করে যাচ্ছে বলে জানা যায়।

ফেনী-১ আসনটি চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী বিএনপির আসন হিসেবে পরিচিত। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দাদার বাড়ি ফেনীতে। তিনি বরাবরই এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিএনপি যদি নির্বচনে আসে বর্তমানে তার পক্ষে ফেনী-১ আসনের সমন্বয়ক হিসেবে রফিকুল আলম মজনুর নাম শোনা যাচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close