আরমান ভূঁইয়া

  ২০ মে, ২০২২

ক্রেডিট কার্ড হ্যাক কোটি টাকা আত্মসাৎ

ব্যাংকের কাস্টমার সার্ভিস নাম্বার ক্লোন করে ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকের ক্রেডিট কার্ড হ্যাক করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার ক্রাইম বিভাগ। এ ছাড়াও চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট সেজে কয়েক হাজার গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। গত বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলো- হ্যাকার মো. হাসান খান ও এসআইবিএল ব্যাংকের সহকারী সম্পর্ক কর্মকর্তা (এআরপি) কাবুল হাসান রশিদ।

ডিবি সাইবার ক্রাইম বিভাগ বলছে, চক্রটি দীর্ঘদিন ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে কার্ড হ্যাক করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা এই প্রতারণায় জন্য অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তার মাধ্যমে গ্রাহকের তথ্য সংগ্রহ করত। এরপর ব্যাংকের হটলাইন নাম্বার ক্লোন করে গ্রাহকদের ফোন করে তাদের তথ্য জানিয়ে গ্রাহকের বিশ্বাস অর্জন করত। এরপর সু-কৌশলে ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের ওটিপি নিয়ে কার্ড হ্যাক করত। এরপর ওই কার্ড থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কার্ডের সব টাকা নিয়ে যেত চক্রটি।

সংঘবদ্ধ এ প্রতারক চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট পরিচয় দিয়ে হাজার হাজার গ্রাহকের ওটিপি নাম্বার নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। তারা গ্রাহকদের ফোন করে পরিচয় দিত বিকাশ এজেন্ট থেকে বলছি। পরে নানা কৌশলে গ্রাহকের বিকাশ, নগদ, রকেটের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে টাকা হাতিয়ে নিত। এভাবে গত চার বছরে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

ক্রেডিট কার্ড হ্যাকিংয়ের কৌশল সম্পর্কে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমশিনার (এডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার কাবুল হাসান রশিদ সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে কার্ডডিভিশনের অপারেশন ইউনিট এ কর্মরত ছিলেন। তিনি গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ডের (নাম, মোবাইল নাম্বার, ঠিকানা, ক্রেডিট কার্ড নাম্বার, ভ্যালিড তারিখ) তথ্য নিয়ে ক্রেডিট কার্ড হ্যাকার হাসানের কাছে সরবরাহ করত। প্রতিটি শিট ২৩-২৪ জন গ্রাহকদের তথ্য সাত-আট হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করত।

পরবর্তী সময়ে ক্রেডিট কার্ড হ্যাকার হাসান চক্রের আরেক সদস্য (পলাতক আসামি) রাব্বীর কাছে ওই শিট হস্তান্তর করত। রাব্বী ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয়ে ব্যাংকের হটলাইন নাম্বার +১৬৪৯১ ক্লোন করে গ্রাহকদের ফোন করত। এরপর তার কাছে থাকা গ্রাহকের ক্রেডিট কার্ডে তথ্যগুলো প্রতারক গ্রাহককে জানাতো বিশ্বস্ততা অর্জন করার জন্য।

পরে রাব্বী গ্রেপ্তারকৃত হাসানকে ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিত। হাসান গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে একটি ওটিপি নাম্বার পাঠিয়ে সু-কৌশলে ওটিপি হাতিয়ে নিয়ে গ্রাহকের ক্রেডিট কার্ড থেকে মোবাইল ব্যাকিং বিকাশ, নগদ ও রকেট মাধ্যমে কার্ডে জমাকৃত অর্থ হাতিয়ে নিত। গ্রেপ্তারকৃত হাসান ওই টাকা ব্রাক্ষণবাড়িয়া পলাতক আসামি রাব্বীর ভুয়া বিকাশ, নগদ অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিত। রাব্বী ৩০ শতাংশ টাকা কমিশন রেখে বাকি ৭০ শতাংশ টাকা হাসানকে দিয়ে দিত।

এসব প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকার বিষয়ে উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বলেন, গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট এবং কার্ড সংক্রান্ত গোপনীয় তথ্য যাতে ফাঁস না হয় সে বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; কোনো অবস্থায় গ্রাহকের ওটিপি নাম্বার কারো কাছে শেয়ার করা যাবে না; অনলাইন পেমেন্টের ক্ষেত্রে সেফ পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করতে হবে; ব্যাংক কখনো গ্রাহকের ওটিপি জানতে চায় না। ফলে এ সম্পর্কে গ্রাহকদের সচেতন হতে হবে; আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রাহকদের সচেতনতা মূলক প্রচারণা বাড়াতে হবে; অপরিচিত কোনো ওয়েবসাইটের লিংক থেকে সতর্ক থাকতে হবে এবং এ সংক্রান্ত লিংকে কোনো প্রকার তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে; কেউ ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতের শিকার হলে দ্রুত ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগে যোগাযোগ করারও অনুরোধ জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close