মিজান রহমান

  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস আজ

জ্বালানি ব্যবহার ও যানজট নিয়ন্ত্রণ করাই উদ্দেশ্য

ঢাকায় প্রায় ৪ লাখ ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করে। প্রতিদিন যোগ হচ্ছে প্রায় ৪০টি নতুন ব্যক্তিগত গাড়ি। এছাড়া মোটরসাইকেল এখন ৩৮ লাখের বেশি। সড়কগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি সড়কের ৭৬ দশমিক ৩ শতাংশ অংশ দখল করেছে, যা মাত্র ২৫ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করে। বাকি ৭৫ শতাংশ যাত্রীর জন্য মানসম্মত গণপরিবহন নেই। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা।

বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস (কার ফ্রি ডে) পালিত হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘জ্বালানি ব্যবহার ও যানজট নিয়ন্ত্রণ করি, ব্যক্তিগত গাড়ি সীমিত রাখি’। প্রতি বছর ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ ও পাবলিক পরিবহন বাড়ানোর লক্ষ্যে এই দিবসটি পালিত হয়।

দিবসটি উপলক্ষে সীমিত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সভাকক্ষে ‘বসবাসযোগ্য ঢাকা : ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

দিবসের দিন সকাল ৭টায় শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে ধানমন্ডি ২৭নং সড়কের আই হসপিটাল থেকে আবাহনী মাঠ পর্যন্ত র‌্যালির আয়োজন করা হয়েছে। দুপুর আড়াইটায় রয়েছে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী। ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচির বিষয়গুলো প্রচার করা হবে। আরো রয়েছে রচনা প্রতিযোগিতা, সাইকেল র‌্যালি ও পদযাত্রা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের ৬২টি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে দিবসটি পালনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে ২০১৭ সাল থেকে বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়। ওই বছর থেকে প্রতি মাসে একদিন সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সড়কের এক পাশে যান চলাচল বন্ধ রেখে শিশুদের খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত রাখা শুরু হয়। এরপর রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও উত্তরার আরো দুটি সড়কে একই কর্মসূচি শুরু হয়, যা জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ায় ২০২০ সাল থেকে ওই কর্মসূচি বন্ধে হয়ে যায়।

এ বিষয়ে কর্মসূচির সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীন বলেন, করোনা পরিস্থতির কারণে বিগত দুই বছরে দিবসটি উপলক্ষে সীমিত আকারে কর্মসূচি নেওয়া হয়। করোনা পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি হলে আগের মতো সারা বছরই কর্মসূচি থাকবে। কারণ, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি জনসচেতনতা প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, এরই মধ্যে মেট্রোরেল, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), বাস রুট ফ্রাঞ্চাইজ, প্রয়োজনীয় সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ এবং মানসম্মত ফুটপাত তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ চলমান রয়েছে, যা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে।

২০০৬ সাল থেকে দিবসটি পালনের সঙ্গে যুক্ত ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান লিটু বলেন, এ বছর দিবসটি পালনে জ্বালানি সাশ্রয় ও যানজট নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ জরুরি। কারণ বর্তমানে দেশের জ্বালানি খাত সংকটে ভুগছে। এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি সাশ্রয়ে সপ্তাহে একদিন পেট্রোলপাম্প বন্ধ রাখা, সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ির তেলের বরাদ্দ হ্রাস, একই গাড়িতে একাধিক কর্মকর্তার অফিসে যাতায়াতে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, যানজটের কারণে প্রতিদিন ৮০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। আর এই যানজটের প্রধান কারণ ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি। এই ব্যক্তিগত গাড়ি সড়কের ৭৬ দশমিক ৩ শতাংশ অংশ দখল করে আছে। বাকি ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ পাবলিক পরিবহন ৭৫ শতাংশ যাত্রী বহন করে। সেখানে মানসম্মত পাবলিক পরিবহনের অভাব রয়েছে।

রাজধানীতে পর্যাপ্ত আরামদায়ক গণপরিবহন ও অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় অনেকে বাধ্য হয়েই ব্যক্তিগত গাড়ি কিনছে বলে মনে করেন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধির কারণে যানজট ও দূষণ বাড়ছে। ঢাকায় প্রায় ৮০ শতাংশ যাতায়াত ৫ কিলোমিটারের মধ্যে, যার অর্ধেক যাতায়াত আবার ২ কিলোমিটারের মধ্যে হয়ে থাকে। এই স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য সাইকেলে ও হেঁটে নিরাপদে চলাচলের পরিবেশ তৈরি করা এবং অধিক দূরত্বের জন্য গণপরিবহন নিশ্চিত করা গেলে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আসবে।

ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে নগর পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পাবলিক পরিবহন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, নগর পরিবহনের উপর আস্থা ফিরে এলে মানুষের ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমবে। এ জন্য ‘রিভাইজড স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (২০১৫-২০৩৫)’ যথাযথভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই প্ল্যানে সাইকেলে চলাচলের নিরাপদ পরিবেশ তৈরি ও গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা রয়েছে।

উল্লেখ্য, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি ব্যাপকতা লাভ করে ৭০ দশকে জ্বালানি সংকটের সময়। ১৯৭৪ সালে সুইজারল্যান্ডে গাড়িমুক্ত দিবস পালন করা হয়। নব্বই-এর দশকে এই উদ্যোগের আরো প্রসার ঘটে। ২০০১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্বের ৩৩টি দেশের এক হাজার শহরে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন করা হয়। এখন প্রতি বছর প্রায় চার হাজার শহরে দিবসটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ২০০৬ সাল থেকে বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন শুরু হয়। ২০১৬ সাল থেকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close