নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ আগস্ট, ২০২২

‘সামাল দিতে পারব, সেই বিশ্বাস আছে’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী চলমান মন্দার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এ নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশে বিরোধীদের আন্দোলন হতে পারে কিন্তু বাড়াবাড়ি দেশের ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের কষ্ট বাড়াবে যেটি তাদেরও বোঝা উচিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অপজিশনসহ নানা জনে নানা কথা বলবে, এর সুযোগ নেওয়ারও চেষ্টা করবে কিন্তু তারা যদি এসব বেশি করতে যায় তাহলে এর প্রভাবেই মানুষের কষ্ট আরো বাড়বে। এটাও তাদের বোঝা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘তারা আন্দোলন (বিএনপি) করে কতটুকু সফল হবে জানি না কিন্তু তারা যেভাবে করতে চাচ্ছে তাতে দেশের জন্য আরো ক্ষতি হবে। কিন্তু সেটা আমরা সামাল দিতে পারব, সেই বিশ্বাস আমার আছে।’

রবিবার (১৪ আগস্ট) তার সরকারি বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আটটি বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনা সভায় দেওয়া ভাষণে আরো বলেন, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সামর্থ্য তার সরকারের রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিরোধী দল একটা সুযোগ পাচ্ছে, তারা আন্দোলন করবে, করুক। আমি আজকেও নির্দেশ দিয়েছি খবরদার যারা আন্দোলন করছে তাদের কাউকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয় বা ডিস্টার্ব করা না হয়। তারা প্রধানমন্ত্রীর অফিসও ঘেরাও দেবে, আমি বলেছি হ্যাঁ আসতে দেব। কেননা, আমরা যে আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করছি দেশের কাজ করতে দেশের মানুষ তো সেটা জানে।’

সরকার প্রধান বলেন, মানুষের কষ্ট যে হচ্ছে সেটা তার সরকার উপলব্ধি করতে পারছে বলেই প্রতিনিয়ত সেই কষ্ট লাঘবের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশেও সমন্বয় করা হবে। দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন শুরু হলে বিদ্যুতের এ সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর যখনই বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমবে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাডজাস্ট করব, সেটাও আমার নির্দেশ রয়ে গেছে। সমসাময়িক সংকট কাটাতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন কমিয়ে আনায় সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, হয়তো আর কিছুদিন আমাদের কষ্ট করতে হবে। আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন শুরু হলে বিদ্যুতের এ সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী আবারও উৎপাদন বৃৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, করোনা যেতে না যেতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে স্যাংশন এবং পাল্টা স্যাংশন জনজীবনে সর্বনাশ ডেকে আনছে, যার ভুক্তভোগী হচ্ছে সারা বিশ্বের সাধারণ জনগণ।

তিনি বলেন, আমেরিকা স্যাংশন দিল রাশিয়াকে শায়েস্তা করার জন্য, কী দেখা যাচ্ছে যে শায়েস্তা হচ্ছে সাধারণ মানুষ। শুধু আমাদের দেশ বলে নয়, ইউরোপের দেশগুলো এমনকি আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া-প্রত্যেকটি মহাদেশের মানুষেরই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সব জিনিসের ওপরই এর একটা প্রভাব পড়েছে।

তিনি বলেন, ‘আর আমাদের কিছু লোক তো থাকেই অপ্রয়োজনেও জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয় ওই ছুতা ধরে, সেটাই হচ্ছে কিছু কিছু। না হলে এত দাম তো বাড়ার কথা নয়।’

তার সরকার জনগণের কাছে দেওয়া সব প্রতিশ্রুতির সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদি এই করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশন না হতো তাহলে আমাদের দেশ কখনোই সমস্যায় পড়ত না। আমরা এগিয়ে যেতে পারতাম। কেননা, যে ক্ষেত্রগুলো আমাদের আমদানিনির্ভর সেখানেই সমস্যাটা দেখা দিচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘স্যাংশন দিয়ে লাভটা কী হলো। বাস্তবিক যদি লাভ কারো হয় তাহলে সেটা আমেরিকা এবং রাশিয়ারই হয়েছে। বিশ্ববাজারে ডলার এবং রুবলের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকে যার যেখানে যতটুকু জমি আছে চাষ করে সেখানে খাবার উৎপাদন করেন। যেখানে জায়গা আছে আপনারা সেখানে হাঁস, মুরগি, কবুতর, গরু, ছাগল, ভেড়া যে যা পারেন লালন-পালন করেন। আর যত পুকুর ও জলাভূমি আছে সেখানে মাছের চাষ করেন। আমাদের খাবারটা যেন আমরা দেশের মধ্যে উৎপাদন করতে পারি। আমাদের যেন বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকতে না হয়।’

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে ৭৫-এর ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক বিয়োগান্ত অধ্যায়কে স্মরণ করে তার মনে জেগে থাকা প্রশ্নটি আবার ছুড়ে দেন- কেন তার বাবা, মা-ভাই, ভাইয়ের স্ত্রীসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো যেখানে জাতির পিতা একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে রাষ্ট্র হিসেবে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে টেনে তুলে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছর জাতির পিতা দেশ পরিচালনা করতে পেরেছিলেন, যেখানে সম্পদ বলতে ছিল শুধু দেশের মাটি আর মানুষ। সেটাই ছিল তার পুঁজি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বাংলাদেশকে বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে তুলে আনতে সক্ষম হন এবং তার স্বপ্ন ছিল এই ঘুনে ধরা সমাজকে ভেঙে একটি নতুন সমাজ গড়ার। ঔপনিবেশিক প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে একাটি গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং তৃণমূলের ক্ষমতায়ন। যে কারণে তিনি সব মহকুমাকে জেলায় রূপান্তরিত করে জেলাভিত্তিক মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

দেশের উন্নয়নে জাতির পিতার দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে তার মেয়ে বলেন, তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের যে ডাক দিয়েছিলেন তার লক্ষ্যই ছিল জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা, উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং আর্থসামাজিক উন্নতি করা।

প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, মনে হয় এ দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কেউ যদি কোনো পদক্ষেপ রাখতে যায় তাকে বোধ হয় বিপর্যয়ে পড়তে হয়। এটিই বাস্তবতা এবং আমাদের জন্য সব থেকে দুর্ভাগ্যের, কেননা যখনই এ দেশের মানুষ একটু ভালো থাকে বা ভালো থাকা শুরু করে তখনই যেন চক্রান্ত ষড়যন্ত্রটা শুরু হয়ে যায়।

তিনি বলেন, একটা শ্রেণি যেন রয়ে গেছে এ দেশে, যারা এ দেশের মানুষের কোনো কল্যাণ হোক সেটা চায় না। অর্থাৎ স্বাধীনতা অর্থবহ হোক, স্বাধীনতার সুফল বাংলার প্রত্যেক ঘরে পৌঁছাক, এখানেই একটা বাধা দেওয়ার প্রচেষ্টা আমরা সব সময় দেখি।

জাতির পিতাকে হত্যার পর সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা তার খুনিদের রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছিল, পুরস্কৃত করেছিল এবং দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছিল বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের মানুষকে ভূমিহীন-গৃহহীন অবস্থা থেকে মুক্ত করতে অসহায় মানুষকে ঘর করে দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

তিনি সংগঠনকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, যেকোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাক যাই আসুক আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সব সময় সজাগ থাকেন এবং মানুষের পাশে গিয়ে সবার আগে দাঁড়ান। কাজেই সেই সংগঠনকে সুসংহত করাটাই আমাদের লক্ষ্য।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close