এস এইচ এম তরিকুল, রাজশাহী

  ১৫ মে, ২০২২

রাজশাহীতে ৯০২ কোটি টাকার ব্যবসার সম্ভাবনা

চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। আর রাজশাহীতে এবার ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ টন (হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১১.৬০ টন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসাবে চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৯০১ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৮০ টাকার আমের বিকিকিনি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

রাজশাহী কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় রাজশাহীতে এবার আমের উৎপাদন কম। প্রকৃতিগতভাবেই চলতি মৌসুম আমের জন্য অফ সিজিন হওয়ায় রাজশাহীর আমবাগানগুলোর গাছে মুকুল কম আসায় আমের উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। তবে গত কয়েক বছর আমের উৎপাদন বেশি হলেও করোনা মহামারি ও আমের ভরা মৌসুমে রমজান মাস পড়ে যাওয়ার কারণে চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাননি।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের তুলনায় গত বছর কম জমিতে (১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর) আমের চাষ হয়েছিল। আর গত মৌসুমে উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ১৭ হাজার ১২৮.২৪ টন আম। গড়ে ৪০ টাকা কেজি দরে আম কেনা-বেচা নির্ধারণ করেছিল কৃষি অধিদপ্তর। সে হিসাব অনুযায়ী, গত মৌসুমে ৮০৬ কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকার আমের ব্যবসা হয়েছে। আর চলতি মৌসুমে তুলনামূলক বেশি জমিতে আমের চাষ হলেও আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬.২৪ টন।

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার প্রতি কেজি আমের গড় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ টাকা। রাজশাহী জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় বাঘা উপজেলায়। চলতি মৌসুমে বাঘা উপজেলায় ৮ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এই উপজেলা থেকেই ৯৬ হাজার ৮৪১ টন (হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১১.৩০ টন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এছাড়া জেলার চারঘাটে ৩ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে ৪৪ হাজার ২৮৪ টন (গড় ফলন ১১.৪০ টন), পুঠিয়ায় ১ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ৫১৩ টন (গড় ফলন ১২.১০ টন), গোদাগাড়ীতে ১২২০ হেক্টর জমিতে ১৪ হাজার ৮২৩ টন (গড় ফলন ১২.১৫ টন), পবায় ৯২০ হেক্টর জমিতে ১১ হাজার ১৭৮ টন (গড় ফলন ১২.১৫ টন), দুর্গাপুরে ৮৫০ হেক্টর জমিতে ১০ হাজার ৩৭০ টন (হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১২.২০ টন), বাগমারায় ৫৬৫ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ৮৬৪.৭৫ টন (গড় ফলন ১২.১৫ টন), মোহনপুরে ৪০৭ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৯৫৩.১৯ টন (গড় ফলন ১২.১৭ টন), তানোরে ৩৬০ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৩২৬ টন (গড় ফলন ১২.০২ টন), মহানগরীর মতিহারে ১৩৫ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৬৪১ টন (গড় ফলন ১২.১৬ টন) এবং বোয়ালিয়া থানা এলাকায় ৭৩ হেক্টর জমিতে ৮৮৩.৩০ টন (গড় ফলন ১২.১০ টন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাগান মালিক আরেজ আলী বলেন, এবার ১০ বিঘা জমির আমবাগানের প্রায় দুই শতাধিক গাছে আম ধরেছে। গত কয়েক বছর ফলন ভালো হলেও করোনা ও রোজার কারণে আমের দাম পাইনি। তবে এবার ফলন কম হলেও আমের ভালো দাম পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।

রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের বাজার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরের আম ব্যবসায়ী মাকসুদুল আলম বলেন, গত বছর করোনার কারণে ব্যবসায় কিছুটা লোকসান হয়েছে। তবে এবার হয়তো আগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব।

রাজশাহীর ফল গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলীম উদ্দীন বলেন, সামগ্রিক অর্থে রাজশাহীতে এবার আম বাগানের পরিধি বেড়েছে। ফলে এ মৌসুমে ফলন কম হলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা করছি। এছাড়া এবার ঝড়-বৃষ্টির প্রভাব সেভাবে না হওয়ায় আমের গুটিও কম ঝরেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন আহমদ বলেন, প্রাকৃতিকভাবেই চলতি মৌসুম আমের জন্য অফ সিজিন। স্বভাবতই কোনো বছর আমের বাম্পার ফলন হলে পরের বছর কিছুটা কম হয়, যেটি এবার হয়েছে। তবে চাষিরা এবার দাম ভালো পেলে আগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।

রাজশাহী কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ডিডি) মো. মোজদার হোসেন বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার ৫৭২ হেক্টর বেশি জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। তবে ফলন কম হওয়ায় গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৪৫২ টন আম কম উৎপাদন হতে পারে। তবে গত বছরের চেয়ে এবার আমের দাম চড়া যাবে। সেই দিক বিবেচনায়, আমচাষিরা বেশ লাভবান হবে বলে আশা করি।

আম বাজারজাতকরণ বিষয়ে রাজশাহীর ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবারে আমের বাজারজাতকরণে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close